Farmers Protest

থুনবার্গের ‘টুলকিট’-এর পিছনে কি ধালিওয়াল? দিল্লি পুলিশের নজরে এই কানাডাবাসী শিখ

কে বা কারা রয়েছেন এর পিছনে? কে-ই বা এই ধালিওয়াল? থুনবার্গের টুইটের পর থেকে উঠে আসছে এ ধরনের একাধিক প্রশ্ন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:৫৬
Share:

গ্রেটা থুনবার্গের শেয়ার করা ‘টুলকিট’ ঘিরেই দিল্লি পুলিশের নজরে উঠে এসেছেন মো ধালিওয়াল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কৃষকদের পক্ষে একটি টুইটে ‘টুলকিট’ শেয়ার করে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ওই ‘টুলকিট’-এর মাধ্যমে কৃষক আন্দোলনে যোগ দিতে ইচ্ছুকদের বার্তা দেওয়া হয়েছিল, কী ভাবে অনলাইন বা অফলাইনে তাঁরা আন্দোলন করতে পারবেন। তবে সেই ‘টুলকিট’ নিয়েই শুরু হয়েছে আর এক দফা বিতর্ক। ওই ‘টুলকিট’ তৈরির পিছনে যে বা যাঁদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ, বৃহস্পতিবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে দিল্লি পুলিশ। উঠে আসছে মো ধালিওয়াল নামে এক শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত কানাডীয়র নাম। কী এই ‘টুলকিট’? কে বা কারা রয়েছেন এর পিছনে? কে-ই বা এই ধালিওয়াল? থুনবার্গের টুইটের পর থেকে উঠে আসছে এ ধরনের একাধিক প্রশ্ন।

Advertisement

দিল্লি পুলিশের স্পেশাল পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ব্রাঞ্চ) প্রবীণ রঞ্জন বলেন, ‘‘অভিযোগপত্রে কোনও ব্যক্তির নাম করা হয়নি। তবে ওই টুলকিট তৈরির পিছনে যে খলিস্তানি আন্দোলনের সমর্থনকারী বলে অভিযুক্ত ‘পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশন’ নামে কানাডার একটি সংগঠন রয়েছে, তা প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।’’

দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধদমন শাখা ওই ‘টুলকিট’ প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা, আপরাধমূবলক ষড়যন্ত্র এবং ঘৃণা ছড়ানোর মতো ধারায় মামলা রুজু করেছে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই উঠে এসেছে মো ধালিওয়ালের নাম।

Advertisement

কে এই ধালিওয়াল? জন্ম কানাডায়। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, সে দেশের ভ্যাঙ্কুভারে ভারতীয় দূতাবাসে একটি বক্তৃতা করছেন তিনি। যদিও আনন্দবাজার ডিজিটাল এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। ওই ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ভবিষ্যতে কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেই, তা জয় বলা যাবে না। বরং কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহারের পর থেকেই শুরু আসল যুদ্ধ। যদি কেউ বলেন যে কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করা হলেই তো যুদ্ধ শেষ, তা সঠিক নয়। কারণ ওরা এই আন্দোলনের থেকে সমস্ত উদ্দীপনা শুষে নিতে চাইছে। ওরা বোঝানোর চেষ্টা করছে, আপনারা পঞ্জাবের থেকে আলাদা এবং খলিস্তানি আন্দোলনে জড়িত নন। তবে আপনারা তো তা নন।’’ এই ‘উস্কানিমূলক’ বক্তৃতার পর কৃষক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ধালিওয়ালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও এই একটি বক্তৃতা ছাড়া এই আন্দোলনে তাঁর আরও কোনও ভূমিকা আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

ইতিমধ্যেই দিল্লি পুলিশের নজরে থাকা ‘পোয়েটিক জাস্টিস ফাউন্ডেশন’ সংস্থার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে ধালিওয়ালের। অভিযোগ, যে বিতর্কিত ‘টুলকিট’টি থুনবার্গ টুইট করেছিলেন, তা ওই সংগঠনটি তৈরি করেছে। একটি ফেসবুক পোস্টে ধালিওয়াল দাবি করেছেন, সংগঠনটির অর্থের জোগান দিচ্ছেন অনিতা লাল নামে এক ব্যক্তি। ২০১১ সালে ভ্যাঙ্কুভারে প্রতিষ্ঠিত ‘স্কাইরকেট’ নামে একটি ‘ডিজিটাল ব্র্যান্ডিং ক্রিয়েটিভ এজেন্সি’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট হলেন ধালিওয়াল। কানাডায় পঞ্জাবি তথা শিখ সম্প্রদায়ের কাছে তাঁর ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্যই মূলত জনপ্রিয় তিনি।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৫-তে ‘ভ্যাঙ্কুভার ইন্টারন্যাশনাল ভাংড়া সেলিব্রেশন সোস্যাইটি’ও চালু করেন ধালিওয়াল। ঘটনাচক্রে, ‘অপারেশন ব্লু স্টার’-এর মাস জুনের প্রথম সপ্তাহে সেই উৎসব শুরু হয়েছিল। কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের কাছে তা নিয়ে সমালোচিত হলে পরে অনিতা লালের মাধ্যমে ক্ষমাও চেয়ে নেয় ওই সংগঠনটি।

২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর একটি ফেসবুক পোস্টে নিজেকে সরাসরি ‘খলিস্তানি’ বলে দাবি করেছেন ধালিওয়াল। তিনি স্পষ্টই লিখেছিলেন, ‘আমি এক জন খলিস্তানি। আমার সম্পর্কে এই বিষয়ে আপনারা না-ই জানতে পারেন। কেন? কারণ, খলিস্তান হল একটি ভাবনা। খলিস্তান হল একটি জীবন্ত আন্দেলন’। তিনি আরও লিখেছিলেন, ১৯৮৪-র তাঁর বয়স ছিল মাত্র ছ’বছর। সে বছরই ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ হয়েছিল। শিখ জঙ্গি জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালেকে ধরার জন্য অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। গত বছরের ৩ জুন তার ছবিও পোস্ট করেছিলেন ধালিওয়াল। সঙ্গে ভিন্দ্রানওয়ালের একটি উক্তি, ‘দাসত্ব থেকে তখনই মুক্তি পাওয়া যায়, যখন কোনও ব্যক্তি এটা উপলব্ধি করতে পারেন যে দাসত্ব করার থেকে মৃত্যু শ্রেয়’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন