বিভ্রান্তি কাটাতে মোদীর ঘোষণা, উঠল অনশন

অবস্থান-বিক্ষোভ চালু রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপে অনশন থেকে সরে এলেন প্রাক্তন ফৌজিরা। আগাম অবসর নেওয়া সেনারাও এক পদ এক পেনশনের সুবিধে পাবেন— প্রধানমন্ত্রী আজ এই ঘোষণা করার পরে আজ শর্তসাপেক্ষে অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণায় খুশি প্রাক্তন সেনারা অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন তাঁকে। রবিবার ফরিদাবাদে বদরপুর-ফরিদাবাদ দিল্লি মেট্রো সম্প্রসারণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছবি: পিটিআই।

অবস্থান-বিক্ষোভ চালু রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপে অনশন থেকে সরে এলেন প্রাক্তন ফৌজিরা। আগাম অবসর নেওয়া সেনারাও এক পদ এক পেনশনের সুবিধে পাবেন— প্রধানমন্ত্রী আজ এই ঘোষণা করার পরে আজ শর্তসাপেক্ষে অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা। তবে প্রাক্তন সেনাকর্মীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সব দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

Advertisement

গত কাল প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর এক পদ এক পেনশনের ঘোষণা করার পরেই প্রাক্তন ফৌজিদের তরফে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, অনশন থেকে তাঁরা সরে আসবেন। কিন্তু পর্রীকরের ঘোষণার পরে আগাম অবসরের প্রশ্নটি ঘিরে কিছু ধোঁয়াশা তৈরি হয় কাল। প্রাক্তন সেনাকর্মীদের কাছে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গড়ে ৪০ শতাংশের মতো সেনাকর্মী আগাম অবসর নিয়ে নেন। তাঁরাও যে এক পদ এক পেনশনের সুবিধা পাবেন— সেটা গত কাল রাতের বৈঠকেই স্পষ্ট করে দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এ নিয়ে তখনই সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রাক্তন ফৌজিরা। প্রয়োজন ছিল সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণার। প্রধানমন্ত্রী আজ ঠিক সেটাই করলেন।

এর জন্য হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে দিল্লির মধ্যে মেট্রো পরিষেবার শুরুর অনুষ্ঠান মঞ্চকে বেছে নেন মোদী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘যে জওয়ানেরা ১৫-১৭ বছর পরে আগাম অবসর নিচ্ছেন তাঁরা সকলেই এক পদ এক পেনশনের সুবিধে পাবেন। আপনারা দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, আমরা কোনও ভাবেই আপনাদের উপেক্ষা করব না।’’ মোদীর এই ঘোষণাকে স্বাগতই জানান প্রাক্তন সেনারা। এর পরেই যন্তর মন্তরে অনশনরত প্রাক্তন কর্নেল পুষ্পেন্দ্র, হাবিলদার মনোজ সিংহ-সহ প্রায় ১২ জনকে মিষ্টিমুখ করান প্রাক্তন মেজর জেনারেল সতবীর সিংহ। পরে অবশ্য সতবীর জানিয়েছেন, সরকার মূল দাবির কয়েকটি মেনে নিয়েছে। এটাকে তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন। তাই অনশন তুলে নেওয়া হচ্ছে। তবে বাকি দাবিগুলির প্রশ্নে তাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে জনসভাও হবে যন্তর মন্তরে।

Advertisement

সতবীররা জানাচ্ছেন, সরকার মূল তিনটি দাবি মেনেছে।

এক পদ এক পেনশন।

আগাম অবসর নেওয়া ফৌজিদেরও সেই সুবিধা দেওয়া।

সরকার বলেছিল, সেনাদের খুঁটিনাটি সমস্যা দেখার জন্য এক সদস্যের কমিটি হবে। রিপোর্ট জমা পড়বে ছ’মাসে। প্রাক্তন সেনাদের দাবি, ওই কমিটির সদস্য বাড়িয়ে তাঁদের প্রতিনিধি রাখতে হবে ও দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে অবস্থান নরম করেছে কেন্দ্র।

কোন কোন দাবি মেটেনি? এ ক্ষেত্রেও সংখ্যাটা তিন।

নতুন পেনশন কী হারে হবে তা নিয়ে জট কাটেনি। সরকার বলছে, সমান মেয়াদের চাকরি ও একই পদ থেকে অবসর নিলে সেই পদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের গড় করে নতুন পেনশন স্থির করা হোক। সরকারের হিসেবে, তাতে বছরে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ বাড়বে পেনশন খাতে। কিন্তু প্রাক্তন সেনাদের দাবি, সর্বোচ্চ বেতনের নিরিখেই পেনশন দিতে হবে সকলকে। এতে আরও কয়েক গুণ খরচের বোঝা চাপবে সরকারি কোষাগারের উপরে। ফলে এ নিয়ে জটিলতা এখনও রয়েই গিয়েছে।

পাঁচ বছর অন্তর নতুন করে পেনশনের হার ঠিক করতে চাইছে সরকার। কিন্তু প্রাক্তন সেনাদের দাবি এটা ফি বছর হোক, নিদেন পক্ষে দু’বছর অন্তর। এ অবস্থায় তিন বছরে রফার একটি চেষ্টাও চলছে বলে সরকারি সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।

কোন সময়কে ভিত্তি করে কার্যকর হবে এক পদ এক পেনশন— তা নিয়ে সতবীর সিংহদের দাবি এখনও মানা হয়নি।

তবে সার্বিক ভাবে কেন্দ্র মনে করছে, যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তাতে মোটের উপর প্রাক্তন ফৌজিরা সন্তুষ্ট। গত কালের ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীদের মধ্যেও মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে বলেই মনে করছে মোদী সরকার। সতবীরদের মতো একটি অংশ সব ক’টি দাবি আদায়ের জন্য কট্টর অবস্থান নিয়ে চলার পক্ষপাতী।

কিন্তু উদারপন্থী একটি অংশ বলছে, সরকার ছ’টি দাবির তিনটি কম-বেশি মেনে নিয়েছে। বাকি তিনটিও খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলন তুলে নিয়ে সরকারকে কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। কিন্তু সতবীরদের সমস্যা হল, তাঁরা আন্দোলনকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন তার পর সব ক’টি দাবি না মানা পর্যন্ত ময়দান ছাড়া মুশকিল।

এরই মধ্যে বিজেপি শিবিরে আশঙ্কা, সেনাবাহিনীতে চালু হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বিএসএফের মতো আধাসামরিক বাহিনী, এমনকী সরকারের অন্যান্য অংশেও এক পদ এক পেনশনের দাবি উঠবে। তার উপরে সেনাদের উস্কানি দিতে একাধিক বিরোধী দল তৎপর রয়েছে। যেমন গত কালই সরকার ওই নীতি ঘোষণা করার পরপরই সেটির বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখ খোলেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিও।

বিরোধীদের আক্রমণ সামলাতে ও সেনাদের ভুল পথে চালিত করার জন্য আজ মূলত কংগ্রেস শিবিরকেই দায়ী করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘ কেউ যেন আপনাদের ভুল না বোঝাতে পারে। মনে রাখবেন, সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।’’

গত লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এক পদ এক পেনশনের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল মনমোহন সিংহের সরকার। বতর্মান সরকারের দাবি, এর জন্য ফি বছর সরকারের প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। তাই টাকার অঙ্ক তুলে মোদীর কটাক্ষ, ‘‘৫০০ কোটি বরাদ্দ করা থেকেই বোঝা যায় ওই সরকার বিষয়টির কিছুই বোঝেনি।’’ একই সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বকে সরাসরি আক্রমণ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যারা গত ৪০-৪২ বছরে বিষয়টি নিয়ে কিছু করেনি, তাদের কি আদৌও অধিকার রয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন করার? তারা নেহাতই রাজনৈতিক ফায়দার লোভে প্রাক্তন সেনাদের ভুল পথে চালিত করছে। এতে দেশের কোনও লাভ হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement