ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মদিন পালন। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র ।
দিল্লিতে ধুলোর আস্তরণ ভেদ করে দেখা যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাসিমুখ। দোতলার ঘর থেকে ভেসে আসছে গিটারের আওয়াজ। আর ‘হ্যাপি বার্থডে’ গান।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই দেখা গেল নীল-সাদা বেলুন। আর ট্রাম্পের জন্মদিন নিয়ে হুল্লোড়। পেল্লাই এক কেক কাটা হচ্ছে। কেকের উপরে ট্রাম্পের বয়স লেখা ৭২। কে বলবে রাজধানী দিল্লির নর্থ অ্যাভিনিউ-এ সাংসদ পাড়ায় আজ দুপুরে এ ভাবে জন্মদিন পালন হচ্ছে আমেরিকার রাষ্ট্রপতির? ওয়াশিংটনে এখন কানা রাত। ট্রাম্প কি আদৌ জানতে পারলেন, ভারতের রাজধানীতে তাঁর জন্মদিন নিয়ে মেতে উঠেছে একটি হিন্দু সংগঠন?
নাম ‘হিন্দু সেনা’। জন্ম ২০১১ সালে। তার পর থেকে হিন্দুদের স্বার্থ নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করে এসেছে সংগঠনটি। ২০১৪-য় মোদীর হয়ে প্রচারও করেছে। ২০১৫ সালে ‘গোমাংস’ বিতর্কের সময়ে দিল্লির কেরল ভবনে হুজ্জুতি করেও গ্রেফতার হয়েছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বিষ্ণু গুপ্ত। গত সপ্তাহে অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে তাঁর ছবি পুড়িয়েছিলেন বিষ্ণুরা। আজ ইতিনিই ট্রাম্পের কাট-আউটে কেক খাওয়াচ্ছেন। বলছেন, ‘‘ট্রাম্প আমাদের ‘হিরো’। তাঁর থেকে বড় নেতা গোটা দুনিয়ায় নেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই বলেছিলেন, ‘ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ’কে খতম করবেন। তখন থেকে তিনিই আমাদের আদর্শ। তাঁর জন্যই পাকিস্তান এখন চাপে। সদ্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রফা করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকানো— তিনিই পেরেছেন।’’
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যে যুক্তিতে এ সংগঠন ট্রাম্পে মেতেছে, সেই কারণেই মোদীরও ভক্ত হবেন— বিশেষ করে গত লোকসভায় তাঁর হয়ে প্রচার করার পর?
এ বারে চোয়াল শক্ত সংগঠনের নেতার। সপাট বললেন, ‘‘না। গত লোকসভা ভোটের আগে হিন্দুদের জন্য ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। না হল রামমন্দির, না হল গো-হত্যা বন্ধে আইন। উল্টে গোরক্ষকদেরই ‘গুন্ডা’ বানিয়ে দিলেন। কোনও প্রচার করব না মোদীর জন্য।’’ ট্রাম্পের মতো মোদীর জন্মদিন পালন? ‘‘তা-ও না।’’
দিল্লির মন্দির মার্গে হিন্দু মহাসভা ভবনের একটি ঘরে সংগঠনের দফতর। কিন্তু ট্রাম্পের জন্মদিন পালন হল নর্থ অ্যাভিনিউয়ে সাংসদ ক্লাবে। যে ক্লাবে অনুষ্ঠান করতে হলে কোনও না কোনও সাংসদের সুপারিশ লাগে। তা হলে ‘হিন্দু সেনা’র হয়ে সুপারিশ কে করলেন? বিষ্ণু গুপ্ত বলেন, ‘‘বিজেপিরই এক সাংসদ। মোদীর জমানায় তো অনেক সাংসদই দমে রয়েছেন। তাঁদেরই কেউ এক জন!’’