National News

‘ফেল’ চিকিৎসকদের পাশ করাতে কোচিং মন্ত্রকের

সঙ্কট মুক্তিতে তাই এ বার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ কোচিং সেন্টার তৈরি করে অকৃতকার্য ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা বৈতরণী পার করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৩০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

দেশে প্র্যাকটিস করার ছাড়পত্র পাওয়ার পরীক্ষায় প্রতি বছর ডাহা ফেল করছেন বিপুল সংখ্যক ভারতীয় ডাক্তার। তাঁদের নিয়ে বিচিত্র সমস্যায় পড়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক! না পারছে তাঁদের রাখতে, না পারছে ফেলতে। এই চিকিৎসকেরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এমবিবিএস পাশ করে এসেছেন। কিন্তু ভারতে ফিরে ডাক্তারির লাইসেন্স পাওয়ার স্ক্রিনিং টেস্টে ক্রমাগত ফেল করছেন।

Advertisement

সঙ্কট মুক্তিতে তাই এ বার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ কোচিং সেন্টার তৈরি করে অকৃতকার্য ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা বৈতরণী পার করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু এত কসরত করে যাঁদের ডাক্তারির ছাড়পত্র পেতে হচ্ছে তাঁরা চিকিৎসক হিসেবে আদৌ কেমন হবেন বা তাঁদের হাতে রোগীর জীবন কতটা সুরক্ষিত থাকবে সেই প্রশ্ন থাকছেই।

এমনিতেই দেশে চিকিৎসকের আকাল তীব্র। যে সব চিকিৎসক লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে বিদেশের কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করছেন তাঁরা দেশে ফিরে প্র্যাকটিসের ছাড়পত্র পেলে এই চিকিৎসক-সঙ্কট হয়তো মিটত। কিন্তু ফেলের বন্যায় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সে আশায় বালি পড়েছে। তাই এ বার ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এমস)-এর চিকিৎসকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে তাঁদের মাধ্যমে এক বছরের বিশেষ পাঠ্যসূচি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’র(এমসিআই) বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স-এর সেক্রেটারি জেনারেল রাকেশ কুমার বৎস টেলিফোনে জানান, ‘‘ফেল করা ডাক্তারদের কোচিং দেওয়া হবে। আশা করা যাচ্ছে, এতে পাশের হার বাড়বে। সমস্যা মিটবে। এই রকম চারটি কেন্দ্র খোলা হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: জনগণনা, এনপিআর এক নয়, বুঝেই সরে এসেছি: মমতা

নয়াদিল্লির ‘ন্যাশনাল বোর্ড অফ এগজামিনেশন’ সূত্রের খবর, ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৭ বছরে বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ থেকে (এর মধ্যে অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, নিউজিল্যান্ডের মেডিক্যাল কলেজ পড়ছে না। কারণ, এই পাঁচটি দেশ থেকে এমবিবিএস পাশ করলে ভারতীয় পড়ুয়াদের ভারতে প্র্যাকটিসের জন্য আলাদা পরীক্ষা দিতে হয় না) ৯৭ হাজার পড়ুয়া এমবিবিএস পাশ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ভারতে প্র্যাকটিসের ছাড়পত্র পাওয়ার ‘ফরেন মেডিক্যাল গ্রাজুয়েটস এগজামিনেশন’ (এফএমজিই) পাশ করতে পেরেছেন মাত্র ১৬ হাজার জন। অর্থাৎ, ফেল করেছেন ৮১ হাজার ডাক্তার! ২০১৯ সালের এফএমজিই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছিল গত বছর জুন মাসে। সেখানেও পাশের হার মেরেকেটে ১৫ শতাংশ!

হিসেব অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের মধ্যে চিন ও রাশিয়ার মেডিক্যাল কলেজে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া এমবিবিএস পড়তে আসেন। দেখা যাচ্ছে, ২০১২-১৮-র মধ্যে চিন থেকে ৩২ হাজার ভারতীয় এমবিবিএস পাশ করেছেন। তার মধ্যে ভারতে প্র্যাকটিসের যোগ্যতা অর্জন করেছেন সাকুল্যে ৪ হাজার জন। রাশিয়া থেকে ওই কয়েক বছরে মেডিক্যাল পাশ করেছেন প্রায় ১৭ হাজার ভারতীয় ছেলেমেয়ে। তার মধ্যে ভারতে প্র্যাকটিসের লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ২ হাজার জন!

এমসিআইয়ের এক কর্তার কথায়, ‘‘অত্যন্ত খারাপ নম্বর পাওয়া ছেলেমেয়েরাও বিপুল টাকা দিয়ে বিদেশের বিভিন্ন কলেজে ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কিছু কলেজে শিক্ষার মান ঠিক নেই। ফলে পড়ুয়াদের শিক্ষায় ত্রুটি থাকছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাইরে কোথাও পড়তে যাওয়ার আগে সেই মেডিক্যাল কলেজের পঠনপাঠন সম্পর্কে পুরোপুরি খোঁজ নিয়ে তবে যাওয়া উচিত। খারাপ মানের জন্য এই রকম বেশ কিছু কলেজকে এমসিআই কালো তালিকাভুক্ত করেছে ইতিমধ্যেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন