শোকস্তব্ধ।
অঝোর বৃষ্টিতেও দাঁড়িয়ে কাতারে কাতারে লোক। গোটা গ্রাম ভেঙে পড়েছে ঘরের ছেলেকে শেষ দেখার জন্য। এমনটা এখানে শেষ কবে হয়েছিল, মনে পড়ে না বাসিন্দাদের। ভিড়ের মধ্যে ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার মতো ব্যক্তিত্বও। শুজাত বুখারির পৈতৃক বাড়ি বারামুলার ক্রিরি গ্রামে। সেখানেই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীরা বিদায় জানালেন প্রবীণ সাংবাদিককে।
শুজাতের বাবা রফিউদ্দিন বুখারি হাজারেরও বেশি ভিড়টার উদ্দেশে বললেন, ‘‘আমাদের এ-ও সহ্য করতে হবে। এই শূন্যতা কখনওই পূরণ হওয়ার নয়। আমি শুধু বলতে পারি, যে পথ ও বেছে নিয়েছিল, সেটা যতটা মহৎ, ততটাই কাঁটায় ভরা।’’ তিনি জানিয়েছেন, ‘রাইজ়িং কাশ্মীর’-এর মতো দৈনিকের পাশাপাশি চলতে থাকবে শুজাতের হাতে তৈরি অন্য প্রকাশনাগুলির কাজও। ছেলের পথ থেকে এক চুলও সরতে আগ্রহী নন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবা। রফিউদ্দিনের পাশেই ছিলেন শুজাতের স্ত্রী আর স্কুলপড়ুয়া দুই ছেলেমেয়ে। নিষ্পলক চোখগুলো দেখেছে বাবার কফিনবন্দি দেহ এগিয়ে চলেছে অন্ত্যেষ্টির পথে।
যেখানে মহিলারা বুক চাপড়ে কাঁদছেন। তরুণরা এই নৃশংস হত্যার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। বৃষ্টি বাঁধ মানছে না। ভিড়ের মধ্যে শুজাতের সাংবাদিক বন্ধুদের মধ্যে গুঞ্জন, ‘‘এ বার হয়তো আমরাও আর সুরক্ষিত নই।’’ বাড়ি থেকে চাপ আসছে অনেকের উপরে, কাজ ছেড়ে দাও।
শোকস্তব্ধ: অন্ত্যেষ্টির পথে উপচে পড়েছে ভিড়। শুক্রবার বারামুলার ক্রিরি গ্রামে। ছবি: পিটিআই।
শুজাতের দৈনিক সে কথা ভাবতেও পারে না। বৃহস্পতিবারের ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের পরেও নিয়ম মেনে শুক্রবার কাগজ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম পাতা জোড়া সদ্য প্রয়াত প্রিয় সম্পাদকের সাদা-কালো ছবি। পরে লেখা, ‘‘বড় দ্রুত চলে গেলেন। আপনি সব সময় আমাদের পথ দেখানোর আলো হয়ে থাকবেন। আপনার পেশাগত দৃঢ়তা এবং ব্যতিক্রমী সাহসের কথা ভুলব না। যে কাপুরুষরা আপনাকে ছিনিয়ে নিয়েছে, তাদের হুমকির কাছে আমরা মাথা নোয়াবো না। সত্য যতই অপ্রিয় হোক, তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আপনার নীতি মেনে চলব... চিরশান্তিতে থাকুন।’’
শুজাতের গ্রামের বাড়িতে যান ওমর আবদুল্লা। তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁর সহকর্মীরা যে এই অসম্ভব যন্ত্রণার মধ্যেও কাগজ বার করেছেন, সেটাই তাঁদের পেশার প্রতি নিষ্ঠা এবং শুজাতের প্রতি শ্রদ্ধার প্রমাণ।’’ ওমরের পাশাপাশি পিডিপি এবং বিজেপির কয়েক জন মন্ত্রীও গিয়েছিলেন ক্রিরির বাড়িতে।