পাশে বাঙালিরাই, শ্রাদ্ধ নিবেদিতার

অসহিষ্ণুতাকে হারিয়ে শুভবুদ্ধির উদয়। সাক্ষী থাকল দিল্লির বাঙালি পাড়া চিত্তরঞ্জন পার্ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৩২
Share:

অসহিষ্ণুতাকে হারিয়ে শুভবুদ্ধির উদয়। সাক্ষী থাকল দিল্লির বাঙালি পাড়া চিত্তরঞ্জন পার্ক।

Advertisement

মন্দির প্রাঙ্গণে নিবেদিতা ঘটক রহমানের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের অনুমতি দেননি চিত্তরঞ্জন পার্কের কালীমন্দির সোসাইটির কর্তারা। কারণ নিবেদিতা হিন্দু হলেও তাঁর স্বামী মহম্মদ ইমতিয়াজুর রহমান মুসলিম। দিল্লিতে এসে বিপদে পড়া কলকাতার ইমতিয়াজুরের পাশে দাঁড়ালেন ওই পাড়ারই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মেমোরিয়াল সোসাইটির সদস্যেরা। তাঁদের উদ্যোগে চিত্তরঞ্জন ভবনে রবিবার দুপুরে মিটে গেল নিবেদিতার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে প্রেমে পড়েছিলেন ইমতিয়াজুর ও নিবেদিতা। ফারসির ছাত্রের সঙ্গে বাংলার ছাত্রীর বিয়ে হয় বিশেষ বিবাহ আইনে। কেউই ধর্মান্তরিত হননি। ইমতিয়াজুর সরকারি চাকুরে। নিবেদিতা পড়াতেন কলকাতার একটি নামী স্কুলে।

Advertisement

রূপকথায় দুর্যোগ দেখা দেয় নিবেদিতার অসুস্থতা ঘিরে। লিভারের চিকিৎসার জন্য তাঁদের দিল্লি আসতে হয়। নিবেদিতার বোন কৃত্তিকা অঙ্গদানও করেছিলেন দিদিকে। কিন্তু নিবেদিতা বাঁচেননি। অঙ্গদানের পরে কৃত্তিকা পুরোপুরি সুস্থ হননি বলে গোটা পরিবারকে এখনও দিল্লিতে থাকতে হচ্ছে। তাই দিল্লিতেই নিবেদিতার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে কালীমন্দিরে বুকিং করেছিলেন ইমতিয়াজুররা। কিন্তু তাঁদের
জানিয়ে দেওয়া হয়, শ্রাদ্ধের অনুমতি মিলবে না।

কেন? কালীমন্দির সোসাইটির সভাপতি অসিতাভ ভৌমিক বলেন, ‘‘ওঁরা পরিচয় লুকিয়েছিলেন। পুরোহিত ফোন করে গোত্র জানতে চাওয়ায় বলতে পারেননি। পরে নিজেদের আসল নাম বলেন। কালীমন্দিরের কারও সঙ্গে কথা না-বলে মিডিয়া, ফেসবুকে নিন্দে-মন্দ শুরু করেন ওঁদের বন্ধুরা। যাঁরা কেউ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের, কেউ এসএফআই। অর্থাৎ বামপন্থী। হিন্দুধর্মকে ছোট করে দেখাতে চান। তাই আমরাও অবস্থান নিই, এটা হিন্দু মন্দির। এখানে ও সব চলবে না।’’

স্ত্রীর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের পরে ইমতিয়াজুর বলেন, ‘‘আমরা আর এই দোষারোপে ঢুকতে চাই না। কলকাতায় ফিরতে চাই। মেয়েটা আবার স্কুলে যাবে। অনেকে এগিয়ে এসেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ।’’

পরিবারের যুক্তি, নিবেদিতার হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস অটুট ছিল। তাই হিন্দু মতেই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে কালীমন্দিরে যাওয়া হয়েছিল। কালীমন্দিরের অসিতাভবাবুর
যদিও প্রশ্ন, ‘‘নিবেদিতা যদি হিন্দুই হবেন, তা হলে পদবিতে ‘রহমান’ থাকবে কী করে?’’

ইমতিয়াজুর-নিবেদিতার মেয়ের নাম ইহিনি আমব্রিন। প্রথম নামটি মায়ের দেওয়া। দ্বিতীয়টি বাবার। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী কোনও পদবি ব্যবহার করে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন