ধর্ম আলাদা, অটুট বন্ধুত্ব ২৫ বছরের

পঁচিশ বছর আগে হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারান চমন লাল। তাঁর ভাইয়েরা কাজের খোঁজে একে একে ঘর ছাড়ার পরে জ়ায়ানপোরার বাড়িতে একাই থেকে গিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। দৃষ্টিশক্তি নেই, ফলে চার দেওয়ালের বাইরে পা রাখার ক্ষমতাও হারিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৪০
Share:

দুই বন্ধু, চমন লাল এবং মহম্মদ আনওয়ার মির। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে

প্রত্যেক দিন বিকেল হতেই পোশাক বদলে দরজার দিকে চোখ রাখেন ৬২ বছরের দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ চমন লাল। বন্ধু মহম্মদ আনওয়ার মীরের অপেক্ষায়। দীর্ঘ ২৫ বছরে এক দিনের জন্যেও এই কাশ্মীরি পণ্ডিত চমন লালের অপেক্ষা ব্যর্থ হতে দেননি তাঁর সেই ভিন্‌ধর্মী বন্ধু। চমন লালের বাড়ি দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানের জ়ায়নাপোরায়। বছর সত্তরের মীর থাকেন সেখান থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে বাবাপোরায়। রোজ ওই পথ পেরিয়ে দৃষ্টিহীন চমন লালকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে বেরোন মীর। রাস্তায় পথচলতি মানুষের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা, গল্পগুজবে মেতে ওঠা। এ ভাবে পেরিয়ে যায় ঘণ্টা দু’য়েক। সফর শেষে বন্ধুকে ফের বাড়ি পৌঁছে নিজের বাড়ির পথ ধরেন মীর।

Advertisement

পঁচিশ বছর আগে হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারান চমন লাল। তাঁর ভাইয়েরা কাজের খোঁজে একে একে ঘর ছাড়ার পরে জ়ায়ানপোরার বাড়িতে একাই থেকে গিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। দৃষ্টিশক্তি নেই, ফলে চার দেওয়ালের বাইরে পা রাখার ক্ষমতাও হারিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ে ভরসা হয়ে পাশে এসে দাঁড়ান তাঁর ছোটবেলার বন্ধু মীর। চমন লালের কথায়, ‘‘মীরের কাঁধে হাত রাখতেই আমার মধ্যে সিংহের আত্মবিশ্বাস জেগে ওঠে!’’ মীর কখন আসবেন বোঝেন কী করে? ‘‘দেখতে পাই না ঠিকই। কিন্তু ওঁর আসার সময় হলে ঠিক বুঝতে পারি। ওঁর ঘরে ঢোকার আওয়াজ পেতেই মনটা ভাল হয়ে যায়।’’ স্থানীয়দের কাছে ‘দুনিয়ার অষ্টম আশ্চর্য’ নামেই পরিচিত মহম্মদ আনওয়ার মীর এবং চমন লালের এই বন্ধুত্ব। জ়ায়ানপোরায় যে এলাকায় লালের ছোট এক তলা বাড়ি সেখানে হিন্দুরা এখন সংখ্যালঘু। চমন লাল ছাড়া বাস পাঁচটি পণ্ডিত পরিবারের। তবে সকলেই মিলেমিশে থাকেন। ধর্মের ভিন্নতা সেখানে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ঠিক যেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি, মীর এবং চমন লালের এই সৌহার্দ্যের সম্পর্কেও। শুধু শুক্রবার নমাজ পড়তে অনেকটা সময় কেটে যায় বলে বন্ধুর কাছে আসতে পারেন না মীর। তা ছাড়া ঝড়-জল-বৃষ্টি বা অসুস্থতা, এত বছর কোনও কিছুই চমন লালের বাড়ি আসা থেকে আটকাতে পারেনি মীরকে। প্রতিবেশী মহম্মদ ইসমাইল মালিকের কথায়, ‘‘মীরকে বার বার বলি, আবহাওয়া বা শরীর খারাপ থাকলে বেরোতে হবে না। কিন্তু তিনি শুনলে তো! তাঁর মুখে ওই এক কথা, চমন লাল অপেক্ষা করে রয়েছে। ওঁকে নিয়ে হাঁটতে যেতে হবে...’’

শুধু হাঁটতেই নয়, বিয়েবাড়ি, হাসপাতাল বা অন্য যে কোনও জায়গায় যেতে হলে চমন লালই মীরের একমাত্র ভরসা। এই বয়সেও বন্ধুর জন্য এতটা করার শক্তি পান কোথা থেকে? জবাব দিতে গিয়ে মীরের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘হজরত মহম্মদই আমার আদর্শ। তিনি যখন সকলের জন্য এতটা ভাবতে, করতে পারতেন তবে আমি কেন চেষ্টা করব না?’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন