জলের তলায় হিমাচল প্রদেশের ধর্মপুর বাস স্ট্যান্ড। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টি। সঙ্গে আবার ধস। প্রবল বৃষ্টির জেরে নদীগুলো বইছে বিপদসীমার উপরে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এমন সময় লেহ-র বায়ুসেনা দফতরে একটি ছোট্ট বার্তা। উদ্ধার করতে হবে ২২ জন বিদেশি ট্রেকারকে। এঁদের মধ্যে কয়েক জন অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। খবর পাওয়া মাত্রই বায়ুসেনা দল রীতিমতো প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই উদ্ধার করল ওই ২২ জনকে।
মেঘভাঙা বৃষ্টি, হড়পা বান এবং ধস— সব মিলিয়ে কার্যত বিপর্যস্ত জম্মু-কাশ্মীর থেকে হিমাচল প্রদেশ। হিমাচল প্রদেশে আবার প্রকৃতির এই ভয়াল রোষের বলি হয়েছেন
অন্তত চার জন। তবে কাশ্মীরে এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনও খবর না মিললেও ধসের জেরে স্থগিত রাখা হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। এই দুর্যোগে লাদাখের মার্খা উপত্যকায় আটকে পড়া ওই ২২ জন পর্বতারোহীকে উদ্ধার করেছেন বায়ুসেনা।
আজ সকালে হিমাচল প্রদেশের মান্ডি জেলার ধর্মপুরে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান আসে। আচমকা জল ঢুকতে থাকে ধর্মপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। চোখের নিমেষেই ভেসে যেতে থাকে গাড়ি এবং গবাদি পশুর দল। ফুঁসতে থাকা সোন খুদ নদীর কোপে স্থানীয় দোকানপাট এবং বাড়িগুলিও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। হড়পা বানে এ দিন একটি বাড়ি ভেঙে মারা গিয়েছেন একই পরিবারের তিন জন। পরিবারের বাকিদের
খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, জলের প্রবল স্রোতে ভেসে গিয়েছেন এক সাধুও। উদ্ধারকাজে নেমেছেন স্থানীয়রা।
ধর্মপুর বাসস্ট্যান্ডে এ দিন অপেক্ষা করছিলেন কয়েক জন যাত্রী। আচমকা এলাকায় জল ঢুকতে থাকে এবং তাঁদের চোখের সামনেই ভেসে যেতে যায় ছোট ছোট গাড়িগুলি। এমন দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত ওই যাত্রীরা ছোটাছুটি শুরু করে দেন। শেষে বাসস্ট্যান্ডের দোতলায় গিয়ে আশ্রয় নেন তাঁরা।
প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রায় পঞ্চাশটি দোকানে জল ঢুকে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে দোকানের জিনিসপত্রও। বেশ কিছু গাড়ি ভেসে গিয়েছে। সব মিলিয়ে হড়পা বানে প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে।
হিমাচল প্রদেশ শুধু নয়, একটানা বৃষ্টিতে জেরবার ভূস্বর্গও। ফুঁসছে নদীগুলিও। লাদাখের কাছে আটকে পড়েছিলেন ২১ জন ব্রিটিশ এবং এক ফরাসি ট্রেকার। লেহ-তে বায়ুসেনা দফতরে বার্তা পৌঁছতেই ট্রেকারদের উদ্ধারে তৎপর হন বায়ুসেনা। এর পর থিনলেস্পা গ্রামের কাছে হঠাৎই পাইলটরা দেখতে পান ওই ট্রেকারদের। পর্বতারোহীদেরও নজরে আসে সেনা হেলিকপ্টারটি। সঙ্গে সঙ্গে বায়ুসেনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তাঁরাও নানা রকম সঙ্কেত পাঠাতে থাকেন। এর পর সেখান থেকেই তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
ব্যাপক বৃষ্টির জেরে গত কাল উধমপুর জেলায় ধস নামে। ধসের কারণে গত রাত থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক। প্রবল দুর্যোগে আজ জম্মু বেসক্যাম্পেই স্থগিত রাখা হয়েছে অমরনাথ যাত্রা। তবে রাস্তা সাফ করতে নেমেছেন সীমান্ত সড়ক সংস্থার (বিআরও) কর্মীরা। খুব তাড়াতাড়িই পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক হবে বলে আশা তাঁদের।