Gujarat election 2022

ব্রিজ ভাঙার পর নদীতে ঝাঁপ, বহু প্রাণ বাঁচানো বিজেপির প্রাক্তন বিধায়ক জয়ে ফিরলেন গুজরাতে

সেতু ভাঙার পর সরকার-বিরোধী যাবতীয় ক্ষোভবিক্ষোভকে প্রায় একার উদ্যোগেই নিজের অনুকূলে এনে ফেললেন কান্তিলাল। দুর্ঘটনার দিন লাইফ জ্যাকেট পরে মাচ্চুর জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

বিতান ঘোষ

গান্ধীনগর শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:২৭
Share:

মোরবীতে ৬২,০৭৯ ভোটে জিতলেন বিজেপির কান্তিলাল অম্রুতিয়া। ফাইল চিত্র।

অক্টোবর মাসের পর মোরবী জেলার মাচ্চু নদী রাজ্য রাজনীতির গতিপথ বদলে দেবে বলে মনে করেছিলেন কেউ কেউ। তবে বাস্তবে মাচ্চু নিজের খাত ধরে এগিয়ে চললেও রাজনীতির গতিপথ বিশেষ বদলাতে পারল না। রাজ্যে বিজেপির বিপুল জয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মোরবীতে প্রায় ৬২,০৭৯ ভোটে জয়ী হয়েছেন এই কেন্দ্রেরই প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কান্তিলাল অম্রুতিয়া। অনেকটা পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় স্থানে রইলেন কংগ্রেস প্রার্থী জয়ন্তীলাল পটেল। ভোটবাক্সে বিশেষ দাগ কাটতে পারেননি আপের প্রার্থী কান্তিলাল পঙ্কজ। এখনও পর্যন্ত তাঁর ঝুলিতে গিয়েছে মাত্র ১৭,৫৪৪টি ভোট।

Advertisement

গত ৩০ অক্টোবর মাচ্চু নদীর উপর ভেঙে পড়েছিল শতাব্দীপ্রাচীন মোরবী সেতু। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৪০ জন মানুষ। ভেঙে পড়ার কিছু দিন আগেই সেতুটির সংস্কারকাজ শেষ হয়েছিল। ভারবহন ক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ উঠে পড়া সত্ত্বেও স্থানীয় পুর-প্রশাসন কেন কোনও পদক্ষেপ করল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল সেতু সংস্কারের দায়িত্বে থাকা সংস্থাকে নিয়েও। মূলত আলো, ঘড়ি বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ সংস্থাকে কেন সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয় মানুষ, বিরোধী দলগুলি তো বটেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান-বিরোধী যাবতীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভকে প্রায় একার উদ্যোগেই নিজের অনুকূলে এনে ফেললেন কান্তিলাল। দুর্ঘটনার দিন লাইফ জ্যাকেট পরে মাচ্চুর জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মোরবীর প্রাক্তন তথা হবু বিধায়ক। তাঁর উদ্যোগেই অনেককে বাঁচানো সম্ভব হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন সে দিন নদীর পারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কান্তিলালের তৎপরতার সেই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও আনন্দবাজার অনলাইন এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি।

Gujarat Assembly Election 2022

বিজেপি নেতৃত্ব তড়িঘড়ি কান্তিলালকে মোরবীতে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন। মোরবীর বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রিজেশ মার্জাকে এ বার আর টিকিট দেয়নি দল। মোরবী থেকে কান্তিলাল এর আগেও জিতেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটানা এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন তিনি। মাঝে ২০১৭ সালে এই ধারাবাহিক জয়ে ছেদ পড়ে। ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগে পতিদার আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল গুজরাত। পতিদার সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের দাবিতে তরুণ হার্দিক পটেলের নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলনের রাজনৈতিক সুফল পেয়েছিল কংগ্রেস। সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের এই বিধানসভা কেন্দ্রটিতে কান্তিলালকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস প্রার্থী ব্রিজেশ। গত পাঁচ বছরে মাচ্চু নদীর জলের মতোই বয়ে গিয়েছে সময়। ব্রিজেশ ভোটের পরেই পদ্ম-শিবিরে গিয়ে গুজরাত সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। আর সে দিনের পতিদার আন্দোলনের নায়ক হার্দিক তাঁর বিজেপি বিরোধিতা ছেড়ে এ বার নিজেই বিজেপি প্রার্থী। ২০১৫ সালের ৩০ অগস্ট এই হার্দিককে গ্রেফতার করার প্রতিবাদেই ‘পতিদার আনামত আন্দোলন সমিতি’ কান্তিলালের অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল। পতিদার-অধ্যুষিত মোরবী কেন্দ্রে শুধু পটেলদের সমর্থনের জোরেই কান্তিলালের থেকে আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস।

Advertisement

২০০৪ সালে কান্তিলালের বিরুদ্ধে মোরবী পুরসভার পুরপ্রধান প্রবীণ রাভেশিয়াকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল। দায়রা আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায়। কিন্তু মামলাটি উচ্চ আদালতে গেলে সাক্ষীরা বয়ান বদল করেন। ছাড়া পেয়ে যান কান্তিভাই। পুরনো ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ভোটের প্রচারে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু ভোটের ফলাফলেই প্রমাণ, ভোটের বাক্সে এ সবের কোনও প্রতিফলনই দেখা যায়নি। পতিদারদের সমর্থন পেতে এ বার সেই জনগোষ্ঠীরই মানুষ জয়ন্তীলালকে টিকিট দিয়েছিল হাত শিবির। কিন্তু তাতেও নির্বাচনী সাফল্য মিলল না। মাচ্চু নদীতে ভেসে পড়ে ভোট-বৈতরণীও পেরিয়ে গেলেন বিজেপির কান্তিলাল। পতিদাররা যে এই আসনে আবার আগের মতোই বিজেপির উপরই আস্থা রাখছেন, তা ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন