প্রিয়জনের খোঁজে হাহাকার ত্রাণশিবিরে

বৃষ্টি থামার পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়। বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে এখন সবাই খুঁজছে তাঁদের প্রিয়জনের মুখ। সবার মুখে মুখে ফিরছে একই কথা। কবে দেখা হবে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। প্রায় প্রত্যেকের কথাতেই উঠে আসছে, কী ভাবে গৃহস্থালির পরিত্যক্ত জিনিসগুলি আঁকড়ে ধরে একে অপরকে জলে ভেসে থাকতে সাহায্য করেছিলেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫২
Share:

বন্যায় ভেঙে গিয়েছে বাড়ি। মঙ্গলবার শ্রীনগরের আবি গুজারে। ছবি: পিটিআই

বৃষ্টি থামার পর কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহেরও বেশি সময়। বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে এখন সবাই খুঁজছে তাঁদের প্রিয়জনের মুখ। সবার মুখে মুখে ফিরছে একই কথা। কবে দেখা হবে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। প্রায় প্রত্যেকের কথাতেই উঠে আসছে, কী ভাবে গৃহস্থালির পরিত্যক্ত জিনিসগুলি আঁকড়ে ধরে একে অপরকে জলে ভেসে থাকতে সাহায্য করেছিলেন।

Advertisement

জম্মু-কাশ্মীরের বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’লক্ষ ৩০ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে সেনা। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ১৯টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।

তবে প্রশ্ন একটাই। এই ভাবে আর কত দিন থাকতে হবে তাঁদের। ভূস্বর্গের ফের চেনা ছন্দে ফিরতে আর কত সময় লাগবে, সে ব্যাপারে ঠিক ভাবে কিছু বলতে পারছে না সরকার। মঙ্গলবার উদ্ধার করা হয়েছে ১৩ জনের দেহ। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দু’শোর বেশি।

Advertisement

গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজ্যে বন্যা সতর্কতা জারি করেছিল জম্মু ও কাশ্মীরের আবহাওয়া দফতর। সে দিন রাত হওয়ার আগেই নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছিল রাজৌরি, আখনুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের। কিন্তু অনেকেই সরকারের সেই সতর্কবার্তা কানে নেননি। নিজেদের বাড়ি ছেড়ে যেতে চাননি। আর সে রাতেই ঘটেছিল প্রথম অঘটন। এমনটাই দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার। আকাশভাঙা বৃষ্টিতে সেই রাতে দু’কূল ছাপিয়ে উপচে পড়েছিল শ্রীনগরের দুধগঙ্গা নদী। প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। জায়গায় জায়গায় নামে ধস। বন্ধ করে দেওয়া হয় জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়ক। ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর আজ খুলেছে এই সড়ক।

আজ শ্রীনগরের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এসেছেন ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান অরূপ রাহা। প্রায় ৮০টি হেলিকপ্টার উদ্ধার কাজের জন্য রাখা হয়েছে। প্রতি দিন ৪ লক্ষ লিটার পানীয় জল পাঠাচ্ছে হায়দরাবাদ সরকার। হায়দরাবাদ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, যোধপুর, রায়পুর থেকেও পানীয় জল পাঠানো হয়েছে। বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, প্রায় ৭৫ হাজার মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের অনেকের অভিযোগ, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী সব জায়গায় ঠিক মতো পৌঁছচ্ছে না।

উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য মঙ্গলবারই নিউ ইয়র্ক থেকে একুশটি নৌকো এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে বাক্সবন্দি করে নিয়ে আসা হয়েছে শ্রীনগরে। নৌকোগুলি হাওয়া দিয়ে ফোলানো যায়।

ওই বিমান সংস্থার পক্ষ থেকে আজ জানানো হয়েছে, নিউ ইয়র্ক থেকে রবারের ওই নৌকোগুলি কাশ্মীরের বন্যা আক্রান্ত এলাকায় পৌঁছে দিতে ওই বিমানসংস্থাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। রবিবার সন্ধেয় দিল্লি পাঠানো হয় এই নৌকোগুলি। এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র জানান, কাশ্মীরে আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করতে বিশেষ বিমানও চালাচ্ছে ওই সংস্থা। তিনি আরও জানান, উদ্ধারকাজে সাহায্যের জন্য বিমানে করে আক্রান্ত এলাকায় নৌকো পৌঁছে দেওয়ার কোনও নজির নেই।

অন্য দিকে, জলমগ্ন অবস্থায় টানা দশ দিন ঘরবন্দি থেকে নিজের অভিজ্ঞতা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন রাজ্যের ক্রিকেটার পারভেজ রসুল। জল খানিকটা নামতেই বাড়ির ছাদে নিয়ে গিয়েছেন নিজের প্রিয় দু’টি ক্রিকেট কিট। পারভেজ বললেন, “বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। টেলিফোনও কাজ করছিল না। গোটা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিলাম।” তাঁর আশা, আরও এক সপ্তাহ পর হয়তো পরিস্থিতি ভাল হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন