স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছেন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: পিটিআই।
গোলাগুলির শব্দ। আকাশে আগুনের ফুলকি। ঘন ঘন বেজে উঠছে সাইরেন। নিবিয়ে দেওয়া হয়েছে সব আলো। আতঙ্কে ঘরবন্দি হতে হত ভারত-পাক সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের! গত কয়েক দিন ধরে এমনই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তবে শনিবার রাত থেকে ছবিটা পাল্টাতে শুরু করে। রবিবার সকালে সীমান্তবর্তী এলাকার পরিবেশ থমথমে হলেও খুশি সকলেই। কারণ, আর কোনও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে না। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। তবে জম্মু-কাশ্মীরের একেবারে সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলিতে এখনই বাসিন্দাদের ফিরতে নিষেধ করছে স্থানীয় পুলিশ। কারণ হিসাবে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে থাকা গ্রামগুলির নানা জায়াগায় না ফাটা অনেক বিস্ফোরক, শেল ছড়িয়ে রয়েছে। সেগুলি পরীক্ষার কাজ চলছে।
শনিবার বিকেলের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আচমকাই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির কথা জানান। পরে ভারত ও পাকিস্তানের সরকার ট্রাম্পের কথায় সায় দেয়। তারা জানায়, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে দুই দেশই। তার পর থেকেই উৎসবের মেজাজে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষেরা। অটারী সীমান্ত এলাকায় থাকা দোকানের মালিক ধরম সিংহের কাছে সংঘর্ষবিরতির অর্থ পুনরায় ব্যবসা শুরু করা! তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে আজ এক ধরনের উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।’’
শুধু ধরম সিংহ নয়, তাঁর মতোই আনন্দে মেতেছেন পঞ্জাবের ফিরোজ়পুর জেলার হুসেনওয়ালা সেক্টরের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারাও। তেমনই গ্রামের পঞ্চায়েতপ্রধান গুরমান সিংহের কথায়, ‘‘অবশেষে আমাদের জন্য সুখবর এসেছে। আমরা আবার মাঠে চাষের কাজ শুরু করতে পারব। তবে আমরা এ-ও জানি, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’’ রাজস্থানের পোখরান এলাকার এক বাসিন্দা নরেশ কুমার জানান, উদ্বেগ কাটল!
শনিবার বিকেলে সংঘর্ষবিরতির পর সীমান্তবর্তী এলাকায় শুরু হওয়া উৎসব আচমকাই ধাক্কা খায়। পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তোলে ভারত। সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগর উপত্যকায় শনিবার রাতে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জম্মু, উধমপুর-সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বেশ কিছু শহরে ব্ল্যাকআউট করা হয়। শুধু কাশ্মীর উপত্যকাতেই নয়, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অন্য রাজ্যগুলিতেও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করে স্থানীয় প্রশাসন। রাজস্থানের বাড়মের, জৈসলমের এবং পঞ্জাবের ফিরোজ়পুর, পঠানকোট, মোগা অন্ধকার করে দেওয়া হয়। এই ব্যাপারে কড়া বার্তাও দেয় ভারত। বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী বলেন, “গত কয়েক ঘণ্টা ধরে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনাও জবাব দিচ্ছে। এই লঙ্ঘন অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং এর জন্য দায়ী পাকিস্তান।” যদিও পাকিস্তান তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে।
শনিবার রাতের সেই উত্তেজনা ছিল সাময়িক। রবিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। রাস্তায় বার হচ্ছেন সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন।