এও এক ‘হীরক রাজা’-রই কথা। তবে গল্পের হীরক রাজার সঙ্গে এর তুলনা করতে যাবেন না ভুলেও! গল্পের হিরের খনির কর্মীদের দুর্দশার সঙ্গেও মিলবে না এঁর সংস্থার কর্মীদের অবস্থা। বরং উপহারে, ব্যবহারে সবেতেই কর্মীদের সঙ্গে অসাধারণ এক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন সুরাতের হিরে ব্যবসায়ী সাবজিভাই ঢোলাকিয়া।
কেমন সে সম্পর্ক? সংস্থার নানা উল্লেখযোগ্য দিনে কর্মীদের বড়সড় সব উপহারে ভরিয়ে দেন সাবজিভাই। হিরে সাম্রাজ্যে তিনি ‘সাবজিকাকা’ নামেই পরিচিত। কর্মীদের প্রতি তাঁর ব্যবহারেও ফুটে ওঠে সেই সৌজন্য। কখনও কর্মীদের সঙ্গে খুব একটা কড়া গলায় কখা বলতে শোনা যায়নি এই ব্যবসায়ীকে। এঁর সম্পর্কেই জেনে নিন কিছু তথ্য।
১৯৬২ সালের ১২ এপ্রিল গুজরাতের আমরেলি জেলার দুধেলা গ্রামে জন্ম হয় সাবজিভাই ঢোলাকিয়ার। ১৩ বছর বয়সেই স্কুল ছাড়েন তিনি। পরিবার সচ্ছল ছিল না একেবারেই। তাই আর্থিক অনটন ঘোচাতে যোগ দেন কাকার হিরের ব্যবসায়ে।
এর পর ১৯৯১ সালে নিজের সংস্থা ‘হরি কৃষ্ণ এক্সপোর্টস’ খোলেন সাবজিভাই। যখন সুরাতের উদ্দেশে রওনা দেন, তখন তাঁর পকেটে ছিল সাড়ে বারো টাকা। অর্থাৎ, মেরেকেটে বাসভাড়া আর এক বেলার খাবার।
প্রথম দিকে গুটিকয় কর্মী নিয়ে সংস্থা শুরু হলেও বর্তমানে সেখানে কর্মীসংখ্যা ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রথম থেকেই সংস্থার লভ্যাংশ কর্মীদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার নীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন সাবজিভাই। কোম্পানি যত বড় হয়েছে, উপহারের মানও ততই বেড়েছে।
নিজের ফেসবুকে বার বার কর্মীদের অবদানকে বড় করে দেখিয়েছেন তিনি। যে কোনও সংস্থাকে বড় করে তুলতে কর্মী ও তাঁদের পরিশ্রমই যে চূড়ান্ত, সে কথা শিকারও করেছেন তিনি। তাই তাঁদের মনের মতো উপহার দিতে তিনি পছন্দই করেন। এ হেন মানুষটির মাটির সঙ্গে যোগ কিন্তু ছিন্ন হয়নি।আজও নিজেই বাগান করেন প্রকৃতিপ্রেমিক এই ব্যবসায়ী।
এই উপহারকে কেন্দ্র করেই প্রথম বারের জন্য ২০১১ সালে সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন সভজিভাই। সে বছরও ৪৯১ টি গাড়ি ও ২০০ ফ্ল্যাট দেন তিনি।
উপহারের প্রভাব পড়েছে তাঁর ব্যবসাতেও। কর্মীদের আনন্দে রাখতে পারলে যে কাজ আরও ভাল হয়, তার প্রমাণ হরি কৃষ্ণ এক্সপোর্টসের প্রতি বছরের ঊর্ধ্বমুখী টার্নওভার। ২০১৭-২০১৮ আর্থিক বছরে কোম্পানির টার্নওভার হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা, যা কি না বিগত বছরের তুলনায় ১০৪ শতাংশ বেশি।
২০১৭ তে কোনও দীপাবলি উপহার না দিলেও এ বছর ফের উপহারের ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। এ বছর সংস্থার পালিশ ও কারিগরি বিভাগের কর্মীদের ১৭০০ জন কর্মীকে গাড়ি দিচ্ছেন সাবজিকাকা। রেনো ও মারুতি কোম্পানির সেই সব গাড়ির দাম ৪ লক্ষ ৪০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা। নিজের ফেসবুক পোস্টেই এই উপহারের বিবরণ দিয়েছেন সভজিভাই।
সম্প্রতি এই উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান আমন্ত্রিত হিসাবে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনিই কর্মীদের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেন। সুরাতের ইছাপুরের এক জেম ও জুয়েলারি পার্কে এই জমকালো অনুষ্ঠান হয়।
২০১৬ সালেও ৪০০ টি ফ্ল্যাট ও ১২০০ টি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন তাঁর কর্মীদের। ২০১৫-তেও দিয়েছিলেন এমনই উপহার। এর আগে সংস্থায় একটানা পঁচিশ বছর পূর্ণ করা তিন কর্মীকে তিনটি বহুমূল্য মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িও উপহার দিয়েছেন সুরাটের হিরে ব্যবসায়ী। প্রতিটি গাড়ির মূল্য ছিল প্রায় এক কোটি টাকা।
সাবজিভাইয়ের এমন সব কাণ্ড আবার মনে পড়িয়ে দেয় আর এক হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদির কথা। এক হিরে ব্যবসায়ীর জালিয়াতি নিয়ে সারা দেশে যখন নিন্দার ঝড় বইছে, সেখানে সাবজিভাইয়ের মতো হিরে ব্যবসায়ীরা আবার মুদ্রার আর এক দিককেও দেখিয়ে দিয়ে যান। (ছবি সৌজন্য: সাবজিভাই ঢোলাকিয়ার ফেসবুক পেজ।)