হামিদ আনসারি।
তিনি এখনও পস্তাচ্ছেন। মাসুল তাঁকে ছ’বছর ধরে দিতে হয়েছে। তাই আর যাতে কেউ তাঁর মতো ‘বেলতলায়’ না যায় এখন সেই পরামর্শই ‘ফেরি’ করে বেড়াচ্ছেন মুম্বইয়ের হামিদ আনসারি! তাঁর প্রেমকাহিনি এখন আর কারও অজানা নয়। কিন্তু সেই হামিদ বাড়ি ফিরে কী বললেন?
দু’দিন আগেই পাকিস্তানের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ভারতে ফিরেছেন তিনি। ভারসোভার পাঁচ তলার ফ্ল্যাটে নিজের ঘরে এক দম অন্য রকম হামিদকে নজরে এল। এই হামিদ আর প্রেমের গল্প শোনাচ্ছেন না, বরং এর থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। তাও আবার ‘ফেসবুক প্রেম’ থেকে! মুক্তির খবরটা পেয়েছিলেন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায়। হামিদ বলেন, “জেলের ডেপুটি সুপার এসে খবর দিলেন আধ ঘণ্টার মধ্যেই প্রস্তুত হতে। আমাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।” খবরটা পাওয়ামাত্রই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি হামিদ। বলেন, “পোশাকটা পাল্টে নিলাম। জুতো পরলাম। কনভয় প্রস্তুতই ছিল। গাড়িতে বসতেই ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে নিয়ে আসা হল আমাকে। দীর্ঘ ছ’বছর পর ভারতের সীমান্ত দেখতে পেয়ে যেন আবেগ বাধ মানছিল না।”
ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে এখন বহু ছেলেমেয়েরাই পারস্পরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। হামিদও জড়িয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রেমের পরিণতি যে এতটা ভয়ানক হবে, ভাবলেই শিউরে উঠছেন তিনি। বলেন, “কোনও কিছু বাবা-মায়ের কাছে লুকনো উচিত নয়। একমাত্র বাবা-মায়েরাই ছেলেমেয়েদের কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায়।” পাশাপাশি তাঁর আরও পরামর্শ, “কখনওই অবৈধ উপায়ে কোনও জায়গায় যাওয়ার কথা ভুলেও ভাববেন না, বিপদ হতে পারে।”
আরও পড়ুন: ‘বাবু পাঁচ টাকা দিন’, মদ খেয়ে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করছেন কনস্টেবল!
মুম্বইয়ের ভারসোভার বাসিন্দা। আজ থেকে ছ’বছর আগে ২০১২-য় ফেসবুকে এক তরুণীর সঙ্গে হামিদের আলাপ হয়। তখন তাঁর বয়স ২৭। ধীরে ধীরে তাঁদের দু’জনের মধ্যে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যে তরুণীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তিনি এ দেশের নন, পাকিস্তানের বাসিন্দা। হোক না পাকিস্তান, তাতে কী! প্রেমের টানে সেই দূরত্ব যেন অনেকটাই কমে গিয়েছিল তাঁর কাছে। খবরটা পেয়েছিলেন যে প্রেমিকাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁর বাড়ি থেকে। নিজেকে আর সামলাতে পারেননি হামিদ। প্রেমিকাকে উদ্ধারেই সকলের অলক্ষ্যে ছুটে গিয়েছিলেন পাকিস্তানে। তবে ‘বৈধ’ উপায়ে নয়।আফগানিস্তান সীমান্ত দিয়ে তিনি ঢুকেছিলেন পাকিস্তানে।
আরও পড়ুন: ‘খুব ভয় করছে, যদি আমার সন্তানদের ঘিরে জনতা জানতে চায় তারা হিন্দু না মুসলিম...’
সে দেশে পা রাখামাত্রই চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তার পর থেকেই হামিদের ঠিকানা পাকিস্তানের জেলখানা। আর গ্রেফতারির সঙ্গে সঙ্গেই জেলখানাতেই ‘বন্দি’ হয়ে যায় তাঁর প্রেম! তার পর কয়েদি হিসেবেই জেলখানার কুঠুরিতে কেটে গিয়েছে ছয়-ছয়টা বছর।
এই হামিদই এখন বাস্তবের ‘বীর’। যদিও বাস্তবের ‘জারা’ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। রিল লাইফের বীর-জারার মিল হয়েছিল তবে একদম জীবনের অন্তিম পর্যায়ে। বাস্তবের বীর-এর ক্ষেত্রে অবশ্য তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)