Farmers Protest

আরও শক্তিশালী হচ্ছে আন্দোলন, অহিংসার পথে চলার বার্তা কৃষক নেতাদের

রবিবার ও সোমবার বাঘপত ও বিজনৌরে কিনাস মহাপঞ্চায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই জনসভার পরে দলে দলে কৃষকরা এসে গাজিপুরের বিক্ষোভে যোগ দেবেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:২৮
Share:

অবিচল: গাজিপুর সীমানায় কৃষকদের অবস্থান। শনিবার। ছবি: প্রেম সিংহ।

লালকেল্লার হাঙ্গামার পরে কৃষক আন্দোলনকারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। দিল্লির সীমানায় পুলিশ ও বিজেপি-আরএসএসের হুমকির মুখে গাজিপুরে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের কান্না ফের খেলা ঘুরিয়ে দিল।

Advertisement

পুরনো বিবাদ ভুলে আগেই রাষ্ট্রীয় লোক দলের নেতা, অজিত সিংহর পুত্র জয়ন্ত চৌধুরী রাকেশ টিকায়েতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এবার হরিয়ানার আইএনএলডি নেতা অভয় সিংহ চৌটালা গাজিপুরে এসে কৃষক নেতাদের পাশে দাঁড়ালেন। জয়ন্ত চৌধুরী, অভয় সিংহ চৌটালা সকলেই জাঠ নেতা। কৃষক নেতা মহেন্দ্র টিকায়েতের পুত্র রাকেশ ২০১৪-য় রাষ্ট্রীয় লোকদলের হয়ে উত্তরপ্রদেশে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। গত লোকসভায় দূরত্ব বেড়েছিল। এ বার রাকেশ টিকায়েতের পাশে যে ভাবে জাঠ নেতারা এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তাতে বিজেপি আগামী বছর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের আগে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ ভোট নিয়ে প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে। কারণ গত লোকসভা ভোটে সিংহভাগ জাঠ ভোটই বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছিল। হরিয়ানার উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌটালার কাকা অভয় কৃষি আইনের প্রতিবাদে বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি শ’খানেক গাড়ি নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় দুষ্যন্তের উপরেও বিজেপির সঙ্গত্যাগের চাপ বাড়ল।

প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লার ঘটনায় হিংসার রং লেগেছিল কৃষক আন্দোলনে। সেই কালিমা মুছে ফেলতে আজ মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মৃত্যুদিনে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও দিল্লির সীমানায় বিভিন্ন বিক্ষোভস্থলে কৃষকেরা সদ‌্ভাবনা দিবস পালন করেন। দিনভর অনশন করে অহিংসার পথে আন্দোলনে চালানোর বার্তা দেন।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের মুজফ‌্ফরনগরে কৃষকদের মহা পঞ্চায়েতের পরে গাজিপুর সীমানায় দিল্লি-মেরঠ জাতীয় সড়কের উপরে কাতারে কাতারে প্রতিবাদী কৃষক ও গ্রামবাসীরা এসে জড়ো হন। শনিবার মথুরায় কৃষকদের মহাপঞ্চায়েত হয়েছে। রবিবার ও সোমবার বাঘপত ও বিজনৌরে কিনাস মহাপঞ্চায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই জনসভার পরে দলে দলে কৃষকরা এসে গাজিপুরের বিক্ষোভে যোগ দেবেন। কৃষক নেতা বলবীর সিংহ রাজেওয়াল বলেন, ‘‘আগামী ২ ফেব্রুয়ারি রেকর্ড সংখ্যক জমায়েত হবে দিল্লি সংলগ্ন বিক্ষোভ স্থলগুলিতে।’’ বিভিন্ন কৃষক সংগঠনকে এক ছাতার তলায় আনা, সংযুক্ত কিসান মোর্চার প্রবীণ সদস্য এবং কৃষক নেতা অভিমন্যু কোহার গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নষ্ট করতে চাইছে ওরা।’’ আজ প্রতিবাদীদের উপরে পূর্ণ আস্থা রেখে কোহার দাবি করেছেন, আগামী কয়েক দিনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এই আন্দোলন।

বলবীর সিংহ রাজেওয়ালের মতে, লালকেল্লার ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’। তিনি বলেন, ‘‘২৬ জানুয়ারির পর থেকে আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছি। আজকের আন্দোলনেও সেই ধারা বজায় ছিল।’’

লালকেল্লার ঘটনার রেশ ধরে দিন কয়েক আগে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের (বিকেইউ) শীর্ষ নেতা রাকেশ টিকায়েতকে গাজিপুরের বিক্ষোভ স্থল থেকে সরাতে চেয়েছিল পুলিশ। আজ তারই প্রতিবাদে দলে দলে মানুষ গাজিপুরের বিক্ষোভ-স্থলে যোগদান করেছেন বলে জানান বিকেইউ নেতা পবন খাটানা। তাঁর মতে, শনিবার অন্তত ১০ হাজার লোক জড়ো হয়েছিলেন। আজ উত্তরপ্রদেশের মুজফ‌্ফরনগরে কৃষকদের মহা পঞ্চায়েতের পরে গাজিপুর সীমানায় দিল্লি-মেরঠ জাতীয় সড়কের উপরে কাতারে কাতারে প্রতিবাদী কৃষক ও গ্রামবাসীরা এসে জড়ো হন। ভিড়ের চাপে ব্যাহত হয় যান চলাচল।

উল্টো দিকে নতুন করে হিংসাত্মক ঘটনা রুখতে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা সীমানায় বিক্ষোভের তিন কেন্দ্রস্থল—টিকরি, সিংঘু ও গাজিপুরে রবিবার রাত ১১টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। রাকেশ টিকায়েতের ভাই, বিকেইউ-য়ের সদস্য নরেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘ইন্টারনেট বন্ধের মেয়াদ বাড়িয়ে সরকার যদি মনে করে, তা কৃষক আন্দোলনের উপরে প্রভাব ফেলব, তবে তা ভ্রম মাত্র।’’

এত দিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অশান্তি তৈরির জন্য কৃষক নেতারা বিজেপি-আরএসএসকেই দায়ী করছেন। তাঁদের অভিযোগ, বিজেপি-আরএসএসের লোকেরাই স্থানীয় বাসিন্দার ভেক ধরে সিংঘু, টিকরিতে গিয়ে কৃষকদের আন্দোলন তুলে নিতে বলছেন। শুক্রবার এই ঘটনা থেকেই সিংঘুতে অশান্তি ছড়ায়। এক আন্দোলনকারীর তরোয়ালের আঘাতে ছয়জন পুলিশকর্মী আহত হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন