নেই বিকাশের ছিটেফোঁটাও, গ্রামে উসখুস

ভোট পর্বের অনেক আগে গুজরাতে এসে দেখেছিলাম শান্ত নিস্তরঙ্গ সব আদিবাসী গ্রামের ছবি। আর আজ ভোটের আঁচে সেই সব গ্রামের বাতাসে চোরা চাঞ্চল্য, কেমন উসখুস ভাব।

Advertisement

অগ্নি রায়

ছোটা উদয়পুর শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৭
Share:

মোদীরাজ্য: নেতাকে এক খণ্ড ‘গুজরাত’ উপহার। রবিবার সানন্দের সভামঞ্চে। পিটিআই

বুড়ো নিমগাছের তলায় শুকনো এক পাতকুয়ো। জল শেষ হয়ে গিয়েছে বহুযুগ আগে। গোটা দিনের সুখদুঃখের ঝুড়ি নিয়ে সান্ধ্য জমায়েত বসে চাতালে। স্বাভাবিক ভাবেই আড্ডার মূল আলোচ্য এখন ‘চুটনি’, গুজরাতি ভাষায় যার অর্থ— ভোট।

Advertisement

হবে না-ই বা কেন! বরোদা বাইপাসের ধারে দাহোদ, জালোদ, সন্তরামপুর— অনাদরে পড়ে থাকা এই আদিবাসী গ্রামগুলি এমন তারকা সমাবেশ আগে দেখেছে নাকি কখনও? এমনই এক গ্রাম কুন্দি। যার কুয়োর চাতালের আড্ডা থেকে কথাটা ভেসে এল— “নরেন্দ্র মোদীকে আমরা কখনও চোখে দেখেছি আগে? রাহুল গাঁধীকেও দেখিনি। গত দু দিনে তো ওঁদের চার বার দেখলাম!’’ যিনি এ কথা বলছিলেন, তাঁর নাম ধীরুভাই ভিল।

ভোট পর্বের অনেক আগে গুজরাতে এসে দেখেছিলাম শান্ত নিস্তরঙ্গ সব আদিবাসী গ্রামের ছবি। আর আজ ভোটের আঁচে সেই সব গ্রামের বাতাসে চোরা চাঞ্চল্য, কেমন উসখুস ভাব।

Advertisement

কীসের এই চাঞ্চল্য? বদলের?

গত বারে দলীয় রাজনীতি নিয়ে সরাসরি কোনও কথা বলতে শুনিনি গ্রামবাসীদের। হঠাৎ আসা আগন্তুকের সামনে এ বারেও তাঁরা যে মন খুলে কথা বলছেন, এমনটা নয়। কোথাও যেন একটা ভয়-ভীতি রয়েছে। তবে পরে উবু হয়ে বসা একটি শরীর থেকে হাত উঠল। বিড়ি জ্বলছে আঙুলের ফাঁকে। উনি যা দেখাচ্ছেন— তার অর্থ পাঞ্জা, রাহুলের নির্বাচনী প্রতীক!

“এই যে গ্রামটা দেখছেন, বর্ষার সময় সব ডুবে যায়। দেখনেওয়ালা কেউ নেই। জল-বিজলি ছেড়ে দিন, বাস করার জায়গাই থাকে না,” বলছেন শীর্ণ ভূপেন্দ্র জয় সিংহ তড়বি। “কাজ বলতে বছরে তিন মাস খেতমজুরি। ১২ ঘণ্টা গাধার খাটনি খেটে শ-দেড়শো টাকা। এত দিন পরে মোদীর খেয়াল হলো! এত দিনে এলেন আমাদের খোঁজ নিতে?”

ক্ষোভের এই ঝাঁঝ সরকার বদলে দেবে কি না, তা অবশ্যই স্পষ্ট নয়। কিন্তু বৈষম্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই। চোখের সামনে একই গ্রামে দু’রকমের পাড়া। এখানে ৬০ শতাংশ আদিবাসীর বসতি, যাদের হতশ্রী কাঁচা বাড়ি কোনও মতে খাড়া করা। আর তার পিছনেই পটেলদের পাকা সব দোতলা অট্টালিকা। গ্রামবাসী নীলকমল বারিয়া বলছেন, “সংরক্ষণের বিষয়টা বাদ দিলে পাতিদারদের অন্তত হা-হুতাশ করার কোনও কারণ নেই। দিব্যি তো তো ছিল এত দিন।”

এখানে প্রাথমিক স্কুল আছে, তালা খোলার কেউ নেই। খাতায় কলমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রও আছে, কিন্তু সাধারণ চিকিৎসাটুকু পেতেও পাড়ি দিতে হয় মাইল পাঁচেক। বছরে ৮ মাস রোজগার নেই, কারণ প্রত্যন্ত এই সব গ্রামে শিল্পের পা পড়েনি।

“আপনি যে এ সব লিখে নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে কি কোনও কোম্পানি এখানে কারখানা গড়তে আসবে?” ফেরার আগে প্রশ্নটা শুনে একটু চমকে উঠতে হয়েছিল। নিজের পেশার কথা ফের বলতে গিয়ে দেখলাম, ওঁরা সবই জানেন। বলেন, “তবুও আপনাদের রিপোর্ট পড়ে যদি কোনও কোম্পানি আসে, শিল্প গড়ে। আম লোকের জিন্দেগি একটু আসান হয় তা হলে!”

একটা জিনিসই অবাক করার মতো গুজরাতের আদিবাসী পাঁচালিতে।

শিল্পায়নের আকাঙ্ক্ষা।

গুজরাত নির্বাচন নিয়ে সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন