হিজবুল মুজাহিদিনের মাথা কে, টানাপড়েন সংগঠনেই

সমস্যার সূত্রপাত হয় হিজবুল কম্যাণ্ডার জাকির মুসা কাশ্মীরের সংগ্রামকে ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার’ লড়াই বলে হুরিয়ত নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসার পরেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০৩:৩৭
Share:

হিজবুল কম্যান্ডার রিয়াজ নাইকু।

দক্ষ নেতার খোঁজে হিজবুল মুজাহিদিন।

Advertisement

এক বছর আগে বুরহান ওয়ানির মৃত্যু, বুরহানের উত্তরসূরি জাকির মুসার দলত্যাগ এবং সেই ঘটনার দিন কয়েকের মধ্যে সবজার বাটের মৃত্যুতে কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে হিজবুল। কাশ্মীরের অন্যতম কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠনের দায়িত্ব কার হাতে যাবে তা নিয়ে চলছে চরম টানাপড়েন। ক্ষমতা দখলের দৌড়ে উঠে এসেছে একাধিক জঙ্গির নাম। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, নেতৃত্বের অভাবকে কারণ দেখিয়ে সাময়িক ভাবে হিজবুলকে চালানোর দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিতে পারে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সমস্যার সূত্রপাত হয় হিজবুল কম্যাণ্ডার জাকির মুসা কাশ্মীরের সংগ্রামকে ‘খিলাফত প্রতিষ্ঠার’ লড়াই বলে হুরিয়ত নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসার পরেই। আদর্শজনিত বিরোধে মুসা হিজবুল ত্যাগ করে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে গা-ঢাকা দেয়। এ যাবৎ উপত্যকার সংঘাতকে রাজনৈতিক লড়াই বলেই ব্যাখ্যা করে এসেছেন হুরিয়ত নেতৃত্ব। তাই কাশ্মীরের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও সে ভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্তি বা ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের ডাক দিতে দেখা যায়নি মধ্যপন্থী হুরিয়ত নেতৃত্বকে।

Advertisement

কিন্তু যে ভাবে গত এক মাস ধরে কাশ্মীরে সেনা সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে তাতে এখন রীতিমতো অস্বস্তিতে হুরিয়ত নেতৃত্ব। সেনার মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন মিরওয়াইজ উমর ফারুকের মতো মধ্যপন্থী নেতারাও। কংগ্রেসের একাংশ মনে করছে, সরকারের এই দমননীতিতে আখেরে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে যে মধ্যপন্থী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে এত দিন উপত্যকার ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা করে এসেছে দিল্লি, এ বার তাঁরাও মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। এই ঘোলা জলে ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে নিয়মিত ভাবে হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা শুরু করেছে পাকিস্তান। উপত্যকার সঙ্গে দিল্লির দূরত্ব যত বাড়ছে, ততই কাছে এগিয়ে আসছে ইসলামাবাদ। তাতে অবশ্য অভিযানে ঢিল রাজি নয় সেনা। সেই কারণে আজ হিজবুলের একাধিক জঙ্গির তালিকা ছবি-সহ প্রকাশ করে সেনা। বার্তা স্পষ্ট, নেতৃত্বের সঙ্কটে ভোগা হিজবুলকে একেবারে নিকেশ করার এটাই হল উপযুক্ত সময়।

আরও পড়ুন:স্থগিতাদেশ মাদ্রাজ হাইকোর্টের

সেনা গোয়েন্দা সূত্রে খবর, হিজবুলের শীর্ষ স্থান দখলের দৌড়ে রয়েছে একাধিক জঙ্গি। বছর তিরিশের রিয়াজ নাইকু শিক্ষিত ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ। হিজবুলে পুলওয়ামা জেলার দায়িত্বে থাকা রিয়াজ ২০১২ সালে বুরহান ওয়ানির সঙ্গেই হিজবুলে যোগদান করে। সেনার খতমসূচিতে ওই জঙ্গির স্থান ‘এ++’ বা ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে। সোপিয়ানের বাসিন্দা ও বর্তমানে ওই জেলার দায়িত্বে থাকা সাদ্দাম পাদার ২০১৫ সালে হিজবুলে যোগদান করে। বুরহান গোষ্ঠীর ওই সদস্য কিছুটা নরমপন্থী এবং কাশ্মীরের হিন্দু পন্ডিতদের ফিরে আনার পক্ষেও সরব। বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে পরবর্তী নেতা হিসেবে সাদ্দামের নাম উঠে এলেও শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব পায় জাকির মুসা।

দৌড়ে রয়েছে বদগামের বাসিন্দা ইয়াসিন আইটোও। ২০১৫ সালে হিজবুলে নাম লেখানো ৪০ বছর বয়সী ইয়াসিন এই তালিকায় সবচেয়ে প্রবীণ। অধিকাংশ জঙ্গি নেতার নিজের জেলার বাইরে প্রভাব খুব সামান্য হলেও ব্যতিক্রম কেবল ইয়াসিন। তাই ইয়াসিনকে সামনে রেখে সমন্বয়ের উপরে জোর দিতে পারে হিজবুল। দায়িত্বের প্রশ্নে নাম রয়েছে লস্কর নেতা আবু দুজানা ওরফে হাফিজেরও। পাকিস্তানের বাসিন্দা হাফিজ প্রায় চার বছর ধরে দক্ষিণ কাশ্মীরে লস্করের নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রয়োজনে আপাতত দুই সংগঠনের যৌথ দায়িত্ব তার হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করছেন গোয়েন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন