the red fort

পরিখায় বইত যমুনার জল, শাহজাহানের তৈরি রুপোর ছাদের লালকেল্লা ছিল মুঘলদের প্রধান বাসভবন

সে ঘরের ছাদ বা সিলিং ছিল খাঁটি রুপো দিয়ে তৈরি। সপ্তদশ শতকে রুপোর ছাদের নীচে ময়ূর সিংহাসনের চোখ ঝলসে দেওয়া রূপে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ের।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ১১:০৭
Share:
০১ ১৮

পঞ্চম মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পছন্দের রং ছিল লাল-সাদা। রাজধানীতে বসবাসের জন্য যে প্রাসাদ নির্মাণ করিয়েছিলেন তিনি, তার মূল উপকরণ ছিল লাল বেলেপাথর। সেই থেকে প্রাসাদের নাম হয়ে গেল লালকেল্লা।

০২ ১৮

আগরা থেকে‌ মুঘল রাজধানী দিল্লিতে সরিয়ে এনেছিলেন শাহজাহান। নতুন রাজধানীর নাম দিয়েছিলেন শাহজানাবাদ। সেখানেই নির্মাণ করিয়েছিলেন লালকেল্লা। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের আগে পর্যন্ত এই প্রাসাদ ছিল তাঁদের শাসনের মূল কেন্দ্র। ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে এই প্রাসাদে বিচারের পরই শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে তৎকালীন বর্মার রেঙ্গুন, আজকের মায়ানমারের ইয়াঙ্গনে পাঠিয়েছিল ব্রিটিশরা।

Advertisement
০৩ ১৮

সম্রাট শাহজাহান তথা মুঘল সাম্রাজ্যের শিল্পসুষমার অন্যতম নিদর্শন এই প্রাসাদ। যমুনার তীরে এর নির্মাণপর্ব শুরু হয়েছিল ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে। ৯ বছর ধরে চলেছিল কাজ। তাজমহলের মূল স্থপতি উস্তাদ আহমেদ লাহোরি-ই ছিলেন এই স্থাপত্যের নেপথ্যে।

০৪ ১৮

পার্সিয়ান, মুঘল, ইউরোপীয় এবং হিন্দু স্থাপত্যরীতি মিলিয়ে গড়া এই কেল্লার প্রাথমিক নাম ছিল ‘কিলা-ই-মুবারক’। তখন আগরা কেল্লাকে বলা হত লালকেল্লা। কিন্তু পরে শাহজানাবাদ, বা আজকের পুরনো দিল্লির প্রাসাদের নামই হয়ে যায় লালকেল্লা।

০৫ ১৮

লালকেল্লার অন্যতম স্থাপত্য ‘লাহোরি দরজা’। এই অংশেই ১৯৪৭ থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। পাশাপাশি, দিল্লি দ্বারও উল্লেখযোগ্য।

০৬ ১৮

কেল্লার ‘ছাত্তা চক’-এ বসত বাজার। এই বাজারের পসরা ছিল শুধুমাত্র মুঘল রাজ পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনেই। ছিল নহবতখানা। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বেজে উঠত নির্দিষ্ট সঙ্গীত।

০৭ ১৮

প্রাসাদের দেওয়ান-ই-আম ছিল সাধারণ মানুষের জন্য। সেখানেই তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনতেন মুঘল সম্রাট। দেওয়ান-ই-খাস অবশ্য ছিল শুধুমাত্র সম্রাট এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের জন্য। সে ঘরের ছাদ বা সিলিং ছিল খাঁটি রুপো দিয়ে তৈরি। সপ্তদশ শতকে রুপোর ছাদের নীচে ময়ূর সিংহাসনের চোখ ঝলসে দেওয়া রূপে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ের।

০৮ ১৮

মুমতাজমহল ছিল সম্রাজ্ঞী এবং মুঘল সম্রাটের অন্য স্ত্রীদের জন্য। রংমহল মূলত ছিল সম্রাটের অন্য জেনানাদের জন্য। বাহারি কাচ ও মোজাইক দিয়ে সাজানো ছিল এই অংশ। খাসমহল ছিল সম্রাটের একান্ত জায়গা। তাঁর অনুমতি ছাড়া এখানে কারও প্রবেশাধিকার ছিল না।

০৯ ১৮

পরিখা দিয়ে যমুনা নদীর জল প্রবেশ করত প্রাসাদে। সেই পরিখার নাম ছিল ‘নহর-ই-বেহেস্ত’। যমুনার জল এই পরিখা দিয়ে পৌঁছে যেত হামাম-সহ প্রাসাদের সর্বত্র। এ ছাড়াও ছিল বাওলি বা ধাপকুয়ো। মনে করা হয়, লালকেল্লা নির্মাণের আগেই এটা তৈরি হয়েছিল। সিপাহি বিদ্রোহে লালকেল্লার বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস করেছিল ব্রিটিশরা। তবে তারা বাওলিকে অক্ষত রেখেছিল। পরে এটিকে তারা কারাগারে রূপান্তরিত করেছিল।

১০ ১৮

লালকেল্লার অন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম মোতি মসজিদ, হীরামহল, হায়াত বকশ বাগ এবং প্রিন্সেস কোয়ার্টার। পরে সিপাহি বিদ্রোহে ব্রিটিশ আক্রমণে এই মহল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর একটি অংশ নির্ধারিত হয়েছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চা-পানের জন্য।

১১ ১৮

২৫০ একরের বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত লালকেল্লাকে ঘিরে আছে প্রায় আড়াই কিলোমিটার লম্বা প্রাচীর। কিন্তু তা সত্ত্বেও বারবার এই দুর্গ বিধ্বস্ত হয়েছে আক্রমণে। ১৭৪৭ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট নাদির শাহের অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই প্রসাদ। নির্বিচারে লুঠ করা হয় ময়ূর সিংহাসন-সহ প্রাসাদের সম্পদ।

১২ ১৮

নাদির শাহের আক্রমণে মুঘল শাসন এতই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, দিল্লি আধিকার করে মরাঠা শক্তি। এ দিকে আফগান শাসক আহমদ শাহ দুরানি বা আহমদ শাহ আবদালির সঙ্গে তখন মরাঠাদের শত্রুতা চরমে। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিকে দুরানির আক্রমণ থেকে বাঁচাতে যুদ্ধের অর্থ সংগ্রহে মরাঠারা লালকেল্লার দেওয়ান-ই-খাসের ছাদের রূপোর পাত খুলে তা গলিয়ে বিক্রি করেছিল।

১৩ ১৮

কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আফগান শাসক আহমদ শাহ আবদালির কাছে পরাজিত হয় মরাঠা শক্তি। সেই সুযোগে দিল্লিতে অবাধ লুঠতরাজ চালান আবদালি।

১৪ ১৮

এর দশ বছর পরে শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে আসে মরাঠারা। তাদের সমর্থনে ষোড়শ মুঘল সম্রাট ঘোষিত হন শাহ আলম। কিন্তু ততদিনে লালকেল্লা অধিকার করে নিয়েছে শিখ শক্তি। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য শিখদের কাছে পদানত ছিল লালকেল্লা। কিন্তু ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে মরাঠারা প্রবল পরাক্রমে ফিরে এসে আবার অধিকার করে ক্ষমতার এই কেন্দ্রকে।

১৫ ১৮

এরপর টানা কুড়ি বছর লালকেল্লা ও দিল্লিতে কায়েম ছিল মরাঠা শাসন। সেই অধ্যায়ের অবসান ঘটে ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে। সে বছর দ্বিতীয় ইঙ্গ মরাঠা যুদ্ধে পরাজিত হয় মরাঠারা। লালকেল্লা ও দিল্লি, দুই-ই অধিকার করে ব্রিটিশরা। স্বাধীনতা লাভের আগে অবধি তারাই ছিল লালকেল্লার অধীশ্বর।

১৬ ১৮

মাঝে, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ছিল দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের অধ্যায়। তবে তা নেহাতই বকলমে। তাঁকে সিপাহি বিদ্রোহের মুখ করা হয়েছিল। কিন্তু এই বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করে ব্রিটিশরা। ফলে এই লালকেল্লা থেকেই ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে সাবেক রেঙ্গুন পাড়ি দেন নির্বাসিত তথা বন্দি, শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর।

১৭ ১৮

এরপর কয়েক যুগ ধরে লালকেল্লাকে ধ্বংস করেছে, লুঠ করেছে ব্রিটিশরা। দুর্মূল্য রত্ন, বিরল ভাস্কর্য, দামি আসবাবপত্র, মার্বেলফলক থেকে শুরু করে অসংখ্য জিনিস তারা হস্তগত করেছে। কোহিনূর হিরে এখন শোভা পায় ব্রিটিশ রাজমুকুটে। জেডপাথরে তৈরি শাহজাহানের সুরাপাত্র, দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের মকুট সবই রয়েছে লন্ডনে। তবে এ সব হিমশৈলের চূড়ামাত্র।

১৮ ১৮

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে দীর্ঘ সময় অবধি লালকেল্লা ছিল সৈন্যঘাঁটি। কেল্লার একটা বড় অংশ ছিল ভারতীয় সেনার তত্ত্বাবধানে। ২০০৩ সাল থেকে শৌর্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক লালকেল্লা রয়েছে ভারতীয় পুরাতাত্বিক সর্বেক্ষণের অধীনে। ২০০৭ সালে এই স্থাপত্যকে ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। (ছবি: আর্কাইভ ও সোশ্যাল মিডিয়া)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement