কপালে ভাঁজ ভ্রমণ সংস্থা আর পুজোর পর্যটকদের

পুজোয় বাংলার আকাশ ঠিক কোন মেজাজে থাকবে, নিশ্চিত নয়। তবে ইতিমধ্যেই ভ্রমণবিলাসী বাঙালিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কাশ্মীরের আকাশ। পুজোর বাকি মাত্র ২২ দিন। তার আগে-পরে, এমনকী পুজোর মধ্যেও অনেকের ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে যে-ভাবে বৃষ্টি হয়েই চলেছে, জল যে-ভাবে রোজ বাড়ছে, তাতে ভূস্বর্গের রাজধানী শ্রীনগরও জলবন্দি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

পুজোয় বাংলার আকাশ ঠিক কোন মেজাজে থাকবে, নিশ্চিত নয়। তবে ইতিমধ্যেই ভ্রমণবিলাসী বাঙালিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কাশ্মীরের আকাশ।

Advertisement

পুজোর বাকি মাত্র ২২ দিন। তার আগে-পরে, এমনকী পুজোর মধ্যেও অনেকের ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা আছে। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে যে-ভাবে বৃষ্টি হয়েই চলেছে, জল যে-ভাবে রোজ বাড়ছে, তাতে ভূস্বর্গের রাজধানী শ্রীনগরও জলবন্দি। ডাল লেক উপচে তেতলা ছুঁয়েছে। অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বৈষ্ণোদেবী দর্শন। আবহাওয়া দফতর জম্মু-কাশ্মীরে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। এই অবস্থায় যাঁরা পুজোয় কাশ্মীর যাওয়ার জন্য পর্যটন সংস্থার সঙ্গে কথা পাকা করে ফেলেছেন, তাঁদের চিন্তা বাড়ছে। মহালয়ার পর থেকে কাশ্মীরে পর্যটক নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে বহু ভ্রমণ সংস্থা। তাদের অনেকেরই ‘বুকিং ফুল’। কিন্তু কাশ্মীরের ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতির খবর পেয়ে অনেকেই বুকিং বাতিল করার জন্য পর্যটন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। যাঁরা বুকিং করেছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে অনেক পর্যটন সংস্থাও।

কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থা ৫ সেপ্টেম্বরই ৪২ জনের একটি দল নিয়ে জম্মু ও হিমাচলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। দলটি রবিবার ধর্মশালায় পৌঁছেছে। ওই ভ্রমণ সংস্থার পক্ষে নিতাই সেনগুপ্ত বলেন, “জম্মু-কাশ্মীরের বন্যা পরিস্থিতির জন্য আমরা সফরসূচি কিছুটা অদলবদল করতে পারি। তবে ধর্মশালায় এ দিন রোদ উঠেছে। জম্মুতেও সূর্যের দেখা মিলেছে বলে আমরা খবর পেয়েছি।” সংস্থাটি পুজোর মধ্যে পর্যটকদের বৈষ্ণোদেবী নিয়ে যাচ্ছে। তাদের সব আসনই ভরে গিয়েছে। সব ব্যবস্থা পাকা। এই অবস্থায় কী হবে? নিতাইবাবুর বক্তব্য, দিন পনেরোর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। জাতীয় সড়ক ও বুলেভার্ড রোড অক্ষত থাকলে শ্রীনগরে ঘুরতে সমস্যা হবে না। তাঁর আশ্বাস, “দুর্গাপুজো ও কালীপুজোর মধ্যে যাঁরা কাশ্মীর যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁদের এখনই চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।”

Advertisement

কলকাতার অন্য একটি পর্যটন সংস্থা সম্প্রতি পর্যটকদের নিয়ে ভূস্বর্গ ভ্রমণে বেরিয়েছিল। কিন্তু কাশ্মীরের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় পর্যটকদের জম্মু থেকেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে সংস্থার তরফে রাধিকা গাথানি এ দিন জানান। পুজোয় ১৮ জনের একটি দলকে কাশ্মীরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল ওই সংস্থার। রাধিকাদেবী বলেন, “যাঁরা আমাদের সঙ্গে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, তাঁরাও ফোন করছেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা কাশ্মীরের বুকিং আপাতত ‘হোল্ড’-এ (সাময়িক ভাবে স্থগিত) রেখেছি। ওই পর্যটকদের উত্তর ভারতের অন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে।”

যাঁরা নিজেরাই ভূস্বর্গ ভ্রমণে যাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন, চিন্তা বেড়েছে তাঁদেরও। লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা শৈবাল গঙ্গোপাধ্যায় পুজোয় সপরিবার কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ২৯ সেপ্টেম্বর রওনা হওয়ার কথা। ফেরার কথা লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন। কিন্তু কাশ্মীরের অবস্থা দেখে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার উদ্বিগ্ন। শৈবালবাবু বলেন, “আমাদের সমস্ত বুকিং তিন মাস আগে থেকে হয়ে আছে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি না, কী হবে। শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গেলেই সমস্যা।” পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন সল্টলেকের অগ্নিমিত্র বিশ্বাস। ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে তাঁরা পরিকল্পনা বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অগ্নিবাবু বলেন, “আর দু’দিন দেখব। তার পরে হয়তো অন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে।”

কাশ্মীরের বদলে যাঁরা এখন অন্যত্র যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁদের অনেকেরই ভাবনা আবার বাজেট নিয়ে। বিশেষ করে যাঁরা অনেক আগে কাশ্মীরের জন্য বিমানের টিকিট কেটে রেখেছেন। এখন টিকিট বাতিল করলে তাঁদের কতটা আর্থিক ক্ষতি হবে, সেই হিসেব শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের সভাপতি অনিল পাঞ্জাবি জানান, যাঁরা কয়েক মাস আগে থেকে কাশ্মীরে যাওয়ার বিমানের টিকিট বুক করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই টিকিট বাতিল করতে চাইছেন। কয়েক মাস আগে কাশ্মীরে যাতায়াতের বিমান টিকিট মাথাপিছু ১০-১২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এখন সেগুলি বাতিল করতে গেলে বিমান সংস্থাগুলি ছ’হাজার টাকা কেটে নেবে। অনিলবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে যাতে টিকিট বাতিল করা না-হয়, বিমান সংস্থাগুলিকে সেই অনুরোধ করা হবে। টিকিট ‘হোল্ড’-এ রাখলে ছ’মাসের মধ্যে পর্যটকেরা ওই ভাড়ায় অন্য কোথাও যেতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন