ঘরে না-ফেরাদের দাওয়াত পণ্ডিতদের

কাশ্মীরি পণ্ডিতদের তরফে পঙ্কজ ধর বলছেন, ‘‘বাড়ি থেকে দূরে থাকতে কেমন লাগে, আমরা তা বিলক্ষণ জানি। তাই যাঁরা বাড়ি যেতে পারলেন না, তাঁদের ভালবেসেই এই উদ্যোগ।’’

Advertisement

স্বাতী মল্লিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৩
Share:

ফাইল চিত্র।

প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগ নেই সাত দিন। তাঁরা কেমন আছেন, সেই খবরও পাননি অনেকে। বাড়িও যেতে পারেননি। ঘরছাড়া সেই মানুষগুলিকে কাছে টানতে তাই এ বার ইদের দাওয়াত দিয়েছেন গুরুগ্রামের কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা। দিল্লির যন্তর মন্তর চত্বরে সক্কলকে আমন্ত্রণ করেছেন বাড়ি না ফেরা কয়েক জন কাশ্মীরি ছাত্রও।

Advertisement

কাশ্মীরি পণ্ডিতদের তরফে পঙ্কজ ধর বলছেন, ‘‘বাড়ি থেকে দূরে থাকতে কেমন লাগে, আমরা তা বিলক্ষণ জানি। তাই যাঁরা বাড়ি যেতে পারলেন না, তাঁদের ভালবেসেই এই উদ্যোগ।’’ গুরুগ্রামের প্রায় কয়েক হাজার পণ্ডিত পরিবার কোনও না কোনও ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন এই উদ্যোগের সঙ্গে। নিমন্ত্রণ রাখতে চেয়ে বেশ কিছু ফোন পেয়েছেন তাঁরা। আর এক আয়োজক অজয় পণ্ডিতার আশা, অন্তত ১০০-১৫০ জন কাশ্মীরি অতিথি আসবেন। গল্পগুজব এবং বিশেষ কাশ্মীরি খানার মাধ্যমেই তাঁদের ঘরে ফিরতে না-পারার দুঃখ কিছুটা ভুলিয়ে দিতে চাইছেন অজয়। বলছেন, ‘‘আগে তো ইদ আর শিবরাত্রি একসঙ্গেই পালন করত কাশ্মীরি পণ্ডিত এবং কাশ্মীরি মুসলিমেরা। এ বার ফের একসঙ্গে ইদ পালন করার সুযোগ এসেছে।’’

গত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকের মাধ্যমে দুই সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু-প্রতিবেশী-পরিচিতকে মিলিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন জয়বীর আহমেদ। গুরুগ্রামের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দিল্লিতে কর্মরত এই কাশ্মীরি বলছেন, ‘‘তিন দশক ধরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে মেরুকরণ রয়েছে, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেটে গিয়েছে। এই উদ্যোগ তারই উদাহরণ।’’ দিল্লির এক হাসপাতালে কর্মরত, অনন্তনাগের বাসিন্দা রউফ হুসেন ওয়ানি বাড়ি ফেরার টিকিট কেটেও যেতে পারেননি। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলছেন, ‘‘কাশ্মীরি পণ্ডিতরাও তো কাশ্মীরেরই মানুষ। তবে কোনও দিল্লিওয়ালা যদি আমাদের এই দাওয়াত দিতেন, তা হলে কিন্তু আরও ভাল হত।’’

Advertisement

পুলিশের অনুমতি নিয়ে যন্তর মন্তর চত্বরে ইদের জমায়েতের ডাক দিয়েছেন কয়েক জন কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীও। তাঁদের তরফে ফৈক ফয়জান রবিবার বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি ফেরার পথ নেই। প্রিয়জনকে কাছে না পাওয়ার দুঃখটা যদি কিছু ক্ষণের জন্য হলেও ভুলতে পারি, তাই এই জমায়েতের ভাবনা।’’ তবে ‘আবদার’ একটাই। সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে ‘ঘরে তৈরি খাবার’। কেন? ক্লান্ত হেসে শ্রীনগরের বাসিন্দা ফৈকের জবাব, ‘‘মায়ের হাতে তৈরির রান্না তো এ বারে খেতে পাব না। তাই অন্যেরা যদি আনেন! বাড়ির খাবারের সঙ্গে সেই ভালবাসার স্বাদটাও তবে পাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন