হাহাকার: মৃত সন্তান বুকে মা। গোরক্ষপুরে। —ফাইল চিত্র
স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তির ঠিক আগের দিন দেখা হয়েছিল জিতেন্দ্র চৌধুরির সঙ্গে। গোরক্ষপুরের বিআরডি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। শূন্য দৃষ্টি। চার দিন আগে ছেলে মারা গিয়েছে। জন্মের পরের দিনই। হাসপাতালের শিশুদের ওয়ার্ডে সে দিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অক্সিজেন সরবরাহ।
গোরক্ষপুরে লোকসভা উপনির্বাচনে বিজেপি হারার পরে ফোনে ধরা গেল জিতেন্দ্রকে। যোগী আদিত্যনাথের দুর্গে হার! জিতেন্দ্রর উত্তর, ‘‘মানুষ কি সব ভুলে গিয়েছে? হাসপাতালে এতগুলো শিশু মারা গিয়েছিল। সেই রাগ থাকবে না?’’
২০১৭-র অগস্টে এক সপ্তাহে গোরক্ষপুরে মৃত্যু হয়েছিল ৬০টিরও বেশি শিশুর। তার মধ্যে ৩০টিরও বেশি শিশু মারা যায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, অক্সিজেনের অভাবে। গোরক্ষপুর লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় এনসেফ্যালাইটিস প্রতি বর্ষাতেই কার্যত মহামারির আকার নেয়। তার মধ্যেই শিশুমৃত্যুতে চরমে ওঠে ক্ষোভ।
জিতেন্দ্রর মতোই এক দিন বয়সি সন্তানের মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন কুশীনগরের অজয় শুক্ল। বললেন, ‘‘সব থেকে অবাক করেছিল যোগীজির নীরবতা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তারদের ঘাড়ে দায় চাপালেন। যোগীজি শুধু কড়া শাস্তি হবে বলেছিলেন। কার শাস্তি হয়েছে জানি না। ওই ঘটনার পরে দু’বার হাসপাতালে আগুন লেগেছে। লোকে বলে, সব ফাইল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যোগীজির উপরে ভরসা ছিল। আর নেই।’’
আরও পড়ুন: হারের দায় কার, দু’পক্ষই কাঠগড়ায়
যোগী শুধু গোরক্ষনাথ মঠের পীঠাধীশ্বর নন, গোরক্ষপুরের মুকুটহীন সম্রাট। ১৯৯৮ থেকে গোরক্ষপুরের সাংসদ ছিলেন। পাঁচ বার জিতেছেন। আগে এখানকার সাংসদ ছিলেন তাঁর গুরু যোগী অবৈদ্যনাথ। যোগী এখন মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে।
তার পরে কি হাসপাতালের উন্নতি হয়েছে? অজয়ের দাবি, ‘‘হয়নি। সমাজবাদী পার্টি ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। সরকারি ক্ষতিপূরণ পাইনি।’’ জিতেন্দ্র জানালেন, সন্তানের মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী রীতুও যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মারা যান ওই বিআরডি হাসপাতালেই। অথচ এই হাসপাতালই গোরক্ষপুর সংলগ্ন পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, লাগোয়া বিহারের জেলাগুলির একমাত্র ভরসা।
অক্সিজেন বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল ছ’বছরের আরুষি সিংহ। তাঁর বাবা বিপিন সিংহ ফোনে বললেন, ‘‘গোরক্ষপুরে রুটি-রোজগারেরই বা সুযোগ কোথায়! দলবলের উৎপাতে হকারি করাও দায়।’’ বুঝে নিতে হল, ‘দলবল’ বলতে যোগীর হিন্দু যুবা বাহিনী।’’ মেয়ের মৃত্যুর পরে বিপিন তুলসিপুরে চলে গিয়েছেন, চিনি-কলে কাজ করতে। সিদ্ধার্থনগরের কিষণ চৌহানও হারিয়েছিলেন আড়াই বছরের ছেলেকে। কাজের খোঁজে তিনিও এখন দিল্লিতে। কিষণের মন্তব্য, ‘‘গোরক্ষপুরের মানুষ এ বার শিক্ষা দিয়েছেন। এটার দরকার ছিল।’’