কংগ্রেস সভানেত্রীর পদ থেকে সনিয়া গাঁধীর সরে দাঁড়ানোর দাবিতে অনড় থাকলেন পঞ্জাবের নেতা তথা ওয়ার্কিং কমিটির প্রাক্তন সদস্য জগমিৎ সিংহ ব্রার। দলের আরও কয়েক জন বর্ষীয়ান নেতা ব্রারের সমর্থনে সরব হতে পারেন বলে আশঙ্কা দশ জনপথ ঘনিষ্ঠদের।
সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ব্রার জানান, দলীয় নেতৃত্বের পদ থেকে ছুটি নেওয়া উচিত সনিয়া-রাহুলের। ওঁরা বরং গোটা দেশ ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। পরিবর্তে কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিন গাঁধী পরিবারের বাইরের কোনও যোগ্য নেতা। ব্রারের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে তাঁকে শো-কজ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও দমলেন না পঞ্জাবের এই দাপুটে নেতা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আপাত ভাবে মনে হতে পারে কংগ্রেসের কোনও একজন নেতা বিক্ষিপ্ত ভাবে হাইকম্যান্ডের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছেন। কিন্তু দশ নম্বর জনপথের ঘনিষ্ঠরা এর মধ্যেই আগামী দিনে বৃহত্তর বিদ্রোহের গন্ধ শুঁকতে শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকের আশঙ্কা, শীঘ্রই ব্রারের সমর্থনে কংগ্রেসের বেশ কিছু বর্ষীয়ান নেতা এককাট্টা হবেন। এবং তা হতে পারে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা-সহ চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগেই।
সূত্রের খবর, হাইকম্যান্ডকে দেওয়া জবাবি চিঠিতে ব্রার জানিয়েছেন, কংগ্রেসে সংস্কারের দাবি থেকে পিছু হটার প্রশ্ন নেই। সে জন্য সবার আগে কংগ্রেস সভাপতি বা সভানেত্রীর মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর করা হোক। সেই সঙ্গে একটি চিন্তন শিবিরের আয়োজন করুক হাইকম্যান্ড। সনিয়া-ঘনিষ্ঠদের মতে, ব্রারের এই মন্তব্যের অর্থ একটাই। তা হল, সনিয়া গাঁধী যেন এখনই দলের সভানেত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি নেন। কারণ, কংগ্রেস সভানেত্রী পদে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছেন তিনি।
পঞ্জাব কংগ্রেসের এই পোড়খাওয়া নেতা একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্রসিংহ চৌধুরির মতো দল ছাড়বেন না। তিনি যে দাবি তুলেছেন তা একেবারেই দলীয় স্বার্থে। আর কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই তাঁর। সূত্রের খবর, ব্রারের এই দাবি ঘরোয়া ভাবে ইতিমধ্যেই দলীয় স্তরে সমর্থন পেতে শুরু করেছে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য জনার্দন দ্বিবেদী ব্রারের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। দলের শীর্ষ সারির এক নেতা তথা হিন্দিবলয়ের একটি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আজ বলেন, “এটা ঠিকই যে দেশ জুড়ে মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে কংগ্রেস হল মা-ছেলের পার্টি। এখন সাংগঠনিক রাশ পরিবারের বাইরে কারও হাতে দিলে মন্দ হবে না।”
এই পরিস্থিতিতে রাহুল শিবিরের এক নেতা আজ জানান, দলের মধ্যে যে অসন্তোষ বাড়ছে তা রাহুলও বুঝছেন। দলে সাংগঠনিক রদবদলের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছেন তিনি। সম্ভবত চার রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পরেই সেই রদবদল হবে।