আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকার শুল্ককোপের জেরে ভারতীয় পণ্যের রফতানি যে ধাক্কা খেয়েছে, তা আগেই স্পষ্ট হয়েছিল। কতটা ধাক্কা খেয়েছে, এ বার সেই হিসাব আরও নির্দিষ্ট ভাবে বোঝা গেল। গত চার মাসে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের রফতানি প্রায় ৩৭.৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত মাসেই (সেপ্টেম্বরে) ২০.৩ শতাংশ কমেছে রফতানি। এমনটাই জানানো হয়েছে বাণিজ্য পরামর্শদাতা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-এর এক সাম্প্রতিক রিপোর্টে।
ওই রিপোর্ট অনুসারে, গত মে মাসে ৮৮০ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় ৭৭,২১২ কোটি টাকার) পণ্য আমেরিকায় রফতানি করেছিল ভারত। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ওই রফতানির পরিমাণ ৩৭.৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি হয়েছে ৫৫০ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় ৪৮,২৫৮ কোটি টাকার) পণ্য। চলতি বছরে আমেরিকায় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে যে কোনও চার মাসের ব্যবধানে এটিই সবচেয়ে বড় পতন বলে জানাচ্ছে জিটিআরআই।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতির অভিযোগে গত জুলাই মাসে ভারতীয় পণ্য আমদানির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে ‘জরিমানা’ বাবদ ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান তিনি। ওই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হয় গত অগস্ট মাস থেকে। বর্তমানে আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্যের উপরে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। গত কয়েক দিনে এই জটিলতা কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বটে, তবে ভারতের উপর শুল্কের হার এখনও একই রয়ে গিয়েছে।
সাধারণত কোনও পণ্য আমদানি-রফতানির জন্য সংস্থাগুলির মধ্যে চুক্তি কয়েক সপ্তাহ আগেই হয়ে যায়। ফলে জুলাইয়ে মার্কিন শুল্ক ঘোষণা এবং অগস্টে তা কার্যকর হলেও, তার প্রভাব কতটা পড়েছে, তা তাৎক্ষণিক ভাবে বোঝার উপায় ছিল না। বাণিজ্য পরামর্শদাতা সংস্থার মতে, ওয়াশিংটনের শুল্কের কতটা প্রভাব পড়ল ভারতীয় রফতানিতে, তার সম্পূর্ণ চিত্র সেপ্টেম্বরেই হিসাবেই স্পষ্ট হয়েছে। এর আগে জিটিআরআই জানিয়েছিল, মে মাসের তুলনায় অগস্টে আমেরিকায় বিভিন্ন পণ্যের রফতানি ২২.২ শতাংশ কমেছিল। রফতানি ধাক্কা খাওয়ার বিষয়ে অগস্টের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হলেও, তা কতটা ধাক্কা খেয়েছে, সেটি আরও ভাল ভাবে বোঝা গেল সেপ্টেম্বরের সাম্প্রতিক রিপোর্টে।
জিটিআরআই-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, গত মে মাসের পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে কমতে শুরু করেছিল আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের রফতানি। মে মাসে ভারতীয় পণ্যের রফতানি ৪.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ওই মাসে ওয়াশিংটনে ৮৮০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল দিল্লি। তবে তার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে রফতানি কমেছে। জুনে ৫.৭ শতাংশ কমে ৮৩০ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় ৭২,৮২৫ কোটি টাকার) রফতানি হয়। জুলাইয়ে তা আরও ৩.৬ শতাংশ কমে হয় ৮০০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৭০,১৯৩ কোটি টাকা)। জুলাইয়ের তুলনায় অগস্টে রফতানি কমে ১৩.৮ শতাংশ। ওই মাসে ভারত থেকে ৬৯০ কোটি ডলারের (ভারতীয় মুদ্রায় ৬০,৫৪১ কোটি টাকার) পণ্য আমেরিকায় গিয়েছিল। তার পরে সেপ্টেম্বরে তা এক ধাক্কায় আরও কমে আসে।
যদিও বর্তমানে ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যজট কাটার আভাস মিলেছে। বাণিজ্য নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন ভারতের বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল। কিছু দিন আগে দিল্লি থেকে ঘুরে গিয়েছেন আমেরিকার প্রতিনিধিরা। এ বার ষষ্ঠ দফায় বৈঠকের জন্য বসতে চলেছে ভারত এবং আমেরিকা।