একটু আগেই মঞ্চ ছেড়েছেন অমিতাভ বচ্চন। আমির খান তখনও মেক আপ ভ্যানে। হঠাৎই মঞ্চের নীচের অংশটি দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করে।
সমুদ্র সৈকত ঘেঁষা গিরগাম চৌপট্টির আলো ঝলমলে মঞ্চের ঘড়িতে তখন সাড়ে আটটা। মেক ইন ইন্ডিয়া সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে সবে শুরু হয়েছে ‘মহারাষ্ট্র রজনী’। উপস্থিত রয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস, রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাও, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে-সহ এক ঝাঁক ভিআইপি। রয়েছেন হেমা মালিনী, আমির খান, প্রসূন জোশী-সহ বহু বলিউড তারকাও।
মঞ্চে তখন মরাঠি লোকনৃত্যের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে। আগুন যে লেগেছে, মঞ্চের উপর জনা পঁচিশেক শিল্পী প্রথমে তা টের পাননি। পরে দর্শক ও অনুষ্ঠানের কর্মকর্তাদের চিৎকারে তাঁরা মঞ্চ ছাড়েন। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। উপকূলবর্তী এলাকা বলেই সমুদ্রের বাতাসে আগুন ভয়াবহ চেহারা নেয়।
প্রশাসন সূত্রে খবর, আগুন ছড়াতেই দ্রুত উদ্ধারকাজে নামে দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। প্রথমে ঘটনাস্থলে উপস্থিত দমকলের একটি ইঞ্জিন দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। কিছু ক্ষণ পরে আসে আর একটি ইঞ্জিনও। প্রাথমিক যানজট কাটিয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই আরও ১২টি। আনা হয় দশটি জলের ট্যাঙ্কারও। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। পরে ফডণবীসকে ফোন করে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রশাসন, পুলিশ ও দমকলের তৎপরতায় আধঘণ্টার মধ্যেই আয়ত্তে চলে আসে আগুন। বহু ভিভিআইপি ছাড়াও অনুষ্ঠানে ছিলেন হাজার পঁচিশেক দর্শক। সবাইকে মিনিট পনেরোর মধ্যে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হতাহতের কোনও ঘটনা না ঘটলেও মঞ্চটি পুরো পুড়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে বহু বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতিও।
তবে কী ভাবে আগুন লাগল, তা গভীর রাত পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের আগেই অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা যাচাই করে নেওয়া হয়েছিল। তার পরেও কী ভাবে এমন বিধ্বংসী আগুন লাগল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, কৃত্রিম ধোঁয়া তৈরির মেশিন থেকেই আগুন ছড়ায় মঞ্চে। উঠে আসছে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার তত্ত্বও।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সকলেই পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রশংসা করছেন। যেমন অভিনেতা বিবেক ওবেরয়। একটি নাচের অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এমন একটা আতঙ্কের পরিবেশে হাজার হাজার দর্শকে ঠাসা অনুষ্ঠানস্থল খালি করা মোটেই সহজ কথা নয়। প্রশাসনকে কুর্নিশ।’’ বিবেক নিজেও উদ্ধারকাজে হাত লাগান। আগুন লাগার সময় মঞ্চের এক দিকের পর্দার আড়ালে ছিলেন অভিনেতা শ্রেয়স তলপাড়ে। নাচের পরেই অভিনেত্রী ঈশা কোপ্পিকরের সঙ্গে মঞ্চে নামার কথা ছিল তাঁর। হঠাৎ আগুন দেখে প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ঘাবড়ে যান। চটজলদি তাঁদেরও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়।
রক্ষা পেয়েছেন অমিতাভ বচ্চনও। আগুন লাগার সময় অভিনেতা তখন অনুষ্ঠান শেষ করে গাড়িতে বসে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। পরে টুইটারে লেখেন, ‘‘প্রো়ডাকশনের লোকজন বলছিলেন থেকে যেতে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যেতে। চলে না এলে নির্ঘাত আগুনের মুখে পড়তাম! বিধাতা রক্ষে করেছেন!’’
ওই মঞ্চেই ঘণ্টা খানেক পরে আমির খানের অনুষ্ঠান ছিল। অভিনেতা জানান, আগুন লাগার সময় তিনি নিজের মেক-আপ ভ্যানে ছিলেন। অনুষ্ঠানের এক কর্মকর্তার কাছ থেকেই তিনি আগুন লাগার কথা শোনেন। ভ্যান থেকে নেমে এসে দেখেন, দ্রুত ছড়াচ্ছে আগুন। একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বিজেপি সাংসদ পুনম মহাজনও। তাঁর কথায়, ‘‘একটা সময় মনে হয়েছিল আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ভাগ্য ভাল যে, প্রশাসন এত অল্প সময়ে জায়গা খালি করতে পেরেছে।’’
শিল্পে দেশি-বিদেশি লগ্নির ঝাঁপি টানতে গত কালই ওরলির ন্যাশনাল স্পোর্টস অডিয়োরিয়ামে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর আজ এই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড। প্রাণহানির খবর না মিললেও, বাতিল করা হয়েছে আজকের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেক ইন ইন্ডিয়ার এই সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে আট হাজার দেশি ও আড়াই হাজার বিদেশি সংস্থা। থাকছেন ৬৮টি দেশের সরকারি প্রতিনিধিরা এবং ৭২টি দেশের বাণিজ্য প্রতিনিধি। উদ্বোধনের পরের দিনেই এ ভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে কি না, সেই আশঙ্কাও অনেকে প্রকাশ করেছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই দুর্ঘটনার প্রভাব আগামী পাঁচ দিনের সূচিতে পড়বে না।
ছবি: পিটিআই ও এএফপি।