National News

ঘরে ডেকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিতে জানান অভিযোগকারিণী

প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এমন এক বিস্ফোরক চিঠি পৌঁছনোর খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে আদালত। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে এবং সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ২২:৩৫
Share:

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে রাম রহিমের কুকীর্তাঁতির কথা জানান অভিযোগকারিণী। ছবি: এএফপি।

ডেরা সচ্চা সৌদা থেকে একটা চিঠি পৌঁছেছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর দফতরে। এক সাধ্বী (সন্ন্যাসিনী) চিঠিটা লিখেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ডেরা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহ নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেছেন। সাধ্বী আরও জানিয়েছিলেন, ডেরা সচ্চা সৌদার অন্য সাধ্বীদেরও একই ভাবে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়ে ধর্ষণ করে থাকেন বাবা রাম রহিম।

Advertisement

চিঠিতে নিজের নাম লেখেননি তিনি। কিন্তু তা বলে সে চিঠিকে উড়ো চিঠি বলে উড়িয়েও দেননি প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এমন এক বিস্ফোরক চিঠি পৌঁছনোর খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসে আদালত। পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে এবং সিবিআই-কে তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেটা ২০০২ সাল।

Advertisement

বাবা রাম রহিমের রাজনৈতিক প্রভাবও নেহাত কম নয়। তাই ২০০২ সালে যে মামলার তদন্তের ভার পেয়েছিল সিবিআই, সেই মামলার চার্জশিট জমা দিতে পাঁচ বছর লেগে যায়। ২০০৭ সালে জমা পড়ে চার্জশিট। তার পরেও নানা ভাবে মামলাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। ২০০২ সালের মামলা ২০১৭ সাল পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বাবা রাম রহিম দোষী সাব্যস্তই হলেন।

আরও পড়ুন

ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত রাম রহিম, সাজা ঘোষণা সোমবার

রাম রহিমের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে নেমে সিবিআই ডেরা সচ্চা সৌদার ১৮ জন সন্ন্যাসিনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। ১৬ জন মুখ খোলেননি। কিন্তু ২ জন বিশদে জানিয়েছিলেন যৌন নির্যাতনের কথা। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর টেবিলে পৌঁছনো চিঠিটার বয়ানের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল, তাঁদের বয়ান। তার পরই গড়গড় করে এগিয়েছিল চার্জশিট তৈরির কাজ।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে চিঠি গিয়েছিল, তাতে ঠিক কী লেখা ছিল? অভিযোগকারিণী তাতে লিখেছিলেন, এক রাতে বাবা রাম রহিম তাঁকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি রাম রহিমের ঘরে ঢুকতেই ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। রাম রহিম সেই সময় পর্নোগ্রাফি দেখছিলেন এবং তাঁর হাতে রিভলভার ছিল বলে অভিযোগকারিণীর দাবি। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে অভিযোগকারিণী আরও জানান, সে রাতে রাম রহিম তাঁকে ধর্ষণ করেন এবং তার পর থেকে টানা তিন বছর তাঁকে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। শুধু তাঁকে নয়, ডেরা সচ্চা সওদার অন্য সন্ন্যাসীনিদেরও রাম রহিম ধর্ষণ করেন বলে চিঠিতে জানিয়েছিলেন অভিযোগকারিণী।

আরও পড়ুন

বর্ণময় এবং বিতর্কিত, কে এই রাম রহিম

মামলা চলতে চলতেই দুটো খুন রাম রহিমের প্রতি সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। ডেরার যে ম্যানেজার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পৌঁছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে শোনা যায়, সেই ম্যানেজার খুন হয়ে যান। ডেরা সচ্চা সওদার নানা দুর্নীতি এবং অপকর্ম নিয়ে যে সাংবাদিক লেখালেখি করছিলেন, সেই রামচন্দ্র ছত্রপতিও খুন হয়ে যান।

অবশেষে সত্যেরই জয় হল বলে মনে করছেন অভিযোগকারিণীরা। যে সময়ে ওই অভিযোগকারিণী ধর্ষণ করেছিলেন, সে সময়ে অভিযোগকারিণী নাবালিকা ছিলেন। অতএব, বাবা রাম রহিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন। আদালত আগামী সোমবার সাজা ঘোষণা করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন