কর-কমলে: জিএসটি সংক্রান্ত ঘোষণা অরুণ জেটলির। ছবি: পিটিআই।
কর কমানোর আগাম ঘোষণায় সান্তার টুপি মাথায় গলানোর চেষ্টা দিন দুয়েক আগেই করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৯৯% পণ্য-পরিষেবাকেই ১৮% বা তার কম জিএসটির হারে নিয়ে আসার। শনিবার জিএসটি পরিষদের বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানালেন, কর কমছে মোট ২৩টি পণ্য ও পরিষেবায়। যার মধ্যে রয়েছে টিভি, ডিজিটাল ক্যামেরা, জন-ধন প্রকল্পের প্রাথমিক (বেসিক) সেভিংস অ্যাকাউন্টে দেওয়া ব্যাঙ্কিং পরিষেবা থেকে শুরু করে সিনেমার টিকিটও। নতুন হার কার্যকর হবে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে। আর সে জন্য কেন্দ্রের ‘লোকসান’ ৫৫০০ কোটি টাকা।
রাজনীতিকদের অনেকে বলছেন, হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যের ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে আমজনতার মন পেতে এখন কর কমানো নিয়েও প্রচারের স্লেজগাড়ি ছোটাতে চান প্রধানমন্ত্রী। বার্তা দিতে চান মধ্যবিত্ত ভোটব্যাঙ্ককে। টুইটে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীরও কটাক্ষ, ‘‘তিন রাজ্যে জনতার ফয়সালা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে এখন মোদীজি গব্বর সিংহ ট্যাক্সকে জিএসটি বানানোর চেষ্টা করছেন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘জনতা সব বোঝে। গব্বর এ বার তুমি গেলে’’।
তবে শুধু রাজনীতি নয়, অর্থনীতির আঙিনাতেও কিঞ্চিৎ সাড়া পড়েছে জেটলির এ দিনের ঘোষণার পরে। বিশেষজ্ঞদের জিজ্ঞাসা, জিএসটি চালুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। এমনকি ফি মাসে এক লক্ষ কোটি টাকা করে আদায়ের প্রাথমিক যে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল, তা-ও ছোঁয়া সম্ভব হয়নি। তা হলে নতুন করে ৫৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর বোঝা ঘাড়ে নেওয়ার কারণ কী? ব্যালট জোগাড়ের লক্ষ্যেই অর্থনীতির যুক্তিকে পিছনের সারিতে পাঠানো হল বলে অনেকের মত।
আরও পড়ুন: ‘মোদী সরকারকে দেখিয়ে দেব, কী ভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে হয়’, সরব ইমরান
সেই জল্পনা জোরালো হয়েছে খোদ মোদী বিষয়টিকে চড়া সুরের প্রচারে নিয়ে যাওয়ায়। বিরোধীরা বলছেন, গত বছর নভেম্বরে এক লপ্তে জিএসটি কমেছিল কয়েকশো পণ্য-পরিষেবার। শুধু ২৮ শতাংশের চৌহদ্দিতে থাকা পণ্যের সংখ্যাই ২২৮ থেকে নেমে এসেছিল ৫০টিতে। কিন্তু তখনও বিষয়টি নিয়ে এত চর্চা হয়নি। এ বার তা হচ্ছে মোদী একে ৯৯ শতাংশের প্রচারের মোড়কে মুড়ে দেওয়ায়। অথচ অর্থ মন্ত্রকের আমলারাই বলেছেন, ৯৭% পণ্য-পরিষেবায় কর আগেই ১৮% বা তার কম ছিল!
আরও পড়ুন: জিএসটিতে হ্যাপি নিউ ইয়ার, দেখে নিন কিসের কিসের দাম কমছে
অর্থমন্ত্রীর দাবি, কর ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে দাম কমবে বিভিন্ন পণ্য-পরিষেবার। সাধারণ মানুষের তাতে কিছুটা সুবিধা হবে। কাঁচামালের দর কমায় লগ্নিতে উৎসাহিত হবে শিল্প।
সিনেমার টিকিটে কর কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে চলচ্চিত্র শিল্প। আমির খান, অজয় দেবগণ এবং অক্ষয় কুমার ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদীকে। তীর্থযাত্রীদের বিমান ভাড়ায় করহ্রাসেও খুশি অনেকে। আগামী দিনে দরিদ্রের কাছে প্রচারে হয়তো হাতিয়ার হবে জন-ধন প্রকল্পের অ্যাকাউন্টে দেওয়া ব্যাঙ্কিং পরিষেবায় কর একেবারে শূন্য করে দেওয়া।
বাকিরা যাতে না চটে, সে চেষ্টাও স্পষ্ট। বলা হয়েছে, জিএসটির সর্বোচ্চ হারে (২৮%) পণ্য রইল আর মাত্র ২৮টি। যার মধ্যে আছে সিমেন্ট, এয়ার কন্ডিশনার, ডিশ ওয়াশার ইত্যাদি। এর মধ্যে সিমেন্ট নিয়ে নাকি পরে কথা হবে। আপাতত তাতে হাত দেওয়া হয়নি সেখান থেকে বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকার কর আদায় চোট খাওয়ার ভয়ে।
অথচ রাজস্ব আদায় প্রত্যাশা মতো না-হওয়া যে মাথাব্যথার কারণ, সেটিও স্পষ্ট এ দিনের বৈঠকে। ঠিক হয়েছে, জিএসটি জমানায় রাজ্যগুলির রাজস্ব ক্ষতির কারণ খুঁজে বার করতে তৈরি হবে সাত সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠী।
শাসক দল নির্বিশেষে একের পর এক রাজ্যে কৃষিঋণ মকুবের যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তাতে সরকারি কোষাগারের হাল নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁদের আশঙ্কা ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই খয়রাতি বাড়বে বলে তাঁদের আশঙ্কা। কিন্তু তাতে কি আখেরে লাভ হবে? অর্থনীতিবিদেরা বলছেন ‘না’।
জনতা কী বলবে?... জানা যাবে আগামী বছরই।