বিজয়ন-মমতার ধাক্কা সামলাতে সক্রিয় সিপিএম

শেষ পর্যন্ত বিজয়নের পদক্ষেপজনিত ‘ক্ষতি’ সামাল দিতে বাংলা ও ত্রিপুরায় ‘গণতন্ত্রের হত্যা’র বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে কর্মসূচি নিচ্ছে সিপিএম। সেই সঙ্গেই অন্যান্য দলের নেতৃত্বকে তারা জানাবে, গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও ফারাক নেই!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০৪:২১
Share:

উপরাজ্যপালের বিরুদ্ধে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদে গত সপ্তাহেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন পিনারাই বিজয়ন। তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বাম-শাসিত কেরলের মুখ্যমন্ত্রীকে এক যাত্রায় যেতে দেখে প্রশ্ন তুলেছিলেন বঙ্গ সিপিএমের নেতারা। শেষ পর্যন্ত বিজয়নের পদক্ষেপজনিত ‘ক্ষতি’ সামাল দিতে বাংলা ও ত্রিপুরায় ‘গণতন্ত্রের হত্যা’র বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে কর্মসূচি নিচ্ছে সিপিএম। সেই সঙ্গেই অন্যান্য দলের নেতৃত্বকে তারা জানাবে, গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও ফারাক নেই!

Advertisement

অরবিন্দ কেজরীবালের ধর্নাকে সমর্থন জানিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটে যে শাসক দলের হাতে আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলল সিপিএম, সেই দলের নেত্রীর সঙ্গেই কেন পলিটব্যুরোর সদস্য বিজয়ন চলে গেলেন কেজরীবালের পাশে দাঁড়াতে— প্রশ্ন উঠেছিল তা নিয়েই। এমনকী, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো বর্ষীয়ান প্রাক্তন সাংসদও মনে করেছেন, দিল্লির বিষয়টি এমন কিছু গুরুতর ছিল না, যার জন্য বাংলার বাস্তবকে পাশে সরিয়ে রেখে সিপিএম পরিচালিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রীকে মমতার সঙ্গে যেতে হবে! এতে ‘গণতন্ত্র হত্যা’র বিরুদ্ধে সিপিমের প্রতিবাদ সম্পর্কে ভুল বার্তাই গিয়েছে বলে সোমনাথবাবুদের মত। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই একই প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। এ বার পলিটব্যুরোয় বাংলার সিপিএম নেতারা কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর ওই পদক্ষেপ নিয়ে তাঁদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন। এ সবের জেরেই রবিবার শেষ হওয়া তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলার পাশাপাশি ত্রিপুরায় গণতন্ত্রের বেহাল দশাও জাতীয় স্তরে নতুন উদ্যমে তুলে ধরা হবে।

এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বাংলার নেতারা জানিয়েছেন, কেমন ‘সন্ত্রাসের বাতাবরণে’ পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা অবশ্যই আছে। কিন্তু শাসক দলের গা-জোয়ারি না থাকলে ফল এত শোচনীয় হত না। আবার ত্রিপুরার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সে রাজ্যে বিজেপির তাণ্ডব অব্যাহত। সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, এই পরিস্থিতিতে বিজেপির অগণতান্ত্রিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেত্রী যদি জাতীয় বা আঞ্চলিক স্তরে সঙ্গী পেতে থাকেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে সিপিএমের অভিযোগ জোলো হয়ে যাবে। তাই বাংলা ও ত্রিপুরাকে পাশাপাশি রেখে তৃণমূল-বিজেপিকে এক বন্ধনীতে এনে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত।

Advertisement

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘দিল্লিতে ধর্না, আন্দোলন তো হবেই। পাশাপাশি, অন্যান্য দলের নেতৃত্বকেও আমরা জানাব বিজেপি এবং তৃণমূল কী ভাবে নিজের নিজের জায়গায় গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করছে।’’ দুই রাজ্যের চিত্রকে সামনে রাখার পাশাপাশি তৃণমূল-বিজেপির ‘প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা’কেও নিশানা করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। বাংলার রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন দেখাতে চাইছেন, ‘‘বিজেপির মতো তৃণমূলও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করছে। কাশ্মীরের জনতার বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদী যে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন, এটা কি তার প্রতি সহমর্মিতা? লোকসভা ভোটের আগে মেরুকরণ তীব্রতর করতে ওঁরা একসঙ্গে কাজ করছেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন