হার মেনেও লড়াইয়ের ডাক গগৈয়ের

নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই সাংবাদিক বৈঠক করতেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। ভোটের দিন সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০২:৫২
Share:

ফল ঘোষণার আগে গুয়াহাটির বড়া মসজিদে তরুণ গগৈ। ছবি: পিটিআই।

নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে প্রায় প্রতি দিনই সাংবাদিক বৈঠক করতেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। ভোটের দিন সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশনের কোপে পড়েন তিনি।

Advertisement

আজ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি শেষ বারের মতো সাংবাদিক বৈঠক করলেন। সম্ভবত তাঁর সব চেয়ে কম সময়ের সাংবাদিক বৈঠক ছিল এটি।

হৃদরোগ, পেটের সমস্যায় ভুগে শরীর আগেই ভেঙে পড়েছিল। মনের জোরে অশীতিপর নেতা দলের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছিলেন। আশা ছিল, চতুর্থ বারের জন্যে তিনিই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হবেন। দাবি করেছিলেন, তাঁর হিসেব কখনও ভুল হয় না। কিন্তু সব হিসেব গড়বড় করে বিজেপি ঢেউ কেড়ে নিল তাঁর গদি। গগৈ অবশ্য জানিয়ে গেলেন— সন্ন্যাস নয়, ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করতে তৈরি তিনি।

Advertisement

কঠিন সময় দলের সভাপতি হিসেবে তরুণ গগৈকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ইন্দির গাঁধী। ২০০১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে রাজনীতি-কূটনীতির মিশেলে দল ও রাজ্যকে স্থিতি দিয়েছিলেন গগৈ। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, তিন দফায় ক্ষমতা দখলের পরে গগৈ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন। নির্ভর করতে থাকেন নিজের পছন্দের পারিষদদের উপরে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয় ছেলে গৌরব গগৈকে রাজ্যের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা শুরু করায়। এ নিয়ে হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে তাঁর বিরোধ শুরু হয়। ৫৪ জন বিধায়ক গগৈকে সরানোর জন্য এআইসিসিকে চিঠিও দেয়। কিন্তু কংগ্রেস হাইকম্যান্ড গগৈয়ের উপরেই আস্থা রাখে। শেষ পর্যন্ত ৯ বিধায়ককে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন হিমন্ত। এক দিকে দুর্বল হয়ে পড়ে দল, অন্য দিকে বিদ্রোহ সামলে দিয়েছেন ভেবে নিজেকে আরও অপরাজেয় বলে ভাবতে শুরু করেন গগৈ। মন্ত্রিসভার উপরে তাঁর নিয়ন্ত্রণও কমতে থাকে।

কেন্দ্র রাজ্যের বিরুদ্ধে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট না দেওয়ার অভিযোগ তোলে। আইন-শৃঙ্খলায় অবনতি হয়। রুমি নাথ, প্রাণজিৎ চৌধুরিদের মতো নেতারা বিভিন্ন মামলায় ফেঁসে যান। গন্ডার হত্যা ঠেকাতে রাজ্য ব্যর্থ হয়। বিভিন্ন মন্ত্রী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কাছের মন্ত্রীদের হঠকারি মন্তব্য জনমানসে বিরূপ প্রভাব ফেলে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেননি গগৈ। ‘বাদ দিয়া হে’ বলে সব অভিযোগ, প্রতিবাদ, বিদ্রোহ, ক্ষোভ উড়িয়ে দিতে থাকেন তিনি। ওই কথা গোটা রাজ্যের মুখে মুখে ঘুরত। ওই মন্তব্যকেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে বিজেপি। কংগ্রেস নেতাদের একাংশের মতে, একাংশ আমলা ও কাছের লোকের উপরে অতিরিক্ত ভরসা, পুত্রস্নেহ এবং অহংই গগৈকে অন্ধ করে রেখেছিল। তাই পরাজয়ের আঁচ পাননি তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্তও সংগঠনকে তেমন মজবুত করতে পারেননি। নিজেকে উজানি অসমের রাজা বলে ভাবতে শুরু করা রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ পরিষদীয় সচিব ভূপেন বরাও নিজের কেন্দ্রে হেরে যান। কোনওক্রমে জিতে মুখরক্ষা করেন আপাতত গগৈয়ের ডান হাত বলে পরিচিত রকিবুল হুসেন।

গত বার ৫২ হাজার ভোটে জেতা গগৈ এ বার তিতাবরে সাংসদ কামাখ্যাপ্রসাদ তাসাকে মাত্র ১৭ হাজার ১৫৩ ভোটে হারান। দলের আসন সংখ্যা সম্পর্কে গগৈ বা অঞ্জনবাবুর কোনও হিসেব বা ভবিষ্যৎবাণী মেলেনি। ফল ঘোষণার চার দিন আগে এক সময় গগৈয়ের প্রধান সেনাপতি হিমন্ত বিভিন্ন দলের আসনের যে হিসেব দিয়েছিলেন তার প্রতিটি সংখ্যা আশ্চর্য ভাবে মিলে গিয়েছে। এ দিন পরাজয় মাথা পেতে নিয়ে গগৈ বলেন, “মানুষ আমাদের বিরোধী আসনে বসার দায়িত্ব দিয়েছেন। সংগঠিত, ইতিবাচক বিরোধিতা ও মানুষের সেবা করার আদর্শ মেনে চলব আমরা।” বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। পরাজয়ে খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু আমি হতাশ নই। আমাদের নিশ্চয় কোথাও ভুল হয়েছিল। পরাজয়ের সব কারণ বিচার করে ফের নতুন করে লড়াই শুরু করা হবে।”

নির্বাচনে হারলে গগৈ রাজনৈতিক জীবন থেকে সন্ন্যাস নেবেন বলে চর্চা চলছিল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে গগৈ জানান তিনি রাজনৈতিক মঞ্চে সক্রিয় থাকছেন। সর্বানন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে গগৈ বলেন, “অচ্ছে দিন-এর আশায় বিজেপি জোটকে ক্ষমতায় এনেছে মানুষ। আশা করি বিজেপি সেই আশা পূরণ করতে পারবে।” আজমলের সঙ্গে হাত না মেলানোয় কি এই পরাজয়? ভবিষ্যতে কি এআইইউডিএফের সঙ্গে হাত মেলানোর সম্ভাবনা আছে? গগৈ স্পষ্ট জানান, আজমলের সঙ্গে তিনি কিছুতেই হাত মেলাবেন না।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে সাময়িক ভাবে কয়নাধারার সরকারি অতিথিশালায় ছিলেন গগৈ। পরে তাঁর জন্য অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা হলেও বেজায় পছন্দ হওয়ায় কয়নাধারা ছেড়ে যেতে রাজি হননি গগৈ। সেটাই এখন মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন বলে পরিচিত। পরাজয়ের পরে হয়ত সেই পছন্দের ঠাঁই ছেড়েও চলে যেতে হবে তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন