চাই দুধেল গরু, ব্রাজিল থেকে আসছে ঔরস

মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, গির গরু ভারতের সম্পদ হলেও গত দশ বছরে লক্ষ্যণীয় হারে কমে গিয়েছে এই প্রজাতি। কারণ, এ দেশে জার্সি গরুকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বরাবর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫২
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সেই অষ্টাদশ শতকে গুজরাতের ভাবনগরের মহারাজা প্রথম ‘গির’ প্রজাতির গরুটি উপহার দিয়েছিলেন ব্রাজিলকে। তার পরে দুধের বিপ্লব ঘটে পেলে-র দেশে। ব্রাজিল ওই গির থেকে তৈরি করেছিল এক সংকর গাভী, যা দৈনিক ১০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে সক্ষম। একই সঙ্গে মূল গির প্রজাতিটিকেও সংরক্ষণ করেছে ব্রাজিল। তাই সে দেশে আজ গির প্রজাতির গরু ছয়লাপ। অথচ ভারতেই কমে গিয়েছে এই গরু। ভারত সম্প্রতি ব্রাজিল সরকারের কাছ থেকে গির ষাঁড়ের এক লক্ষ ডোজ বীর্য চেয়েছে। লক্ষ্য, ভারতে দুগ্ধবতী গাভীর সংখ্যা বাড়ানো। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এই মুহূর্তে দুগ্ধবতী গাভীর কিছুটা অভাবই রয়েছে, এমনকি গো বলয়েও।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘গো-মাতা’র প্রশ্নে নিষ্ঠাবান। উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গোশালা এবং গো-পালক সংগঠনের অভাব নেই। বিরোধীদের অভিযোগ, গরু নিয়ে রাজনীতি বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক দখলের কৌশলের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চাহিদা মেটানোর মতো গরুর দুধের অভাব। কেন্দ্রীয় পশুকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ানের কথায়, ‘‘আর মাস দেড়েকের মধ্যে গির-এর এক লক্ষ ডোজ বীর্য চলে আসবে আমাদের দেশে। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে সেই ঔরস। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে তৈরি করা হবে আরও বেশি সংখ্যক গির প্রজাতির গরু। যা ছিল আমাদের দেশেরই নিজস্ব সম্পদ।’’

মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, গির গরু ভারতের সম্পদ হলেও গত দশ বছরে লক্ষ্যণীয় হারে কমে গিয়েছে এই প্রজাতি। কারণ, এ দেশে জার্সি গরুকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বরাবর। তার সঙ্গেই দেশি গরুর প্রজননের দিকে বেশি জোর দিয়েছেন গো-পালকেরা। মন্ত্রকের আশঙ্কা, ২০১৯ সালের পশু-সুমারির ফল বেরোলে দেখা যাবে, গবাদি পশুর সংখ্যা ২০১২ সালের সমীক্ষায় পাওয়া সংখ্যার চেয়েও কমেছে। যে মোদী সরকার গো-মাতার সম্মানকে জাতীয় নীতি হিসেবে দেখে, সেখানে কেন গবাদি পশুর এমন দুরবস্থা হবে — তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য পাওয়া যায়নি।

Advertisement

তাৎপর্যের ব্যাপার হল, ব্রাজিলে গোমাংস ভক্ষণে কোনও নিষেধাজ্ঞা তো নেই-ই, বরং তা খুবই জনপ্রিয়। অথচ সেখানে গরুর ছড়াছড়ি। আবার ভারতের বহু রাজ্যেই গোমাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু গাভীর জন্য বীর্য আমদানি করতে হচ্ছে বিদেশ থেকে! বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ব্রাজিলই নয়, লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশেও গির গরুর সংখ্যা যথেষ্ট। ওই অঞ্চলের আবহাওয়া গির গরুর জন্ম ও বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক।

মাত্র ৫৮ বছর আগেও ভাবনগর রাজাদের বংশ থেকে ফের একটি ষাঁড়কে ব্রাজিলে পাঠানো হয়েছিল। তার নাম ‘কৃষ্ণ’। এই কৃষ্ণ আবার সেই গরুটির প্রপৌত্র, যাকে অষ্টাদশ শতকে ‘দরবার সাহিব’ থেকে ব্রাজিলকে উপহার দিয়েছিলেন মহারাজা। ব্রিটিশ যুগে সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের এই প্রধান বন্দর শহরটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল দূর-দূরান্তের রাষ্ট্রগুলির। স্বাভাবিক ভাবেই রাজা-রাজড়াদের সঙ্গে বিদেশি বণিকদের স্বাভাবিক সৌহার্দ্যের সম্পর্ক গড়ে উঠত।

কোনও এক দিন ভাবনগর বন্দর থেকে জাহাজে ব্রাজিল পাড়ি দিয়েছিল ভারতীয় গির প্রজাতির একটি গরু। আজ প্রায় দেড়শো বছর পরে তারই ঐতিহ্যবাহী ঔরস ফেরত আসছে তারই দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন