বুনো হাতি। —ফাইল চিত্র।
ভারতে বন্য হাতির সংখ্যা ক্রমশ কমছে বলে জানানো হল ডিএনএ ভিত্তিক সমীক্ষার রিপোর্টে। ‘অল-ইন্ডিয়া সিঙ্ক্রোনাস এলিফ্যান্ট এস্টিমেশন ২০২৫’ শীর্ষক ওই রিপোর্ট উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, গত আট বছরে ভারতের অরণ্যে ‘জাতীয় ঐতিহ্যের প্রাণী’ আনুমানিক ১৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। ২০১৭ সালে ভারতে জংলি হাতির আনুমানিক সংখ্যা ছিল ২৭৩১২টি। ২০২৫ সালে তা আনুমানিক ২২৪৪৬। অর্থাৎ, আনুমানিক ৪৮৬৬টি কম।
আধুনিক ডিএনএ বিশ্লেষণ সমীক্ষার সাহায্যে ভারতের বুনো হাতির (পোষ্য হাতিদের সমীক্ষার বাইরে রাখা হয়েছিল) আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালে। টানা চার বছরের সেই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে গত মঙ্গলবার। তাতে বলা হয়েছে, মুক্ত প্রকৃতিতে বিচরণকারী হাতির সংখ্যা ১৮২৫৫ থেকে ২৬৬৪৫টির মধ্যে। যার গড় করলে দাঁড়ায় ২২৪৪৬। কী ভাবে হয়েছে ডিএনএ বিশ্লেষণ? কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রক জানিয়েছে, জঙ্গল থেকে হাতিদের মলের নমুনা সংগ্রহের পর সেগুলির ‘ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টি’ পরীক্ষার মাধ্যমে আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণের চেষ্টা হয়েছে। প্রায় ৬ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার বনভূমি ঘুরে বনকর্মীরা ৭০ হাজারেরও বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
ভারতে এখন হস্তিকূলের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক আবাসভূমি হিসেবে পশ্চিমঘাট পর্বতমালাকে চিহ্নিত করা হয়েছে রিপোর্টে। সেখানে এখন আনুমানিক ১১৯৩৪টি হাতির বাস। এ ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ৬৫৫৯টি, শিবালিক পাহাড় এবং গাঙ্গেয় সমভূমিতে ২০৬২টি এবং মধ্য ভারত এবং পূর্বঘাট পর্বতমালায় ১৮৯১টি হাতি রয়েছে বলে জানিয়েছে, ‘অল-ইন্ডিয়া সিঙ্ক্রোনাস এলিফ্যান্ট এস্টিমেশন ২০২৫’ রিপোর্ট। রাজ্যওয়াড়ি হিসেব অনুযায়ী এখন কর্নাটকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হাতি রয়েছে। আনুমানিক ৬০১৩টি। এর পর রয়েছে অসম (৪১৫৯), তামিলনাড়ু (৩১৩৬), কেরল (২৭৮৫) এবং উত্তরাখণ্ড (১৭৯২)। ওড়িশায় ৯১২টি হাতি রয়েছে. যেখানে ছত্তীসগঢ় ও ঝাড়খণ্ডে মিলে ৬৫০টিরও বেশি। অরুণাচল প্রদেশ (৬১৭), মেঘালয় (৬৭৭), নাগাল্যান্ড (২৫২) এবং ত্রিপুরা (১৫৩)-র মতো উত্তর-পূর্বের রাজ্যের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ (৯৭) এবং মহারাষ্ট্র (৬৩) এর মতো রাজ্যগুলির বনাঞ্চলের ছোট কয়েকটি হস্তিযূথের সন্ধান মিলেছে।
বহু বছর ধরে নির্বিচারে হাতি ধরার ফলে এক সময় প্রাকৃতিক পরিবেশে তার সংখ্যা কমে এসেছিল ভয়াবহ ভাবে। স্বাধীনতার কিছুকাল পরে বন্যপ্রাণ বিশারদ ইপিজি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, অচিরেই ভারতে বুনো হাতির সংখ্যা অনেক কমে যাবে। গজদন্তের জন্য চোরাশিকার এবং প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংসকে হাতির সংখ্যা কমার জন্য দায়ী করেছিলেন তিনি। বস্তুত, মুঘল আমলেও মধ্যভারত, গুজরাত, অওধ অঞ্চলে বুনো হাতির উপস্থিতির কথা জানা গেলেও এখন ওই সব এলাকায় তারা অনুপস্থিত। বাসস্থানের চরম সঙ্কটে পড়া ভারতীয় হস্তিকুল এখন গোটা ১৫ রাজ্যের বিচ্ছিন্ন অরণ্যভূমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছে। জনবসতি ও কৃষিজমির সম্প্রসারণ, শিল্পায়ন, খননকার্য, রেললাইন তৈরির মতো উন্নয়নের কোপে নষ্ট হচ্ছে হাতি চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ পথ অর্থাৎ করিডরগুলি। ফলে বাস্তুচ্যুত হাতির দল খাবারের সন্ধানে হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। বাড়ছে হাতি-মানুষ সঙ্ঘাত। প্রাণহানি ঘটছে দু’তরফেই।