ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন দেশের মানুষ কাজের জন্য অন্য দেশে যাবেন। এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না বলে সওয়াল করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় যোগ দিতে আমেরিকায় গিয়েছেন তিনি। সেখানেই একটি আলোচনাসভায় তিনি জানান, ‘আন্তর্জাতিক শ্রমশক্তি একটি বাস্তবতা। অন্য দেশের শ্রমিক কাজের জন্য কোথায় থাকবে, কেন থাকবে, তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বাস্তবতা অস্বীকার করে পালানো যায় না বলে জানান জয়শঙ্কর। বিদেশমন্ত্রী এক বারও নির্দিষ্ট কোনও দেশ বা ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি। তবে মনে করা হচ্ছে, আদতে ট্রাম্প এবং এইচ-১বি ভিসা নিয়ে আমেরিকার সাম্প্রতিক নির্দেশিকার দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, “বিশ্বের শ্রমশক্তি কোথায় থাকবে, তা রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় হতে পারে। কিন্তু এখান থেকে চলে যাওয়ার পথ নেই। যদি আপনি চাহিদা এবং জনবিন্যাসের দিকে তাকান, দেখবেন অনেক দেশেই যা জনবিন্যাস, তা দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে না।” মনে করা হচ্ছে, এ কথা বলে জয়শঙ্কর আদতে বোঝাতে চেয়েছেন, বহু দেশে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীর সংখ্যা অপ্রতুল। তাই উৎপাদন এবং কাজের চাহিদা মেটাতেই ভিন্দেশের শ্রমিক নিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে।
এইচ-১বি এক ধরনের অ-অভিবাসী ভিসা। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীরা সাময়িক ভাবে আমেরিকায় থেকে সেখানকার সংস্থাগুলির হয়ে কাজ করতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে এইচ-১বি ভিসার মেয়াদ থাকে তিন বছর। সর্বোচ্চ ছ’বছর পর্যন্ত তা বৃদ্ধি করা যায়। এই সময়ের মধ্যে আমেরিকার গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন কর্মীরা। গ্রিন কার্ড বা স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে এইচ-১বি ভিসার মেয়াদ ইচ্ছামতো বৃদ্ধি করা যায়। এইচ-১বি ভিসা নিয়ে শুক্রবার নতুন নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এ বার থেকে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ করতে গেলে মার্কিন সংস্থাগুলিকে বাড়তি অর্থ দিতে হবে। বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যেক ব্যক্তিপিছু এককালীন এক লক্ষ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) নেবে ট্রাম্প সরকার। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এই মুহূর্তে আমেরিকায় এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় কর্মীরা। গত বছর ভারত থেকে ৭১ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। হোয়াইট হাউসের এই নির্দেশিকার পরেই মার্কিন মুলুকে কর্মরত অ-অভিবাসী কর্মীরা দ্রুত আমেরিকায় ফিরতে থাকেন। মেটা, অ্যামাজ়ন-এর মতো সংস্থার তরফেও কর্মীদের আমেরিকা থেকে না-যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়, এইচ-১বি ভিসার জন্য যাঁরা নতুন করে আবেদন করছেন বা করবেন, তাঁদের জন্যই নিয়োগকারী সংস্থাকে ওই পরিমাণ টাকা দিতে হবে। ইতিমধ্যেই যাঁদের কাছে ওই ভিসা রয়েছে, তাঁদের টাকা দিতে হবে না। তার পরেও অবশ্য আশঙ্কা কাটছে না অনেকেরই। ট্রাম্প যে ঘুরপথে অন্য দেশের কর্মীদের জন্য আমেরিকার দরজা বন্ধ করতে চাইছেন, তা স্পষ্ট। এই আবহে জয়শঙ্কর আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসনকে বাস্তবতার কথা স্মরণ করালেন বলে মনে করছেন অনেকে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আমেরিকায় অভিবাসন নীতি আরও কড়া হয়েছে। কাজের জন্য ভারতেও বৈধ এবং অবৈধ ভাবে অনেকে আসেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ভারতের অবস্থানও বেশ কড়া। সে দিক থেকে দেখলে জয়শঙ্করের ওই মন্তব্য স্ববিরোধী কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।