ইতিহাসবিদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবির জায়গায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। ইতিহাসবিদ সুমিত সরকারের ছবির জায়গায় ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ডালাসের স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক সুমিত সরকারের ছবি।
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ই-পাঠশালায় সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ নিয়ে আলোচনা। ইউটিউবে প্রায় ২৬ মিনিটের আলোচনায় যাঁরা সাবঅল্টার্ন স্টাডিজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন, নাম, ছবি-সহ তাঁদের কারও কারও কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর সেখানেই গোল!
ইতিহাসবিদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবির জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি। আবার ইতিহাসবিদ সুমিত সরকারের ছবির জায়গায় বসেছে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ডালাসের স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের শিক্ষক সুমিত সরকারের ছবি। আলোচনায় তথ্যগত ভুলের অভিযোগও উঠেছে।
২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে চালু হয় ই-পাঠশালা। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সব স্তরের পড়ুয়াদের বৈদ্যুতিন উপায়ে ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ বা পঠনীয় বিষয় জোগান দেওয়ার লক্ষ্যেই এই ই-পাঠশালার কাজ শুরু হয়েছিল। অডিয়ো, ভিডিয়ো মাধ্যমেও সেগুলো পাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। গত বছর জুনে নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা নিয়ে ইউটিউবে আপলোড করা হয় একটি ভিডিয়ো। তাতেই দেখা যাচ্ছে এমন ছবি-বিভ্রান্তি। এত দিনেও সেই সব ভুল সংশোধন করা হয়নি! এই আলোচনাতেই উল্লেখ রয়েছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের লরেন্স এ কিম্পটন ডিসটিংগুইশড সার্ভিস প্রফেসর দীপেশ চক্রবর্তীর নাম। বুধবার দীপেশবাবু জানান, আলোচনাটি খুবই সরলীকৃত। এমন ইংরেজি শব্দ চয়ন করা হয়েছে, যাতে সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ নিয়ে আলোচনায় অর্থের পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। ভিডিয়োয় তুরাজ আতাবাকির উল্লেখ রয়েছে। দীপেশবাবুর দাবি, সাবঅল্টার্ন স্টাডিজ নিয়ে তুরাজের কোনও কাজই নেই। অথচ নেই গৌতম ভদ্রের নাম। পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কেও কোনও আলোচনা নেই। উপরন্তু ইতিহাসবিদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ছবির জায়গায় রয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। সুমিত সরকারের ছবির জায়গায় হাজির অন্য সুমিত সরকার। ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, এই কাজে সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাব রয়েছে,’’ বলেন দীপেশবাবু।
আরও পড়ুন: রোজ নাম বদলাচ্ছে ওরা, বাংলা নিয়ে চুপ কেন, তোপ মমতার
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ছবির ভুল সংশোধন করা হবে। এ বিষয়ে যে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, তা-ও মেনে নিয়েছেন তিনি। তবে এত দিনেও সংশোধন হয়নি কেন, সেই প্রশ্ন রয়েই গেল বলে শিক্ষা শিবিরের অভিমত।
আরও পড়ুন: নেহরুকে তুলে ধরে জবাব মোদীকে
এ ঘটনা লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু। তাঁর বক্তব্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে এ কাজ অনভিপ্রেত। অভিজিৎবাবুর মতে, এই গুগ্ল যুগে সব কিছুই সহজে মেলে। বেশি কিছু পরিশ্রম কেউই করতে চান না। শ্লেষের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্লাস্টিক সার্জারির কথা পুরাণে ছিল, এমন প্রচার এখন চলছে। পুরাণে বিমান চালানোর উল্লেখ ছিল বলেও অনেকের দাবি। অতএব এমন কাণ্ড যে ঘটবে, তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে!’’