কুলগুরুর মঠে খোঁজ নিলেন উদ্বিগ্ন জ্ঞানেন্দ্র

নেপালে রাজাদের যুগ শেষ। রাজতন্ত্রও ইতিহাস। কিন্তু প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র রয়েছেন। গোরক্ষনাথ মঠের বর্তমান পীঠাধীশ্বর যোগী আদিত্যনাথ এখনও পূজিত হন নেপালের রাজপরিবারে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

গোরক্ষপুর শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ১০:০০
Share:

বছর ১৬ আগের কথা। নেপালের রাজপ্রাসাদের হত্যাকাণ্ডে নিহত রাজা বীরেন্দ্র ও তাঁর পরিবার। গোটা বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাজার মৃত্যুতে সে দিন নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল গোরক্ষনাথ মঠে। সেই সময়ে মঠের পীঠাধীশ্বর মহন্ত অবৈদ্যনাথকে তাঁর গুরু বলেই মানতেন রাজা বীরেন্দ্র।

Advertisement

নেপালে রাজাদের যুগ শেষ। রাজতন্ত্রও ইতিহাস। কিন্তু প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র রয়েছেন। গোরক্ষনাথ মঠের বর্তমান পীঠাধীশ্বর যোগী আদিত্যনাথ এখনও পূজিত হন নেপালের রাজপরিবারে। তাই গোরক্ষপুরের রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অসংখ্য শিশুমৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন জ্ঞানেন্দ্র। কাঠমান্ডুতে বসেই একাধিক বার গোরক্ষপুর মঠে এখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। এই হাসপাতালে নেপালের বহু মানুষও চিকিৎসা করাতে আসেন। সেই কারণেও চিন্তিত প্রাক্তন রাজা।

মঠের প্রবন্ধক দ্বারকা তিওয়ারি জানালেন, নেপালের রাজপরিবারের সঙ্গে গোরক্ষনাথ মঠ ও নাথ সম্প্রদায়ের গুরুদের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ। তাঁর কথায়, ‘‘গুরু গোরক্ষনাথ নেপালের রাজপরিবারের কুলগুরু এবং গোর্খা রাজত্বের রক্ষাকর্তা। গোরক্ষনাথের খড়ম সিংহাসনে রেখে পুজো করা হয় রাজপরিবারে। এখনও উৎসবে-পার্বণে কাঠমান্ডুর রাজপরিবার থেকে গোরক্ষপুরে খিচুড়ি পাঠানো হয়।”

Advertisement

মঠের সাধুদের বিশ্বাস, গোরক্ষনাথের অভিশাপেই নেপালের রাজপরিবার মুছে গিয়েছে। কথিত আছে, এক বার রাজা পৃথ্বীনারায়ণ শাহ গোরক্ষনাথকে দই খেতে দিয়েছিলেন। গোরক্ষনাথ সেই দই নিজের মুখ থেকে বার করে রাজাকে তা খেতে বলেন। রাজা খেতে পারেননি। দই পড়ে গিয়ে রাজার পায়ের দশ আঙুলে ছুঁলে ক্রুদ্ধ গোরক্ষনাথ অভিশাপ দেন, পৃথ্বীনারায়ণের বংশ আর দশ প্রজন্ম পরেই ধ্বংস হবে।

রাজা বীরেন্দ্র ছিলেন পৃথ্বীনারায়ণের নবম প্রজন্ম। তাঁকে হত্যা করে যুবরাজ দীপেন্দ্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মৃত্যুশয্যাতেই তাঁর অভিষেক হয়। দীপেন্দ্র বাঁচেননি। ২০০১-এর জুন মাসের সেই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই গোরক্ষপুরের বিশ্বাস, গোরক্ষনাথের অভিশাপই সত্যি হয়েছে। বীরেন্দ্রর ভাই জ্ঞানেন্দ্র রাজা হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জমানাতেই নেপালে রাজতন্ত্রের অবসান হয়েছে।

কাঠমান্ডুতে পশুপতিনাথ মন্দিরের কাছেই বাগমতী নদীর তীরে গোরক্ষনাথের মন্দির। এখনও সেই মন্দিরে রাজপরিবারের পুজোর পরেই মকর সংক্রান্তি উৎসব শুরু হয়। আর গোরক্ষপুরের মঠে গোটা উত্তরপ্রদেশের মতো নেপাল থেকেও ভক্তরা এসে হাজির হন। যোগী আদিত্যনাথ মঠে থাকলে তাঁকে প্রণামের জন্য লম্বা লাইন পড়ে।

আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে অবশ্য নিরাপত্তার কড়াকড়ি বেড়েছে। মঠের সদর দফতরে গেরুয়া তোয়ালে ঢাকা তাঁর চেয়ারের সামনে টেবিলের নীচে হাত বাড়িয়ে ভক্তরা পায়ের ধুলো নিতেন। এখন সেই টেবিলের সামনে ফাইবারের দেওয়াল। নিরাপত্তার সঙ্গে বেড়েছে অভাব-অভিযোগ নিয়ে হাজির হওয়া দর্শনার্থীর সংখ্যাও। মঠের প্রবন্ধক বলেন, “যোগীজি এখানে থাকলে দিনে অন্তত চার-পাঁচ হাজার মানুষ আসেন।” ঘরের এক কোণে কর্মীরা টাইপরাইটার, ল্যাপটপ নিয়ে বসেন। আমজনতার অভিযোগ, দাবিদাওয়া শুনে দরখাস্ত টাইপ হয়। তার পরে তা জমা হয়
আদিত্যনাথের টেবিলে।

বাবা রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজে এক সপ্তাহে ৬০টিরও
বেশি শিশুর মৃত্যুর পরে নেপালের প্রাক্তন রাজার মতোই উদ্বিগ্ন গোরক্ষপুরের আমজনতা। রাজাদের আমলে গুরু অবৈদ্যনাথের কথাতেই গো-নিধনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল নেপালে। অবৈদ্যনাথের উত্তরসূরি আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তাঁর রাজ্যে গো-রক্ষায় জোর দিয়েছেন। গোরক্ষপুর চায়, এ বার তিনি শিশু-রক্ষাতেও নজর দিন। যোগী কি শুনছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন