২৬/১১ রাতে স্বরাষ্ট্রসচিব পাকিস্তানে!

মুম্বই হামলা নিয়ে নতুন বিতর্ক। ২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর ইসলামাবাদে ভারত ও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষ হয় বিকেলে। আর সে দিন রাতেই তাজ হোটেল-সহ মুম্বই শহরের একাধিক জায়গায় হামলা চালায় আজমল কসাব-সহ দশ পাক জঙ্গি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৮:৫৫
Share:

মুম্বই হামলা নিয়ে নতুন বিতর্ক।

Advertisement

২০০৮ সালে ২৬ নভেম্বর ইসলামাবাদে ভারত ও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষ হয় বিকেলে। আর সে দিন রাতেই তাজ হোটেল-সহ মুম্বই শহরের একাধিক জায়গায় হামলা চালায় আজমল কসাব-সহ দশ পাক জঙ্গি। ওই ঘটনার প্রায় সাড়ে সাত বছর বাদে এখন অভিযোগ উঠেছে, ২৬ নভেম্বর রাতে হামলা শুরু হওয়া সত্ত্বেও, ভারতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব মধুকর গুপ্ত পাক সরকারের অনুরোধে বাড়তি এক দিন থেকে যান সে দেশে।

জানা গিয়েছে, শুধু পাকিস্তানে থাকাই নয়, হামলা শুরু হওয়ার রাতে পাক সরকারের অনুরোধে ভারতীয় দলটি গিয়েছিল ইসলামাবাদের বাইরে। রাজধানীর কাছাকাছি মুরি নামে এক শৈলশহরে। নিছক প্রমোদ ভ্রমণ নয়, তাদের মুরি-সফর ছিল সরকারি একটি বৈঠকের মোড়কে। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, তাঁরা সেখানে পাকিস্তানের তৎকালীন অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন, এমনটাই ঠিক হয়েছিল। একটি সূত্র বলছে, পাক সরকারের তরফে এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হলে ২৬ নভেম্বর সন্ধেয় ভারতের তরফে সরকারি ভাবে ওই বৈঠকের জন্য আবেদন জানানো হয়।

Advertisement

ঘটনা হল, ওই মন্ত্রী মুরিতে, এমনকী ইসালামাবাদেই ছিলেন না। তা সত্ত্বেও কেন ওই আবেদন জানানো হয়েছিল? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বর্তমান কর্তাদের যুক্তি, পাকিস্তান সম্ভবত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে আসল ঘটনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল। যাতে জঙ্গি হামলার মোকাবিলায় দেরি হয়। রীতিমতো ছক কষেই তাই ওই দলটিকে বৈঠকের নামে মুরিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

প্রশ্ন উঠেছে, মুম্বই যখন জ্বলছে, ইসালামাবাদের ফাঁদে পা দিয়ে কেন প্রায় গোটা একটা দিন পাকিস্তানের মাটিতে নষ্ট করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা? ২৭ নভেম্বর সন্ধেয় দিল্লি ফিরে আসেন মধুকররা। তত ক্ষণে হামলা শুরু হওয়ার পরে প্রায় এক দিন কেটে গিয়েছে। ফিরে এসে সরকারের শীর্ষ কর্তাদের মধুকর যুক্তি দেন, পাক সরকার যেহেতু তাঁদের জন্য আগে থেকেই মুরি সফরের আয়োজন করে রেখেছিল, সেই কারণে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরা ওই শৈলশহরে গিয়েছিলেন।

কিন্তু হামলার ঘটনা জানা সত্ত্বেও কেন ভারতে ফিরে আসার চেষ্টা না করে মুরি শৈলশহরে গেলেন মুধকর ও তাঁর দল?

সে সময়ে মুরি সফরের পিছনে মধুকরদের আর একটি যুক্তি ছিল, তাঁরা মুম্বই হামলার ব্যাপকতা ধরতে পারেননি। এমনও বলা হয়েছিল যে, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় মুরিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল ছিল। সে কারণে হামলার বিস্তারিত তথ্য তাঁদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি।

আজ কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন মধুকর গুপ্ত নিজেই। তাঁর দাবি, ‘‘অসত্য তথ্য। ফোনে এক জন আমাকে হামলার বিষয়ে জানিয়েছিলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে টিভি খুলে মুম্বই হামলার বিষয়ে জানতে পারি।’’ তবু কেন তাঁরা মুরিতে গেলেন? এর উত্তরে কার্যত ডিগবাজি খেয়ে মধুকর আজ বলেন, ‘‘তখন আমরাও একটু অবাক হয়েছিলাম যে কেন আমাদের ইসলামাবাদ থেকে মুরিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!’’

মধুকরের কথার সূত্র ধরে বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, পাকিস্তানের পাতা ফাঁদে না বুঝেই পা বাড়ান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব। পাক প্রশাসনের লক্ষ্য ছিল স্বরাষ্ট্রসচিবকে আটকে দেওয়া। যাতে প্রত্যাঘাতে দেরি হয়। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। ওই জঙ্গিদের মোকাবিলায় এনএসজির আক্রমণ শুরু করতে প্রায় একটা দিন গড়িয়ে যায়। তবে জঙ্গি হামলার বিষয়ে মধুকরের কাছে যে প্রাথমিক তথ্য ছিল তা অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের খবর, হামলার ঘটনাটি জানার পরে বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষ সচিব এম এল কুমায়তের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন মধুকর। তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাটিলের নেতৃত্বে সে দিন কন্ট্রোল রুমে থেকে অভিযানের কার্যত নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ওই আমলা। যদিও তাঁদের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে এই সন্দেহে কুমায়তের সঙ্গে সামান্য কিছু কথা বলেই ফোন রেখে দেন মধুকর। পরের দিন সকালে অভিযানের দায়িত্ব হাতে নেন তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন।

গোটা ঘটনায় মধুকর গুপ্তের সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাটিলের নাম। এত দিন বাদে কেন এই তথ্য সামনে আনা হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে শিবরাজের অভিযোগ, ‘‘এটা চক্রান্ত। আমি চাই গোটা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’’

স্বরাষ্ট্রসচিব না থাকায় জঙ্গি মোকাবিলায় কোনও দেরি হয়েছে, এই অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। তাঁর দাবি, মুম্বই হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় দু’শোরও বেশি কম্যান্ডো মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন