ছেলেধরা সন্দেহে কর্নাটকে গুগলের ইঞ্জিনিয়ারকে পিটিয়ে খুন

ফের ছেলেধরার গুজব। ফের গণপিটুনিতে নিহত নির্দোষ। কর্নাটকে এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করে দিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে যতই বার্তা দিক সরকার, জনমানসে তার প্রভাব পড়েনি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫০
Share:

মহম্মদ আজ়ম

ফের ছেলেধরার গুজব। ফের গণপিটুনিতে নিহত নির্দোষ। কর্নাটকে এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করে দিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে যতই বার্তা দিক সরকার, জনমানসে তার প্রভাব পড়েনি।

Advertisement

২৮ বছরের মহম্মদ আজ়ম হায়দরাবাদের গুগলে কাজ করতেন। সম্প্রতি গাড়ি কিনেছিলেন। তাতে নম্বর প্লেটও বসেনি। কাতার থেকে আসা বন্ধু মহম্মদ সালাম ও দুই সম্পর্কিত ভাইকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন লং ড্রাইভে। গন্তব্য, ১৩০ কিলোমিটার দূরে কর্নাটকের বিদার। ফেরার পথেই হামলা হয় তাঁদের উপর।

তখন বিকেল। গ্রামের রাস্তায় নেমে বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড়ের কিছু ছবি তুলতে চেয়েছিলেন ওঁরা। কাছেই খেলছিল স্থানীয় কিছু ছেলেমেয়ে। ভাব জমাতে পকেট থেকে বিদেশি চকলেট বার করে সালাম। ঘটনাটি চোখে পড়ে যায় কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দাদের। আর তাতেই বিপত্তি।

Advertisement

গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় বিভিন্ন হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে ছেলেধরা সংক্রান্ত গুজব ছ়ড়াচ্ছিল। আজ়মরা বহিরাগত। চকলেট দিয়ে ছেলেদের সঙ্গে ভাব জমাচ্ছেন। তার উপরে গাড়িতে নম্বর প্লেট নেই। খবরটা হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে দল বেঁধে হাজির হয় গ্রামবাসীরা। আজ়মরা প্রথমে বোঝাতে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু বিপদ বুঝে গাড়িতে উঠে পড়েন আজ়মরা। তত ক্ষণে খবর ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়। মোটরবাইকে চেপে তাঁদের ধাওয়া করতে শুরু করে অনেকে। বিকেল চারটে নাগাদ মুরকি গ্রামের কাছে মোটরবাইকে ধাক্কা মেরে পাশের খালে উল্টে পড়ে গাড়িটি। আজ়মদের টেনে-হিঁচড়ে বার করে শুরু হয় মারধর। আজ়মদের সাহায্য করতে কেউ আসেনি। বরং অনেকেই মোবাইলে ভিডিয়ো আর নিজস্বী তুলেছে। শেষে পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে। হায়দরাবাদের হাসপাতালের নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় আজ়মের। বাকি তিন জনও আশঙ্কাজনক। ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিনকে। পুলিশ জানিয়েছে, যে ভিডিয়োগুলি ছড়িয়েছিল সেগুলি ভুয়ো। একটি ভিডিয়ো পাঁচ বছরের পুরনো। সিরিয়ায় নার্ভ গ্যাসে নিহত শিশুদের ছবি। পরে আজ়মের ভাই আক্রম আক্ষেপ করেন, ‘‘আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই ছিল আমার ভাই। দু’বছরের মেয়ে রয়েছে ওর। ওকে কী করে ছেলেধরা মনে হল!’’

হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে গুজব ছড়ানোয় সম্প্রতি দেশ জুড়ে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন্দ্রের কড়া বার্তা পেয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, তাঁরা দ্রুত পদক্ষেপ করছেন। কর্নাটকের ঘটনা দেখিয়ে দিল, কাজের কাজ ‌কিছুই হয়নি।

(মহম্মদ আজম অ্যাক্সেঞ্চারের কর্মী। গুগলের একটি প্রকল্পে তিনি কর্মরত ছিলেন। এই সংবাদে তাঁকে গুগল ইঞ্জিনিয়ার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা দুঃখিত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement