প্রতীকী ছবি।
ফের হোমে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। বিহার, উত্তরপ্রদেশের পর এ বার মধ্যপ্রদেশে। ভোপালে মূক ও বধিরদের একটি হোমে আবাসিকদের ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল হোমের মালিক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা জওয়ান এম পি অবস্তি-সহ চার জনকে। নির্যাতিতদের মধ্যে নাবালক-নাবালিকারাও ছিল বলে অভিযোগ।
ঘটনাটি সামনে আসার পরেই সরব হয় কংগ্রেস। গত কাল হোমের আবাসিকদের এনে প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন নেতারা। সেখানে বিশেষ অনুবাদকের মাধ্যমে ওই ছেলে-মেয়েরা হোমে ধারাবাহিক নির্যাতনের অভিযোগ করে। পরে ৪০ জন আবাসিককে নিয়ে গিয়ে রাজ্যের সামাজিক ন্যায় দফতরেও নালিশ জানান কংগ্রেসের নেতারা। পরে টি টি নগর থানায় অভিযোগ জানায় ওই আবাসিকেরা।
গত বছর ধর্ষণের অভিযোগ ওঠায় হোমের হোশাঙ্গাবাদ শাখাটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সে বার পুলিশে অভিযোগ না হওয়ায় গ্রেফতার হয়নি কেউ। সম্প্রতি বৈরাগঢ় শাখার আবাসিক চারটি ছেলে ও দু’টি মেয়ে অভিযোগ তোলে, দীর্ঘ দিন ধরে ধর্ষণ ও শারীরিক অত্যাচারের ফলে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। যৌন নির্যাতনের পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে একটি ছেলের। মারের চোটে মাথার গুরুতর আঘাত লেগে মারা যায় এক জন। সারা রাত বাইরে থাকতে বাধ্য হওয়ায় জ্বরে মৃত্যু হয় একটি শিশুর। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় এখনও খুনের মামলা করা হয়নি।
মাস কয়েক আগেই বিহারের মুজফ্ফরপুরের একটি হোমে ৩৪টি মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসে। গত মাসে উত্তরপ্রদেশের দেবরিয়ায় একটি হোম থেকে উদ্ধার হয় ২৪ জন নাবালিকা। যৌন হেনস্থা ও পাচারের অভিযোগ উঠেছিল এই হোমটিতেও। এর পরেই সারা দেশে হোমগুলির অবস্থা নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেয় শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সেই রিপোর্টে ভয়াবহ সব তথ্য উঠে এসেছে। যার জেরে আজ, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিটি রাজ্যের হোমের হাল নিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক।
২০০৩ থেকে হোমটিতে ৪২ জন ছেলে ও ৫৮ জন মেয়ে আবাসিক রয়েছে। হোমটির দেখাশোনা করত মিতা মিশ্র তার স্বামী বিজয় কুমার মিশ্র ও বিজয় চৌধরি নামে এক সরকারি শিক্ষক। তাদের প্রত্যেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত বছর হোমটির হোশাঙ্গাবাদ শাখায় ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন ১৮ বছরের এক মূক ও বধির মেয়ে। তিনি জানান, পাঁচ বছর বয়সে তাকে হোমে রেখে পালান তাঁর বাবা-মা। মালিক তাঁকে দিয়ে বাড়ির কাজ করাত। চলত মারধরও। ২০১০ সালে প্রথম ধর্ষণের শিকার হন তিনি। দু’বছর বাদে তাঁকে অন্য একটি হোমে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে ফের ওই হোমটিতে আনা হয় তাঁকে। গত বছর হোশাঙ্গাবাদের জেলাশাসককে এই নিয়ে অভিযোগ জানায় ওই তরুণী। তদন্তের পরে হোমটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও এফআইআর না হওয়ায় ছাড় পেয়ে যায় অবস্তি।
সামাজিক ন্যায় দফতরের শীর্ষ কর্তা কৃষ্ণমোহন তিওয়ারি বলেছেন, ‘‘মূক ও বধির আবাসিকরা তাদের অনুবাদকের সাহায্যে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানিয়েছে। জেলাশাসকের কাছে তদন্তের জন্য চিঠি পাঠাচ্ছি।’’