বিজয় মাল্য গ্রেফতার হতেই মোদী সরকার দাবি করছে, তাঁর প্রত্যর্পণে আর বিশেষ দেরি নেই। কিন্তু ২৪ বছরের ইতিহাস বলছে অন্য কথা।
ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। এই ২৪ বছরে ভারতের অনুরোধ মেনে মাত্র একজনকেই এ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে ব্রিটেন। গত বছর গুজরাত দাঙ্গায় অভিযুক্ত সমীরভাই ভিনুভাই পটেলকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার আগের কয়েক বছরে ছ’জনের প্রত্যর্পণের আর্জি খারিজও করেছে ব্রিটেন। এই মুহূর্তে ব্রিটেনে মাল্য ছাড়াও আরও ন’জনকে প্রত্যর্পণের আর্জি পড়ে আছে। এ ছাড়া আইপিএল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ললিত মোদীও ব্রিটেনে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর জন্য যদিও প্রত্যর্পণের আর্জি জানায়নি ভারত।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, দু’দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন তখনই কাউকে ভারতের হাতে তুলে দেবে, যখন ভারতে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ ব্রিটেনের আইনেও যথেষ্ট গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। বিজয় মাল্যর ক্ষেত্রে সেখানেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা। কারণ ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে তা না মেটানো যথেষ্ট বড় অপরাধ বলে ব্রিটেনে বিবেচিত হয় না। আজ বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, মাল্যর প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারত ও ব্রিটিশ সরকার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে চলছে। কিন্তু প্রবীণ আইনজীবীরা বলছেন, মাল্যর মামলাটি ব্রিটিশ প্রশাসন আদালতের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। ফলে বল এখন আদালতের কোর্টে। সরকারের খুব একটা কিছু করার নেই।
আরও পড়ুন: পাক নিয়ে মার্কিন কর্তাকে নালিশ ভারতের
দিল্লির বক্তব্য, লন্ডন তথা ব্রিটেন ক্রমশই ভারতীয় অপরাধীদের নিরাপদ ঠিকানা হয়ে উঠছে। এই বদনাম ঘোচাতে ব্রিটিশ সরকারকেই ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে। মাল্য ছাড়াও রাজেশ কপূর, টাইগার হানিফ, অতুল সিংহ, রাজকুমার পটেল, যতীন্দর কুমার আঙ্গুরালা, আশারানি আঙ্গুরালা, সঞ্জীব চাওলা, শেখ সাদিক, অশোক মালিকের প্রত্যর্পণের আর্জি এখনও ব্রিটিশ সরকারের টেবিলে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে টাইগার হানিফ দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ। সঞ্জীব চাওলা হ্যানসি ক্রোনিয়ে-র ক্রিকেট ম্যাচ ফিক্সিং মামলায় অভিযুক্ত।
বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত যে ছয় জনের প্রত্যর্পণের আর্জি ব্রিটিশ সরকার খারিজ করেছে, তার মধ্যে একজন ব্রিটিশ নাগরিক। নাম, রেমন্ড ভারলে। ভারলের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও ব্রিটেন তার প্রত্যর্পণের অভিযোগ খারিজ করে। অস্ত্র ব্যবসায়ী রবি শঙ্করনের বিরুদ্ধে এ দেশের সামরিক তথ্য পাচারের অভিযোগ থাকলেও তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। একই ভাবে কলকাতায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় অভিযুক্ত অজয় প্রসাদ খৈতানকেও ফেরত পাঠাতে ব্রিটেন অস্বীকার করেছে।