আবছায়া: অসহায় যাত্রীদের অপেক্ষা নয়াদিল্লি স্টেশনেও। রবিবার। ছবি: পিটিআই
মরসুমের শুরু থেকেই ভোগাচ্ছে সে। বছরের শেষ দিনে এসে উড়ানসূচি লন্ডভন্ড করে দিল দিল্লির কুয়াশা বা ধোঁয়াশা। রবিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা প্রায় ১১টা পর্যন্ত কার্যত অচল থাকে দিল্লি বিমানবন্দর। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, কুয়াশার জেরে এ দিন বাতিল হয়েছে ২০টি উড়ান। মুখ ঘুরিয়ে অন্য শহরে উড়ে গিয়েছে ৫০টি এবং ছাড়তে দেরি করেছে অন্তত ১৫০টি উড়ান। সকালে দিল্লিতে বহু বিমান আটকে পড়ায় দিনভর দেশের অন্যত্রও অনেক উড়ানের দেরি হয়ে যায়। দিল্লিতে নামতে না-পেরে অন্য শহরে চলে যেতে বাধ্য হয় বহু বিমান।
হোঁচট খেয়েছে ট্রেন চলাচলও। অন্তত ১৫টি ট্রেন বাতিল করতে হয় কুয়াশার জন্য। দেরি করে ছেড়েছে ৫৭টি ট্রেন। উত্তর ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যের ১৮টি ট্রেনের সফরসূচি পরিবর্তন করতে হয়েছে।
তবে কুয়াশায় সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছে বিমান। দিল্লিতে নামতে না-পেরে এ দিন সকাল ৯টার পরে চারটি উড়ান কলকাতায় চলে আসে। তাদের মধ্যে ছিল এয়ার ইন্ডিয়া সিঙ্গাপুর-দিল্লি উড়ানও। বাকি তিনটি উড়ান জেট এয়ারওয়েজের। সেগুলি ঢাকা, ব্যাঙ্কক ও ভুবনেশ্বর থেকে দিল্লি যাচ্ছিল। কলকাতা থেকে দিল্লিগামী বেশ কিছু উড়ানও আটকে পড়ে। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বেলা ১২টার পরে আটকে থাকা বিমানগুলি ছাড়ে। দিল্লি থেকে যে-সব বিমানের কলকাতায় আসার কথা ছিল, সেগুলিও দেরিতে আসে। বহু যাত্রী আটকে পড়েন বিমানবন্দরে। বর্ষশেষের ছুটি কাটাতে কলকাতামুখী বহু মানুষও আটকে পড়েন দিল্লিতে।
বিমান যাতে ঘন কুয়াশাতেও নামতে পারে, সেই জন্য অত্যাধুনিক ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ক্যাট থ্রি-বি রয়েছে দিল্লিতে। সেই যন্ত্রের সাহায্যে দৃশ্যমানতা কমে ১২৫ মিটার হয়ে গেলেও বিমান ওঠানামা করতে পারে বলে জানাচ্ছে দিল্লি বিমানবন্দর। কিন্তু ঘোর কুয়াশায় এ দিন সকাল সাড়ে ৭টার পরে দৃশ্যমানতা ৫০ মিটারে নেমে যায়। সেই জন্য দিল্লির মাথায় চলে আসা বহু বিমান মুখ ঘুরিয়ে অন্য শহরে গিয়ে নামতে বাধ্য হয়।
সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এ দিন সকালে দিল্লির তাপমাত্রা নেমে যায় ৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সঙ্গে যোগ হয় ঘন কুয়াশা। পরিবেশবিদদের মতে, গাড়ির ধোঁয়া, রাস্তার ধুলো, কারখানার ধুলো, বড় বড় জেনারেটর থেকে নির্গত ধোঁয়া এবং আশপাশের দুই রাজ্যে ফসলের গোড়া পুড়িয়ে ফেলার জেরে তৈরি ধোঁয়া— সব মিলিয়ে দিল্লির বাতাস এখন বিষাক্ত। বিষধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে আকাশ। এই অবস্থায় শীতের কুয়াশা যুক্ত হওয়ায় এ দিনের পরিস্থিতি মারাত্মক আকার নেয়। তার ফলেই উড়ান-বিভ্রাট।