ফাঁসির বদলে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের প্রথা চালুর আর্জি সুপ্রিম কোর্টে। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত নয়। মৃত্যুদণ্ডের জন্য ফাঁসির বদলে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন চালুর এক আর্জিতে এক মামলায় এমনটাই জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার মামলার শুনানিতে ফাঁসির বদলে অন্য কোনও উপায় চালু করার ক্ষেত্রে আপত্তি জানায় কেন্দ্র। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা দেওয়ার জন্য প্রাণঘাতী ইনজেকশনের ব্যবহার ‘খুব বেশি কার্যকরী’ না-ও হতে পারে মনে করছে কেন্দ্র।
মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি বদল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে মামলার শুনানি ছিল। সেখানে মামলাকারী আইনজীবী সওয়াল করেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের অন্তত একটি বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হবে, নাকি প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে— আসামিকে তা বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য আর্জি জানান তিনি।
মামলকারী ওই আইনজীবী আদালতে বলেন, “সবচেয়ে ভাল উপায় হল প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন দেওয়া। আমেরিকায় ৫০টির মধ্যে ৪৯টি প্রদেশে প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন দেওয়ার পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।” তিনি আরও সওয়াল করেন, কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানোর বিষয়টি নিষ্ঠুর এবং বর্বর। কারণ, আসামির দেহ প্রায় ৪০ মিনিট ধরে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সেই তুলনায় প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পদ্ধতি তুলনামূলক ভাবে ‘দ্রুত, মানবিক এবং শালীন’।
বিচারপতি মেহতা তখন কেন্দ্রের আইনজীবীকে এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন। তবে কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, ইতিমধ্যে কেন্দ্র একটি জবাবে জানিয়েছে এই বিকল্পের ব্যবস্থা করা খুব একটা সম্ভব না-ও হতে পারে। তখন বিচারপতি মেহতার পর্যবেক্ষণ, “সমস্যা হল, সরকার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আনার জন্য প্রস্তুত নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে।” বস্তুত, এ বিষয়ে কেন্দ্রের একটি হলফনামার বিষয়ে উল্লেখ করেন আইনজীবী। তিনি জানান, হলফনামায় বলা হয়েছে, এটি একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার সরকারের রয়েছে।
এ বিষয়ে ২০২৩ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশের কথাও উল্লেখ করেন আইনজীবী। ওই নির্দেশ অনুসারে, অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমনি জানিয়েছিলেন, সরকার এই বিষয়গুলিকে পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা ভাবছে। কেন্দ্রের আইনজীবী জানান, ওই কমিটির বিষয়ে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি সরকারের থেকে জানবেন। আগামী ১১ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।