Nepal

সীমান্তে গুলি নেপাল পুলিশের, হত ভারতীয় কৃষক, আহত তিন

স্থানীয় সূত্রের খবর, গুলিতে বিকাশকুমার রাই (২৫) নামে মাহোবা গ্রামের এক কৃষকের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। উমেশ রাম এবং উদয় ঠাকুর জখম হয়েছেন।

Advertisement

সংবাদসংস্থা

সীতামঢ়ী, বিহার শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২০ ১৮:৪৯
Share:

পুলিশের গুলিতে আহত কৃষককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

নয়া মানচিত্র ঘিরে কাঠমান্ডুর সঙ্গে বিতর্ক চলছে নয়াদিল্লির। তারই মধ্যে এবার সীমান্তে নেপাল পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হল ভারতীয় কৃষকের।

বিহারের সীতামঢ়ী জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্তে নেপাল সশস্ত্র পুলিশের (এপিএফ) গুলিতে স্থানীয় এক গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন। আহত তিন। ভারত-নেপাল সীমান্তে নজদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনী ‘সশস্ত্র সীমা বল’(এসএসবি) সূত্রের খবর, এদিন এপিএফের কয়েকজন জওয়ান লালবন্দি-জানকীনগর পঞ্চায়েত এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্তে এসে ভারতীয় কৃষকদের চাষের কাজ করতে বাধা দেন। সে সময় কৃষকদের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। হঠাৎই নেপাল পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, গুলিতে বিকাশকুমার রাই (২৫) নামে মাহোবা গ্রামের এক কৃষকের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। স্থানীয় কৃষক উমেশ রাম এবং উদয় ঠাকুর গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁদের সীতামঢ়ী জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। লগন রাই নামে আরেক আহত কৃষককে নেপাল পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ। বিহার পুলিশের ডিজি(সদর) জিতেন্দ্র কুমার এদিন বলেন, ‘‘পিপরা-পারসাইন নামে এই সীমান্ত এলাকা সোনেবরসা থানার অন্তর্গত। তবে যেখানে গুলি চলেছে, সেটা নেপালের এলাকা। খবর পেয়েই পুলিশকর্মীরা সীমান্তে পৌঁছন।’’ এসএসবি’র আইজি সঞ্জয় কুমার এদিন বলেন, ‘‘হামলার সময় আমাদের জওয়ানেরা সেখানে ছিলেন না। নেপাল সশস্ত্র পুলিশের গুলিতেই স্থানীয় এক কৃষকের মৃত্যু ঘটেছে।’’ এসএসবি সূত্রের খবর, ঘটনার পরে ওই এলাকায় বাড়তি বাহিনী পাঠানো হয়েছে। ঘটনার জেরে নেপাল সীমান্তের অন্য এলাকাগুলিতেও টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। দার্জিলিং জেলার পানিট্যাঙ্কি এসএসবি পোস্টে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্তি বাহিনী। মেচি নদীর তীর এবং নকশালবাড়ি ও খয়েরবাড়ি এলাকায় তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।

নিহত বিকাশকুমারের বাবা নাগেশ্বর রাই এদিন বলেন, ‘‘আমার চাষের জমি সীমান্তের ঠিক ওপারে নেপালের নারায়ণপুর এলাকায় পড়ে। আমার ছেলে প্রতিদিনেই মতোই সেখানে চাষের কাজ করতে গিয়েছিল। সেখানেই তাঁকে গুলি করে মেরেছে নেপাল পুলিশ।’ ওই এলাকায় কিছুদিন আগে শূন্যে গুলি ছুড়ে ভারতীয় কৃষকদের ভয় দেখিয়েছিল নেপাল পুলিশ। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ভিসা-পাসপোর্টের বিধিনিষেধ না-থাকায় এতদিন দু’দেশের স্থানীয় বাসিন্দারা অবাধে সীমান্ত পারাপার করতেন। নেপালের মদেশীয় মহল্লাগুলিতে তাঁদের অনেক আত্মীয় পরিজন রয়েছে। রয়েছে, আত্মীয়তা সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিও। আগে সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াতে কোনও সমস্যা হয়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: হতদরিদ্রের সংখ্যা দেড় গুণ ছাপিয়ে হবে ১১২ কোটি, ১০ কোটি ভারতে, বলছে গবেষণা

তবে এবার বিরোধ বাধল কেন?

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের মতে, নেপালের নয়া মানচিত্র ঘিরে দু’দেশের বিবাদই এর কারণ। ভারতের আপত্তি উড়িয়ে চলতি সপ্তাহেই নেপালের জাতীয় আইনসভা, ‘হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভ’ সে দেশের নয়া মানচিত্র অনুমোদনের বিল পাশ করেছে। কালাপানি, লিপুলেখ, লিম্পিয়াধুরার মতো ভারত নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডকে ‘নেপালের অংশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেই মানচিত্রে। যদিও ওই ‘বিতর্কিত’ অঞ্চলগুলির অবস্থান সীতামঢ়ী থেকে অনেক দূরে, উত্তরাখণ্ড-নেপাল সীমান্তে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাংলা-সহ ৪ রাজ্যে অবস্থা ‘খুব খারাপ’, ব্যাখ্যা চাইল সুপ্রিম কোর্ট

এর আগে ২০১৫ সালের নভেম্বরে বিহারেরই রক্সৌল সীমান্তে নেপাল পুলিশের গুলিতে এক ভারতীয় যুবকের মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাচক্রে, ওই হামলার কিছুদিন আগেই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কে পি শর্মা ওলি। তাঁর জমানায় গৃহীত নেপালের নয়া সংবিধানে মদেশীয়দের অধিকার খর্ব করায় আন্দোলন শুরু হয়েছিল। রক্সৌল লাগায়ো বীরগঞ্জের শঙ্করাচার্য গেটে মদেশীয়দের আন্দোলনের উপর নেপাল পুলিশ গুলি চালানোয় আশিস রাম নামে এক ভারতীয় যুবক নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এবার কোনও অশান্তি ছাড়াই নেপাল পুলিশ বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। কূটনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, চিন-ঘনিষ্ঠ ওলির দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বে পরিকল্পিত ভাবেই নয়াদিল্লির সঙ্গে মানচিত্র-দ্বৈরথে নেমেছে কাঠমান্ডু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন