Gautam Adani in Bribery Case

আদানিদের ‘ঘুষ’-কাণ্ড কী ভাবে প্রকাশ্যে এল, কেমন করেই বা নাম জড়িয়ে গেল রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সংস্থার

সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আদানিদের বিরুদ্ধে। আর এই ‘ঘুষ’-কাণ্ডে জড়িয়েছে এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নামও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৬
Share:

গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।

‘ঘুষ’-কাণ্ডে গৌতম আদানি এবং শিল্পপতির ঘনিষ্ঠ ছ’জনের নাম জড়ানোর পরেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত আদানির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আমেরিকার আদালত। বিশ্বের অন্যতম ধনী ওই শিল্পপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত পেতে অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারি আধিকারিকদের ঘুষ দিয়েছিলেন। ঘুষের পরিমাণ ২২৩৭ কোটি টাকা!

Advertisement

কী ভাবে সামনে এল ‘ঘুষ’-কাণ্ড?

আমেরিকার শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি এবং ন্যায়বিচার দফতরের দাবি মোতাবেক, ঘুষ দেওয়ার প্রত্যক্ষ প্রমাণ রয়েছে আদানিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে। দাবি মোতাবেক, কাকে কত ঘুষ দেওয়া হচ্ছে বা হবে, তার খতিয়ান রাখতেন গৌতম আদানির ভাইপো সাগর আদানি। তাঁর ফোন খতিয়ে দেখেন আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই-এর আধিকারিকেরা। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বার্তা চালাচালির জন্য ‘ষড়যন্ত্রীরা’ বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন বলে দাবি করা হয়েছে। এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, সেখানে আদানির ছদ্মনাম ছিল ‘নিউমেরো উনো’ (যার অর্থ নম্বর ওয়ান)।

Advertisement

আদানিদের বিরুদ্ধে কেন আমেরিকায় মামলা হল?

আদানিদের মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা ‘আদানি গ্রিন এনার্জি’ আমেরিকার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছে। সে দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে তারা আমেরিকার আইন মেনে চলতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে তারা ঘুষের টাকা আমেরিকার বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ, যা পুরোপুরি বেআইনি। ফলে মামলার মুখে পড়েছে তারা।

‘ঘুষ’-কাণ্ডে কী ভাবে জড়়াল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার নাম?

২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি চুক্তির মাধ্যমে স্থির হয় আদানি গ্রিন পাওয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (সেকি)-কে ৮ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করবে। ৪ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করবে আরও একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা অ্যাজ়িওর পাওয়ার। আদানিদের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, সৌরবিদ্যুৎ বিক্রি করে ২০ বছরে ২০০ কোটি ডলার (১৬,৯০০ কোটি টাকা) মুনাফা করা। কিন্তু চড়া দামে বিদ্যুৎ কেনার কারণে সস্তায় সেই বিদ্যুৎ কাউকে বিক্রি করতে পারছিল না সোলার এনার্জি কর্পোরেশন। অভিযোগ মোতাবেক, যাতে বিভিন্ন রাজ্যে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের বরাত সোলার এনার্জি কর্পোরেশন পায়, তার জন্য আসরে নামে আদানি গোষ্ঠী।

‘ঘুষ’-কাণ্ডের অনুক্রম

অভিযোগ মোতাবেক, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (সেকি) এবং অন্ধ্রের সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মধ্যে মউ (সমঝোতাপত্র) স্বাক্ষরের জন্য ১৭৫০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন আদানি। ২০২১ সালের ৭ অগস্ট অন্ধ্রপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএসআর জগন্মোহন রেড্ডির সঙ্গে নাকি দেখাও করেন ওই শিল্পপতি। অভিযোগ, তার পরেই ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে অন্ধ্রের সরকারি সংস্থার সঙ্গে সোলার এনার্জি কর্পোরেশনের সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অভিযোগ, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ওড়িশা, তামিলনাড়ু, জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্তীসগঢ়েও সংশ্লিষ্ট রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির সঙ্গে সোলার এনার্জি কর্পোরেশনের সমঝোতা করিয়ে দিতে ঘুষ দেয় আদানি গোষ্ঠী। অভিযোগ, কোথায় কী ভাবে এবং কাকে ঘুষ দেওয়া হবে এই সংক্রান্ত বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন আদানি নিজেও। বিনিয়োগকারীদের কাছে ঘুষের বিষয়টি গোপন করে বাজারে বন্ড ছেড়ে কী ভাবে টাকা তোলা যাবে, সেই বিষয়েও আলোচনা হত।

অভিযোগপত্রে আদানির সঙ্গে জগনের বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত দেওয়া হতেই মুখ খুলেছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস। তাদের তরফে বলা হয়েছে, কৃষকদের সুরাহা দিতে ১০ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দরপত্র ডেকেছিল অন্ধ্রের তৎকালীন সরকার। ২৪টি সংস্থা সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য আগ্রহও দেখিয়েছিল। কিন্তু নানা আইনি কারণে সেই প্রকল্প আর দিনের আলো দেখেনি। জগনের দলের দাবি মোতাবেক, এমতাবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সোলার এনার্জি কর্পোরেশন অন্ধ্র সরকারকে ২.৪৯ টাকায় এক কিলোওয়াট-আওয়ার বিদ্যুৎ দেওয়ার শর্তে মোট সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। তার পরেই ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বিষয়ে অন্ধ্র সরকার ছাড়পত্র দেয় বলে দাবি করেছে জগনের দল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement