কারণ দর্শানোর নোটিসের উত্তরে পৌঁছল ইস্তফাপত্র! একইসঙ্গে নতুন দল গঠনের ঘোষণাও করলেন বিদ্রোহী কংগ্রেস নেতারা।
হিমন্ত বিশ্বশর্মা-তরুণ গগৈয়ের দ্বৈরথের রেশ কাটতে না কাটতেই এ সবে ফের বেসামাল অসম কংগ্রেস। সুযোগ বুঝে ঘোলাজলে মাছ ধরতে নেমেছে বিরোধী শিবির। বিদ্রোহীদের দিকে আগাম সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৩ জুন। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে এআইসিসি সদস্য হিরণ্য বরাকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত। বরা-ঘনিষ্ঠ দিগন্ত কলিতা, রাণা খান, আদিল শাহ ও প্রাক্তন সাংসদ বলিন কুলিকেও একই বার্তা পাঠানো হয়। হিরণ্যবাবুরা তখনই জানিয়েছিলেন— তাঁরা নোটিসের জবাব দিতে আগ্রহী নন। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুমকি দেয় প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু, তাতে দমে না গিয়ে আজ সাংবাদিক বৈঠক ডেকে হিরণ্যবাবু ও দিগন্তবাবু ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তাঁরা জানিয়ে দেন, দলের আরও কয়েক জন নেতা তাঁদের শিবিরে আসতে পারেন।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘এ নিয়ে দলীয় হাইকম্যান্ড যা বলার বলবেন।’’
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে হিরণ্যবাবু জানিয়েছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামীর ছেলে হিসেবে আশৈশব কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। সত্তরের দশকে দেশের সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক হিসেবে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের দিশাহীনতা ও অনৈতিকতায় তিনি হতাশ। দল ও দিল্লির নেতৃত্ব নিয়ে তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই। কিন্তু অসমবাসীর জন্য নৈতিকতার পথে তিনি লড়াই করতে চান। রাজ্য নেতৃ্ত্বের প্রতি একই সুরে অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ করেন দিগন্তবাবুও।
হিরণ্যবাবুর কথায়, ‘‘অঞ্জন দত্তর আমলে দলে প্রবীণ নেতাদের কোনও সম্মান নেই। ওঁরা গাঁধীর মতাদর্শ মানেন না। দিল্লির নেতাদেরও ভুল বুঝিয়ে চলেছেন। দিল্লির নেতৃত্ব পদ দিয়ে বিদ্রোহ সামাল দিতে চায়। কিন্তু রাজ্য কংগ্রেস যে ভাবে চলছে তাতে এখানে দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’’ তিনি অভিযোগ তোলেন, বর্তমানে প্রদেশ কংগ্রেসের অনেক নেতার বিরুদ্ধে অপরাধের খতিয়ান রয়েছে। অঞ্জনবাবু নিজেও শিক্ষাগত যোগ্যতা, সারদা-কাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। হিরণ্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘যে দলের সেনাপতি নিজে প্রকাশ্য সভায় বলেন যে, এখন ভোট হলে কংগ্রেস অসমে মাত্র ২১টি আসন পাবে, সেই দলের সৈন্যদের মনোবল ভেঙে যেতে বাধ্য।’’ তিনি জানান, অসমের মানুষের হয়ে কাজ করতে তাঁরা নতুন দল গড়ার কথা ভাবছেন। অন্য কোনও দলের সঙ্গে মতের মিল হলে বোঝাপড়াতেও তাঁদের আপত্তি নেই। আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও লড়তে পারেন তাঁরা।
কৃষক মুক্তি তথা গণমুক্তি সংগ্রামের নেতা অখিল গগৈ জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিরোধী নতুন দলকে সমর্থন জানাতে তিনি প্রস্তুত। অখিলের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে হিরণ্যবাবু বলেন, ‘‘অগপ রাজি থাকলে তাঁদের সঙ্গে জোট বাঁধতেও আমাদের আপত্তি নেই।’’ যে সব কংগ্রেস বিধায়ক বা নেতা রাজনীতিতে জনসেবার নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী তাঁদেরও তাঁর শিবিরে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান হিরণ্যবাবু।
দিগন্তবাবু বলেন, ‘‘অঞ্জনবাবুও মন্ত্রীত্বের লোভে বিদ্রোহ করেছিলেন। এখন সভাপতি হওয়ার পর অন্যদের কাঠগড়ায় তুলছেন। রাজ্য কংগ্রেসে প্রথম বিদ্রোহের সময় উনিও আমাদের সঙ্গে ছিলেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অঞ্জনবাবুর আমলে দু’টি নির্বাচনে আমরা পরাজিত হয়েছি। আজকাল কংগ্রেসে কেউ যোগ দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। এ থেকেই দলের ভবিষ্যৎ স্পষ্ট।’’
তাঁরা কী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা হিমন্তবিশ্ব শর্মার পরামর্শে পদত্যাগ করছেন? দিগন্তবাবুর জবাব, ‘‘এর সঙ্গে হিমন্তের কোনও সম্পর্ক নেই। দিল্লির হাইকম্যান্ডের প্রতি এখনও আমাদের আস্থা অটুট। কিন্তু, প্রদেশ কংগ্রেসে পুরনো, অভিজ্ঞ ও সংগ্রামী নেতাদের কোনও জায়গা নেই। এখন আমরা মুক্ত। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করতেই পারি।’’
বলিন কুলি বলেন, ‘‘এ বার যোগ্য নেতৃত্বের হাতে প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব দিক এআইসিসি।’’ তিনি জানান, জুলাই মাসে নতুন দল গঠনের বিষয়ে বিভিন্ন দল, সংগঠন, বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তার পরই নেওয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
সাংবাদিক বৈঠকে রাণা খান জানান, তাঁর সঙ্গে বলিন ও আদিল শাহের শো-কজের জবাব দেওয়ার সময়সীমা আগামী কাল শেষ হবে। তাঁরা তখনই তাঁদের পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করবেন।