National News

ক্যানসার থেকে অবসাদ, আত্মঘাতী পুলিশকর্তা

২৬/১১-র আগে মার্কিন নাগরিক ডেভিড হেডলি যে মুম্বইয়ে এসে রেকি করেছিল, সেটাও হিমানশুর তদন্তেই সামনে আসে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ১৫:৪৭
Share:

বছর চারেক মহারাষ্ট্র এটিএস-এর প্রধান ছিলেন তিনি। বর্তমানে মহরাষ্ট্র পুলিশের এডিজি পদে ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত।

নিয়মিত শারীরচর্চা করতে ভালবাসতেন। বলিষ্ঠ আর সুঠাম চেহারার জন্য ডাকাবুকো এই পুলিশ অফিসারের আলাদা পরিচিতি ছিল। তিন বছর ধরে লড়ছিলেন ক্যানসারের সঙ্গে। কিন্তু ওয়ার্কআউটে ছেদ পড়েনি কখনও। মহারাষ্ট্রের তাবড় তাবড় রহস্য মামলার সমাধানকারী সেই অফিসার হিমানশু রায় আজ দুপুরে নিজের বাড়িতে আত্মঘাতী হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ দুপুর দেড়টা নাগাদ দক্ষিণ মুম্বইয়ের নরিম্যান পয়েন্টের বাড়িতে নিজের সার্ভিস রিভলবার থেকে গুলি চালান হিমানশু। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। সামনের মাসে তাঁর বয়স হত ৫৫। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, মা।

Advertisement

আইপিএল বেটিংয়ের তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে হত্যা মামলা, বলিউড অভিনেত্রী লায়লা খান আর তাঁর পাঁচ আত্মীয়ের হত্যা রহস্য, আইনজীবী পল্লবী পুরকায়স্থের হত্যা মামলার মতো অনেকগুলি ‘হাই প্রোফাইল’ মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন হিমানশু। ২৬/১১-র আগে মার্কিন নাগরিক ডেভিড হেডলি যে মুম্বইয়ে এসে রেকি করেছিল, সেটাও হিমানশুর তদন্তেই সামনে আসে।

১৯৮৮ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসার মহারাষ্ট্র পুলিশের অনেক বড় বড় পদ সামলেছেন। এক সময় মহারাষ্ট্র সন্ত্রাস দমন শাখার (এটিএস) প্রধান ছিলেন তিনি। মুম্বইয়ের অপরাধ দমন শাখার প্রধানের পদও সামলেছেন। ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ছিলেন হিমানশু। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ছিলেন মহারাষ্ট্র পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি। হিমানশু যখন এটিএস প্রধান, সেই সময় বান্দ্রা-কুরলা কমপ্লেক্সের মার্কিন স্কুলে হামলার ছক বানচাল করেন তিনি। ধরা পড়ে মূল চক্রী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আনিস আনসারি।

Advertisement

২০১৬ সাল থেকে অসুস্থতার জন্য ছুটিতে ছিলেন হিমানশু। তাঁর সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, এই মারণ রোগ ধরা পড়ার পরেও গোটা একটা বছর নিয়মিত ডিউটিতে আসছিলেন তিনি। তবে শেষ দু’বছর আর অফিস আসতে পারছিলেন না। যন্ত্রণা বাড়ছিল ক্রমশ।

আরও পড়ুন: শ্রীদেবীর মৃত্যু-তদন্তে নাক গলাব না, বলল সুপ্রিম কোর্ট

মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার অরূপ পট্টনায়ক হিমানশু মৃত্যুতে স্তম্ভিত। তাঁর কথায়, ‘‘হিমানশু খুব বুদ্ধিমান অফিসার ছিলেন। খুব মার্জিত ব্যবহার ছিল। সব সময় মুখে হাসি লেগে থাকত।’’ তিনি জানালেন, হিমানশুর শরীর প্রথমে ফুলতে শুরু করায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেন তিনি। ধরা পড়ে তাঁর হাড়ে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে অসুখের সঙ্গে লড়ে অফিস করলেও পরে আর টানতে পারছিলেন না, তাই ছুটি নেন। অরূপের কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে ওর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। মাসখানেক আগেই আমায় জানিয়েছিল, এই যন্ত্রণা আর নিতে পারছে না। ওর জন্য প্রার্থনা করতে বলেছিল। অন্য এক বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্যও বলেছিল। আমি এক ডাক্তারের কথা বলি। ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ক্যানসার হিমাংশুর মাথায় ছড়িয়ে পড়েছে।’’ মুম্বইয়ের প্রাক্তন কমিশনারের ব্যাখ্যা, ‘‘হয়তো ও বুঝে গিয়েছিল, এই লড়াই জেতা সম্ভব নয়। অসহ্য যন্ত্রণার কাছে অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে তাই।’’

হিমানশুর মৃত্যুর পরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল ফরেন্সিকের দল। তবে মুম্বই পুলিশ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, অসুস্থতার কারণে চূড়ান্ত অবসাদ আর হতাশায় ভুগছিলেন অত্যন্ত সাহসী এই অফিসার। সুইসাইড নোটেও সে কথাই লিখে গিয়েছেন হিমানশু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন