সংখ্যালঘু পরিবারের উপরে হামলাকারীদের তাণ্ডব। ভিডিয়ো চিত্র
বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় ফের সংখ্যালঘুদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটল। অভিযোগের তির উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দিকেই।
হোলির দিন গুরুগ্রামে এক মুসলিম পরিবারের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ২০-২৫ জনের একটি দুষ্কৃতী দলের বিরুদ্ধে। লোহার রড, হকি স্টিক, লাঠি, পাইপ নিয়ে বাড়িতে ঢুকে সংখ্যালঘু পরিবারটির সদস্যদের বেধড়ক মারধর করে তারা। হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু এবং মহিলারাও। এই ঘটনায় জখম হয়েছেন পরিবারের পাঁচ শিশু-সহ ১৪-১৫ জন সদস্য। আক্রান্ত কনিষ্ঠতম শিশুটির বয়স ২। মুসলিম পরিবারটির সদস্যদের অভিযোগ, মারতে মারতে দুষ্কৃতীরা বলছিল, ‘‘তোরা পাকিস্তানে চলে যা।’’ এই ঘটনায় ছয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই হামলা হয়েছে মহম্মদ সাজিদের বাড়িতে। আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা সাজিদ তিন বছর ধরে স্ত্রী সামিনা এবং ছয় সন্তান নিয়ে রয়েছেন গুরুগ্রামে। বাড়িতে রয়েছেন অন্য সদস্যরাও। কারণ সাজিদের পরিবার যৌথ পরিবার। তাঁদের উপরে হামলার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ‘ভাইরাল’ হওয়া ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, বাড়ির পুরুষ সদস্যদের বেধড়ক মারছে দুষ্কৃতীরা। মহিলারা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, চিৎকার করে সাহায্য চাইছেন। ভিডিয়ো দেখে ক্ষুব্ধ নেটিজেনরা।
বৃহস্পতিবার কী ঘটেছিল?
সাজিদের পরিবারের কয়েক জন সদস্য বাড়ির সামনে ক্রিকেট খেলছিলেন। সাজিদের ভাইপো দিলশাদ বলেন, ‘‘সেই সময় মোটরবাইকে চেপে দু’জন এসে বলে, তোরা এখানে কী করছিস, পাকিস্তানে গিয়ে ক্রিকেট খেল! কাকা সাজিদ মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এলে বাইকের পিছনে বসে থাকা ব্যক্তি তাঁকে চড় মারে এবং হুমকি দেয়, তোকে দেখে নেব।’’ এর পরেই ২০-২৫ জনের দলটি সাজিদের বাড়িতে হামলা চালায়। সংখ্যালঘু পরিবারটির অভিযোগ, প্রায় ৪০ মিনিট পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সেই
সময় হামলাকারীরা ২৫ হাজার টাকা এবং বেশ কিছু সোনার গয়না নিয়ে পালায়।
গুরুগ্রামের এসিপি সামশের সিংহ জানান, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিয়ো দেখে বাকি দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কারণে সংখ্যালঘু এবং দলিতদের উপরে আক্রমণ চলছে। গণপিটুনিতে প্রাণও গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। ভোটের মুখে বিজেপি শাসিত হরিয়ানার ফের এমন ঘটনা ঘটায় সরব বিরোধীরা। সংখ্যালঘু পরিবারের উপরে এই হামলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস। দলের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়েছে, ‘‘আমরা নিরপরাধ ভারতীয়দের উপরে এই হামলার তীব্র নিন্দা করছি। মোদী কি এই রকম ‘নতুন ভারত’ গড়তে চাইছেন, যা ঘৃণা আর হিংসায় পরিপূর্ণ?’’ টুইট করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের কাছে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। হামলার নিন্দা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তাঁর টুইট, ‘‘হিটলারও
ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এ সব করতেন। হিটলারের গুন্ডারাও সাধারণ মানুষকে মারত, খুন করত। আর পুলিশ আক্রান্তদের বিরুদ্ধে মামলা করত।’’