হাসপাতালে ভিড় স্বজনহারাদের। এএফপি
দাউদাউ করে জ্বলছে সাততলা হোটেলের উপরের তলাগুলো। আগুন ছড়াচ্ছে দ্রুত। আবাসিকদের আর্তির মধ্যেই ছ’তলা থেকে ঝাঁপ দিলেন এক মা। কোলে সন্তান। পাঁচতলার বারান্দা থেকে আরও এক জন। আবার ঝাঁপ। দিল্লির ঘিঞ্জি এলাকা করোলবাগে হোটেল ‘অর্পিত প্যালেসে’র সামনে ভিড় করা জনতা হতবাক।
আজ ভোরে এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৭। ওই মা এবং সন্তান-সহ অন্তত চার জন মারা গিয়েছেন আতঙ্কে ঝাঁপ দিয়ে। বাকিরা দমবন্ধ হয়ে। মৃত এইচপিসিএল-এর দুই পদস্থ আধিকারিক। জখম অন্তত ২০ জন। উদ্ধার করা হয় ৩৫ জনকে। দমকলের অন্তত ৩০টি গাড়ি সকাল ৭টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তত ক্ষণে হোটেলের একতলা এবং বেসমেন্ট ছাড়া বাকি অংশ পুড়ে ছাই। অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার রাজেন্দ্র এবং ম্যানেজার বিকাশকে।
দমকল জানায়, ভোর ৪টে নাগাদ আগুন লাগে হোটেলের পাঁচতলায়। বিস্তর কাঠের প্যানেল থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন। আগুন লেগেছে টের পাওয়া মাত্রই ঘুমচোখে করিডর ধরে ছুটে নেমে আসার চেষ্টা করেন অনেকে। কিন্তু কাঠের প্যানেল লাগানো করিডর তত ক্ষণে আগুনের গ্রাসে। পুলিশ ও পুরসভা জানায়, উপযুক্ত ব্যবস্থা ছিলই না ২৫ বছরের হোটেলটিতে। ‘ফায়ার এগ্জিট’এর পথ অপরিসর। শুধু তা-ই নয়, সবক’টি ‘এগ্জিট’এর দরজাই ছিল বন্ধ। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন বলেছেন, ‘‘হোটেলটির পাঁচতলা পর্যন্ত তৈরির অনুমতি ছিল। কিন্তু ছ’তলা ও সাততলায় রান্নাঘর, ডাইনিং স্পেস তৈরি করা হয়েছিল, উপরে শামিয়ানা খাটিয়ে।’’
দিল্লির ঘটনা শোনা ইস্তক ন’বছর আগের এক সকাল ফের তোলপাড় করে দিচ্ছে কলকাতার পিকু চট্টোপাধ্যায়কে। পার্ক স্ট্রিটে স্টিফেন কোর্টের আগুনে মারা যান তাঁর একমাত্র সন্তান পম্পা। সেখানেও কয়েক জন প্রাণভয়ে ঝাঁপ দেন। তবে বাঁচেননি। একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রথম চাকরি করতে যাওয়া পম্পা ও তাঁর জনা চারেক সহকর্মী
ধোঁয়ার মধ্যে কোনও মতে ছাদের সিঁড়িটা খুঁজে বার করেছিলেন। কিন্তু দরজা তালাবন্ধ ছিল। প্রাণপণে দরজা ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ঘুপচি সিঁড়িতে জড়ো হওয়া এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। পরে তাঁদের দগ্ধ দেহ মিলেছিল সিঁড়িতে। পিকুদেবীর কথায়, ‘‘আমার ২২ বছরের মেয়েটার সঙ্গেও তো একই ঘটনা ঘটেছিল। এত বছরেও দেশটার কিছুই পাল্টাল না।’’