অপেক্ষা শুধু অন্ধকার নামার। সেই সুযোগেই ফের সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে ভারতের সীমান্তে হামলা চালাল পাক সেনা।
বিএসএফ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টো নাগাদ চমকাই সীমান্তের ও পার থেকে গুলিবৃষ্টি শুরু হয়। পরে ধেয়ে আসে মর্টারও। পাল্টা জবাব দেয় ভারতীয় সেনাও। সারা রাত ধরে চলে সেই যুদ্ধ। কোনও সেনা হতাহত না হলেও শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এই হামলায় মৃত্যু হয়েছে সীমান্তবর্তী গ্রামের চার বাসিন্দার। আহতের সংখ্যা প্রায় ২০। সকলেই চিকিৎসাধীন। সেনা সূত্রের খবর, দু’ক্ষেপে হামলা চালায় পাক সেনা। রাতে আর এস পুরার অন্তর্গত কিষাণপুর, জোড়া ফর্ম, জুগনু চক, নওয়াপিন্ড, ঘর্না, সিয়া, আবদুলিয়ান, চান্দু চক-সহ একাধিক গ্রামে পড়তে থাকে গোলা ও মর্টার। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ সেই হামলা চালানো হয় আর্নিয়া সেক্টরে। কমপক্ষে ১২টি সেনাঘাঁটিও একই সঙ্গে হামলার লক্ষ্যে ছিল বলে জানিয়েছে বিএসএফ। বাহিনীর মুখপাত্র রাকেশ কুমার শর্মা জানান, যে ভাবে ঘনঘন মর্টার ও গোলাবর্ষণ হয়েছে এবং যে দুরত্বে সেগুলি গিয়ে পড়েছে, তাতে উন্নত মানের স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
ঘটনার বিবরণ দিলেন আর এস পুরার বছর চব্বিশের মোহন লাল। মাঝরাতে তাঁর বাড়িতে পড়ে একটি মর্টার। ঘটনাস্থলেই মারা যান তাঁর স্ত্রী। আহত হয় দুই সন্তান। বিএসএফ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আরও দু’জনের। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় এক জনের। আজ আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান জম্মু ও কাশ্মীরের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান যে ভাবে সন্ত্রাসকে ব্যবহার করছে, তাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র বলে চিহ্নিত করা উচিত।’’
সম্প্রতি একাধিক বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে পাক সেনার বিরুদ্ধে। ১৫ অগস্টের পাক হামলায় জম্মুর পুঞ্চে মহিলা ও শিশু-সহ মৃত্যু হয় ছ’জনের। গত মঙ্গলবারও পাক হামলার মোকাবিলা করতে গিয়ে শহিদ হন ভারতীয় এক সেনা অফিসার। সেনা রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় আড়াইশো বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। জম্মুর ডিভিশনাল কমিশনার পবন কোটওয়াল জানান, বার বার হামলার জেরে সন্ত্রস্ত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারা। আতঙ্কে ঘরছাড়া প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দা। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন সেনা ক্যাম্পে। কেউ বা পালিয়েছেন নিজের আত্মীয়ের বাড়ি।
ভারতকেই তোপ পাকিস্তানের
ভারত ১০ হাজার কোটি মূল্যের হাতিয়ার কিনেছে যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশই পাকিস্তানে হামলার জন্য — দেশের প্রতিরক্ষা কমিটিকে জানাল পাক সেনাবাহিনী। একটি রিপোর্টে পাকিস্তানের সেনেট প্রতিরক্ষা কমিটি জানিয়েছে, বাইরে থেকে আক্রমণ চালাতে পারে এক মাত্র ভারতই। পাক সেনার দাবি, সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে প্রথমে আক্রমণ চালায় ভারতই। তাতে সিয়ালকোট সীমান্তের কাছে মৃত্যু হয় ছ’জন পাক নাগরিকের। পাক সেনার এই অভিযোগের ভিত্তিতে আজ ভারতীয় হাই কমিশনার টিসিএ রাঘবনকেও তলব করে পাক সরকার।