অহমদাবাদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ক্যাপটেন ছিলেন পাইলট সুমিত সবরওয়াল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে নতুন করে তদন্তের দাবি জানালেন মৃত পাইলট সুমিত সবরওয়ালের নবতিপর বৃদ্ধ বাবা পুষ্করাজ সবরওয়াল। দাবি, এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে তাঁর পুত্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। কী ভাবে ওই বিমানের জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? জানতে চেয়েছেন বৃদ্ধ। নতুন করে তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক এবং এএআইবি-র ডিরেক্টর জেনারেলকে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এই তথ্য জানিয়েছে। বৃদ্ধের দাবি, আদৌ তাঁর পুত্রের কোনও মানসিক সমস্যা ছিল না। তাঁর দীর্ঘ কেরিয়ারে সামান্যতম কোনও দুর্ঘটনার ইতিহাস পর্যন্ত নেই।
গত ১২ জুন অহমদাবাদ থেকে লন্ডন-গ্যাটউইকগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিমানটি সামনের বিল্ডিংয়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে প়়ড়ে। মৃত্যু হয় ২৪১ জন যাত্রী-সহ ২৬০ জনের। বিমানের পাইলট ছিলেন দু’জন— ১৫ হাজার ঘণ্টার বেশি বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্যাপটেন সুমিত (৫৬) এবং সাড়ে তিন হাজার ঘণ্টা বিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কো-পাইলট ক্লাইভ কুন্দর (৩২)। ঘটনার পরে তদন্তকারী সংস্থা এএআইবি যে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছিল, তাতে দুই পাইলটের শেষ মুহূর্তের কথোপকথন ছিল। এক জন অন্য জনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘কেন তুমি জ্বালানির সুইচটা বন্ধ করে দিলে?’’ অন্য জন তার উত্তরে বলছেন, ‘‘আমি কিছু বন্ধ করিনি।’’ বলা হয়েছিল, শেষ মুহূর্তে জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিমানের একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু কী ভাবে তা ঘটল, রিপোর্টে তা স্পষ্ট নয়। কোন পাইলট কোন কথাটি বলেছেন, তা-ও স্পষ্ট হয়নি। এই রিপোর্টের পর একাধিক বিদেশি সংবাদমাধ্যম ক্যাপটেন সুমিতকে কাঠগড়ায় তুলেছিল। তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।
সুমিত বিবাহবিচ্ছিন্ন। তিন বছর আগে তাঁর মাতৃবিয়োগ হয়। মানসিক অসুস্থতার পক্ষে অনেকে এই দু’টি বিষয়কে তুলে ধরেছিলেন। সব দাবি নাকচ করে দিয়েছেন সুমিতের ৯১ বছর বয়সি বাবা পুষ্করাজ। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘দুর্ঘটনা সম্পর্কে বেছে বেছে কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাই সুমিতের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। এই ধরনের কটাক্ষে আমার নিজের শরীর এবং মনের উপরেও চাপ পড়ছে। ক্যাপটেন সুমিতের মানহানি ঘটছে। ভারতীয় সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সম্মানরক্ষা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার।’’ বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত সংক্রান্ত আইনের ১২ নম্বর ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘটনার নতুন তদন্ত শুরুর অনুরোধ জানিয়েছেন বৃদ্ধ।
পুত্রের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার দু’টি প্রধান যুক্তি (বিবাহবিচ্ছেদ এবং মাতৃবিয়োগ) উড়িয়ে দিয়েছেন সুমিতের বাবা। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘‘সুমিতের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটেছে ১৫ বছর আগে। তাঁর মায়ের মৃত্যুর পরেও তিন বছর কেটে গিয়েছে। তার পর ১০০-র বেশি বিমান তিনি উড়িয়েছেন। কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। তাঁর ২৫ বছরের কেরিয়ারে এমন কোনও ঘটনার উল্লেখ নেই।’’