জলমগ্ন গুয়াহাটি। ছবি: পিটিআই।
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি। বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অসম এবং অরুণাচল প্রদেশে। ফুলেফেঁপে উঠেছে একের পর এক নদী। রবিবার অসম-অরুণাচল সীমান্তে বোমজির নদী থেকে ১৪ জনকে উদ্ধার করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। প্লাবনে আটকে পড়েছিলেন তাঁরা। জনজীবন বিপর্যস্ত ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাতেও। সেখানে হড়পা বান এসেছে বারে বারে। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সিকিম। যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন বহু এলাকা। উত্তর সিকিমে আটকে পড়া পর্যটকদের এখনও উদ্ধার করা যায়নি। অসম, অরুণাচল, সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী এবং মণিপুরের রাজ্যপালকে রবিবার ফোন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
অসম-অরুণাচল সীমান্তে বোমজির নদীতে আটকে পড়েছিলেন প্রায় ১৪ জন বাসিন্দা। অসমের তিনসুকিয়া জেলা কমিশনার স্বপ্নিল পাল জানান, তাঁর অনুরোধে রবিবার সকালে উদ্ধারকাজে নামে বায়ুসেনা। ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে টানা বৃষ্টির কারণে নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কারণে কয়েক জন আটকে পড়েন। তাঁদের উদ্ধারের জন্য বায়ুসেনা এবং অরুণাচল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসন।’’ আর এক সরকারি আধিকারিক জয়দীপ রজক জানিয়েছেন, আটকে পড়া ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন তিনসুকিয়ার বাসিন্দা। বাকি এক জন অরুণাচলের। তাঁদের নিরাপদে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এই উদ্ধারকাজের জন্য ভারতীয় বায়ুসেনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
অসম, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, মিজ়োরামের মতো রাজ্যগুলিতে গত দু’দিনে শুধু বৃষ্টির কারণেই মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩০ জনের। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ধসে ভেসে গিয়েছে অসম এবং মেঘালয়ের সংযোগকারী ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ। এর ফলে তুরা থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। অসমে বন্যার প্রভাব পড়েছে ১৫টি জেলার ৭৮ হাজার বাসিন্দার জীবনে। মণিপুরে প্রায় তিন হাজার মানুষ বিপর্যস্ত। গত ৪৮ ঘণ্টায় ভেঙে পড়েছে ৮৮৩টি বাড়ি।
অন্য দিকে, টানা দু’দিনের বৃষ্টির ত্রিপুরার সব নদীতেই জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে রাজধানী আগরতলা ছাড়া অন্য কোথাও বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। শহরের হাওরা নদীতে ইতিমধ্যে জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। রবিবার নিজের সব কর্মসূচি বাতিল করে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। শনিবার রাতে টানা তিন ঘণ্টা বৃষ্টির পরে তাঁর সরকারি বাসভবন যেখানে রয়েছে, সেই এলাকা জলে ডুবে গিয়েছে।
পশ্চিম ত্রিপুরা প্রশাসন ২৮টি ত্রাণশিবির খুলেছে। তার মধ্যে ২৫টি আগরতলায়। সেখানে ৬,০০০ জনকে পাঠানো হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ত্রিপুরায় বর্ষার বৃষ্টি হচ্ছে, যা স্বাভাবিক। তাই এখনই বড় কোনও বন্যার আশঙ্কা নেই। মৌসম ভবন জানিয়েছে, আগামী এক সপ্তাহ মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি চলবে রাজ্যে। আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি।’’