(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম যে দেশগুলি সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিল, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। তবে আপাতত এই চুক্তির ভবিষ্যৎ খুব একটা উজ্জ্বল বলে মনে করছেন না কেউই। কারণ ট্রাম্প নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, শুল্ক-জটিলতা না-কাটলে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কথা এগোবে না। অর্থাৎ, ট্রাম্পের নির্দেশ মেনে রাশিয়া থেকে তেল এবং অস্ত্র আমদানি বন্ধ করতে হবে ভারতকে। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে দু’দফায় চাপানো ৫০ শতাংশ শুল্ক বিবেচনা করে দেখবেন। তার পর বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে ফের কথা শুরু হতে পারে। বন্ধু ভারত কী ভাবে ট্রাম্পের বিরাগভাজন হয়ে উঠল, ঘটনা পরম্পরা থেকে তার একটা ধারণা করা যেতে পারে।
৩ মার্চ
ওয়াশিংটনে সফরে গিয়েছিলেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই প্রথম বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কথা শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে। তার পর মোট পাঁচ বার আলোচনা হয়েছে দুই দেশের। বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা সারতে অগস্টের শেষেই আমেরিকার একটি প্রতিনিধিদলের ভারতে আসার কথা ছিল। তবে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের ঘোষণার পর সেই সম্ভাবনা আপাতত বিশ বাঁও জলে।
২১ এপ্রিল
ভারত সফরে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। তিনি জানালেন, বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথা এগোচ্ছে।
১০ মে
ট্রাম্প দাবি করলেন, বাণিজ্যে ছাড়ের কথা বলে তিনি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত থামিয়েছেন। ট্রাম্পের এই দাবি খারিজ করে দেয় ভারত।
১৭ মে
বাণিজ্যচুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে ফের ওয়াশিংটন সফরে গেলেন পীযূষ। ভারতের বাণিজ্য সচিব দাবি করলেন, বাণিজ্যিক বোঝাপড়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ‘খুব ভাল’ ভাবে আলোচনা এগোচ্ছে।
২৭ জুন
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তির ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প। বললেন, “আমরা দারুণ কিছু চুক্তি করতে চলেছি। একটি শীঘ্রই হচ্ছে। হয়তো সেটা ভারতের সঙ্গে। এটা খুব বড়।”
জুলাই
বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আর এক দফা আলোচনা সারতে ওয়াশিংটনে গেল ভারতের প্রতিনিধিদল। তবে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই দেশে ফিরলেন তাঁরা।
জুলাই
বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ জানালেন, কেবল নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নয়, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই বাণিজ্যচুক্তি করতে চায় ভারত। ট্রাম্প বাণিজ্যচুক্তির জন্য বিভিন্ন দেশকে ১ অগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, ওই তারিখের পর থেকে পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর হয়ে যাবে। যদিও ওই পারস্পরিক শুল্ক কার্যকর হয় ৭ অগস্ট থেকে। তবে শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করা হয়েছিল ৩১ জুলাই।
৩১ জুলাই
ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি হওয়া পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করলেন ট্রাম্প। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর জরিমানা (পেনাল্টি) করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
৬ অগস্ট
রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারতের উপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। ফলে ভারতের উপর প্রযুক্ত মোট শুল্কের পরিমাণ হয় ৫০ শতাংশ। ২৭ অগস্ট থেকে ভারতকে এই ৫০ শতাংশ শুল্ক দিয়েই পণ্য রফতানি করতে হবে বলে জানানো হয়।
কেন্দ্রের একটি সূত্রের খবর, আমেরিকা চায় ভারত কৃষিপণ্য, দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার তাদের জন্য পুরোপুরি খুলে দিক। কিন্তু তাতে নারাজ নয়াদিল্লি। তাড়াহুড়োয় কেবল আমেরিকার সুবিধা হয়, এমন একপাক্ষিক চুক্তি করতে নারাজ ভারত। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কথাবার্তা আর এগোয় কি না, তা-ই এখন দেখার।