চাহিদা বাড়লেই ভাড়াবৃদ্ধি রাজধানী, শতাব্দীতে

ঘুরপথে রাজধানী, শতাব্দী ও দুরন্ত এক্সপ্রেসের ভাড়া বাড়াল রেল। আগামী শুক্রবার থেকে এই তিনটি ট্রেনের কিছু শ্রেণিতে ‘ডায়নামিক ফেয়ার’ বা পরিবর্তনশীল ভাড়া চালু হচ্ছে। অর্থাৎ, চাহিদা যত বাড়বে, ততই দাম বাড়বে টিকিটের। ঠিক যেমন ভাবে বাড়তি চাহিদার সময় বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় ওলা, উবেরের মতো অ্যাপ-নির্ভর ক্যাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৮
Share:

ঘুরপথে রাজধানী, শতাব্দী ও দুরন্ত এক্সপ্রেসের ভাড়া বাড়াল রেল।

Advertisement

আগামী শুক্রবার থেকে এই তিনটি ট্রেনের কিছু শ্রেণিতে ‘ডায়নামিক ফেয়ার’ বা পরিবর্তনশীল ভাড়া চালু হচ্ছে। অর্থাৎ, চাহিদা যত বাড়বে, ততই দাম বাড়বে টিকিটের। ঠিক যেমন ভাবে বাড়তি চাহিদার সময় বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় ওলা, উবেরের মতো অ্যাপ-নির্ভর ক্যাবে। তবে ৯ সেপ্টেম্বর বা তার পরের যাত্রার জন্য ইতিমধ্যেই টিকিট কাটা থাকলে বাড়তি মাসুল দিতে হবে না।

গোটা দেশে এখন ৪২টি রাজধানী এক্সপ্রেস, ৪৬টি শতাব্দী এক্সপ্রেস এবং ৫৪টি দুরন্ত এক্সপ্রেস চলাচল করে। রেলের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সেগুলির বাতানুকূল প্রথম শ্রেণি এবং এগ্‌জিকিউটিভ চেয়ার কার বাদ দিয়ে বাকি সব শ্রেণিতে এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হবে। ওই সব শ্রেণিতে মোট যত আসন আছে তার মাত্র দশ শতাংশ বিক্রি হবে নির্ধারিত দামে। সেই আসনগুলি ভর্তি হয়ে গেলেই দিতে হবে বাড়তি ভাড়া। পরের দশ শতাংশ আসনের জন্য দশ শতাংশ বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। এ ভাবেই পরের প্রতি দশ শতাংশ আসনের জন্য দশ শতাংশ করে ভাড়া বাড়তে থাকবে। তবে সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারিত ভাড়ার দেড় গুণের বেশি হবে না। এই হিসেবে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় মোট আসন সংখ্যার পঞ্চাশ শতাংশই দেড় গুণ দামে বিক্রি করবে রেল। তেমন চাহিদা না-থাকলে তৎকালে টিকিট বিক্রি হবে শেষ বিক্রি হওয়া টিকিটের সম দামে। তবে আলাদা করে তৎকাল চার্জ আর দিতে হবে না।

Advertisement

এটা যে ঘুরপথে ভাড়া বাড়ানো সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রেলের পদস্থ একাধিক কর্তা। তবে একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, এতে গরিব মানুষের উপর চাপ পড়বে না। কারণ, রাজধানী, শতাব্দী বা দুরন্ত এক্সপ্রেসে সাধারণত গরিব মানুষ চড়েন না। কিন্তু ভিড়ের মরসুমে দায়ে পড়ে এই সব ট্রেনে চাপতে হলে পকেট অনেকটাই হাল্কা হবে তাঁদের।

ভাড়া ব়ৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত কেন? রেল মন্ত্রক সূত্র বলছে, গত বাজেটেও যাত্রিভাড়া বাড়েনি। অথচ, খরচ বেড়েই চলেছে। সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ বলবৎ করতে গিয়ে বিস্তর বোঝা চেপেছে মন্ত্রকের কাঁধে। ফলে আয় বাড়ানোর নানা রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে। রেলের পরিভাষায় রাজধানী, শতাব্দী এবং দুরন্ত এক্সপ্রেস প্রিমিয়াম ট্রেন। প্রায় সারা বছরই এদের টিকিটের চাহিদা থাকে। তাই সেখানেই ‘ডায়নামিক ফেয়ার’ চালু করে বাড়তি
রোজগারের চেষ্টা।

রেল কর্তারা বলেছেন, বিমান সংস্থাগুলির মধ্যে এই ধরনের ‘ডায়নামিক ফেয়ার’ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। চাহিদার উপর নির্ভর করে

তারা টিকিটের দাম বাড়ায়। সবটাই হল চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যের খেলা। কিন্তু এর পাল্টা বক্তব্য হল, এ দেশে বিমান সংস্থা একাধিক। তাদের মধ্যে যাত্রী টানার প্রতিযোগিতা চলে। তার জেরে অনেক সময়ই টিকিট মেলে খুব সস্তায়। রেলের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটে না। ফলে একচেটিয়া ব্যবসার ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে টিকিটের দাম বাড়ানো কতটা যুক্তিযুক্ত— প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

রেলকর্তাদের আবার বক্তব্য, চাহিদা বাড়লে বাড়তি দাম দিতে হবে, এটাই বাজারের নিয়ম। তাঁরা সেই পথেই হাঁটছেন। কিন্তু নতুন নিয়মে ৯০ শতাংশ আসন খালি থাকলেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। সেটা কতটা বাস্তবসম্মত, সেই প্রশ্ন থাকছে। আবার একটা সময় এসি থ্রি টিয়ারের ভাড়া এসি টু টিয়ারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। রেল কর্তারা বলছেন, সে ক্ষেত্রে উচ্চশ্রেণিতে আসন খালি থাকলে সেখানে ‘আপগ্রেড’ করে দেওয়া হবে নিম্নশ্রেণির যাত্রীদের। ট্রেনের ভাড়া যাতে বিমান ভাড়াকে ছাপিয়ে না-যায় তা নিশ্চিত করতেই ‘এসি-ওয়ান’ এবং ‘এগ্‌জিকিউটিভ চেয়ার কার’-কে পরিবর্তনশীল ভাড়ার আওতায়
রাখা হয়নি।

বাড়তি ভাড়া গুনলে কি ভাল পরিষেবা মিলবে? কারণ নামে ‘প্রিমিয়াম ট্রেন’ হলেও ইদানীং রাজধানী-শতাব্দীর পরিচ্ছন্নতা, খাবারের মান, বিছানা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। এমনকী তলানি এসে ঠেকেছে এদের সময়ানুবর্তিতাও। দ্রুতগামী এই ট্রেনগুলি এখন সময়ে ছাড়লেও সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর নিশ্চয়তা দিতে পারেন না রেলকর্তারা। ভাড়া বৃদ্ধির পরে হাল ফিরবে, এমন আশার বাণীও শোনাচ্ছেন না তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন