ASSAM

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে সহদেবের একটাই প্রশ্ন,এবার তো বেঁচে গেলাম, এর পর...?

আমরা দু’জন একটা দোকানে বসে গান শুনছিলাম। হঠাৎ দু’জন এসে বাইরে ডাকল। তার পর...

Advertisement

সিজার মণ্ডল

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:৪২
Share:

তিনসুকিয়ার ঘটনায় একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছেন সহদেব। —নিজস্ব চিত্র।

সদ্য কৈশোর পেরনো সহদেব শুক্রবার সকালেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, তিনি বেঁচে আছেন! এখনও চোখ বন্ধ করলেই কানে ভেসে আসছে গুলির তীক্ষ্ণ শিসের মতো আওয়াজ।

Advertisement

“তখন খুব বেশি হলে পৌনে আটটা হবে। আমরা দু’জন একটা দোকানে বসে গান শুনছিলাম। হঠাৎ দু’জন এসে বাইরে ডাকল। হিন্দিতে কথা বলছিল ওরা।

বেরোতেই দেখলাম আরও একজন দাঁড়িয়ে। বাইরে অন্ধকার। তাই মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়েছিলাম। ওরা মোবাইল কেড়ে নিয়ে আমাদের ধাক্কা মেরে সামনে ঝোরার উপর কালভার্টের কাছে নিয়ে গেল।ঝোরাটা দোকান থেকে বড়জোর পঞ্চাশ গজ দূরে,’’—বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার এমনটা বিবরণ দিচ্ছেন অসম গণহত্যার ঘটনায় কপাল-জোরে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সহদেব নমঃশূদ্র।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘তিনসুকিয়ার ঘটনায় আমাদের রক্তে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে’

তিনসুকিয়ার রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ বাঙালিদের। —নিজস্ব চিত্র।

ওই রাতের ঘটনা যেন চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছেন সহদেব। তিনি বলেন, “কালভার্টের কাছে পৌঁছে দেখি আরও কয়েকজনকে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারপরেই একটা বাইকে দু’জন এল। বাইকের আলোয় দেখলাম, সবার পরনে সেনার মতো জংলা জলপাই রঙের পোশাক। মুখ ঢাকা। আমাদের বসতে বলার পরই পেছন থেকে গুলির আওয়াজ।” বলতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠে তাঁর। কোনও রকমে বললেন, “আরও দু’জন ছিল। ওদের ছেড়ে দেয় ওরা। যাদের ছেড়ে দেয়, তারা বাঙালি ছিল না।”

নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সহদেব জানালেন, গুলির আওয়াজ শুনেই হুমড়ি খেয়ে সামনের নালায় পড়ে যান তিনি। তারপর দীর্ঘক্ষণ কার্যত সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে ছিলেন সেখানে। কত ক্ষণ সেটা নিজেই বুঝতে পারছেন না। ধাতস্থ হওয়ারঅনেক ক্ষণ পর যখন চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে,তখন সাহস করে নালা থেকে মাথা তোলেন তিনি। কাউকে আশে পাশে দেখতে না পেয়ে উঠে বসেন। পরে আলোয় এসে দেখেন, নেহাত কপাল জোরেই প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। গুলি তাঁর শরীরে না লেগেজ্যাকেট ফুটো করে বেরিয়ে গিয়েছে!

আরও পড়ুন: বাঙালি হত্যার প্রতিবাদে তিনসুকিয়ায় বন্‌ধ, চলছে সেনা অভিযান

সামান্য শাক-সব্জির ব্যবসা করেন সহদেব। ওই দিন তাঁর সঙ্গে যাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল প্রত্যেকেই প্রান্তিক মানুষ। বছর ষাটেকের শ্যামলাল বিশ্বাসের বাড়ি নদীর ধার ঘেঁষেই। বৃহস্পতিবার দুই ভাইপো অবিনাশ এবং অনন্তকে নিয়ে খেতের মূলো তুলে পরের দিন বাজারে পাঠানোর জন্য সেগুলো গোছাচ্ছিলেন। সেই সময়েই তিনজনকে ডেকে নিয়ে যায় ‘ওরা’। পাশের দুটো বাড়ি থেকে ডেকে নেয় সুবল দাস এবং ধনঞ্জয় নমঃশূদ্রকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন